এনুমারেশন ফর্মে জালিয়াতি? অন্যের বাবাকে ‘ঠাকুরদা’ বানিয়ে বিপাকে বিজেপি নেতা

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২০:৫২: দলবদল করেও বিতর্ক পিছু ছাড়ল না। বরং তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেই বড়সড় জালিয়াতির অভিযোগ উঠল শিলিগুড়ির মাটিগাড়া-২ ব্লকের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি তথা বর্তমান বিজেপি নেতা খগেশ্বর রায়ের (Khageshwar Roy) বিরুদ্ধে। এসআইআর (SIR)-এর জন্য প্রয়োজনীয় এনুমারেশন ফর্মে (enumeration form) এক প্রতিবেশীর বাবাকে নিজের ‘ঠাকুরদা’ হিসেবে পরিচয় দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। খোদ ‘ঠাকুরদা’-র পরিবার এই আত্মীয়তার দাবি অস্বীকার করায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
মাটিগাড়া-২ ব্লকে দীর্ঘ সময় তৃণমূলের ব্লক সভাপতির দায়িত্ব সামলানো খগেশ্বর রায় গত ১৩ নভেম্বর আচমকাই বিজেপিতে (BJP) যোগ দেন। কিন্তু দলবদলের কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁর বিরুদ্ধে উঠল তথ্য ভাঁড়ানোর অভিযোগ। স্থানীয় সূত্রে খবর, মাটিগাড়ার পাথরঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের বানিয়াখারিতে খগেশ্বরের বাড়ি। অভিযোগ, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তাঁর নাম নেই। এই আইনি জটিলতা কাটাতে এনুমারেশন ফর্মে তিনি প্রতিবেশী তারকবন্ধু রায়কে নিজের ঠাকুরদা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ঘটনাটি জানাজানি হতেই তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারকবন্ধু রায়ের ছেলে নরেশ রায়। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘‘খগেশ্বর রায়ের সঙ্গে আমাদের কোনও রক্তের সম্পর্ক নেই। আমার বাবার একমাত্র সন্তান আমি। খগেশ্বরদের সঙ্গে আমাদের পারিবারিক বন্ধুত্ব ছিল মাত্র। নিজের স্বার্থে তিনি ভুল তথ্য দিয়েছেন। আমরা চাইব, বিষয়টি তিনি যেন চটজলদি মিটিয়ে নেন।’’
সবচেয়ে বিস্ময়কর তথ্য উঠে এসেছে ভোটার কার্ডের (voter card) বয়সের হিসাবে। সরকারি নথি অনুযায়ী, খগেশ্বর রায়ের বর্তমান বয়স ৫৬ বছর। অথচ তিনি যাঁকে ঠাকুরদা দাবি করেছেন, সেই তারকবন্ধু রায়ের বয়স নথিতে মাত্র ৪৫ বছর! অর্থাৎ নাতির চেয়ে ঠাকুরদা বয়সে ১১ বছরের ছোট। এছাড়াও, খগেশ্বর যে এপিক নম্বরটি (epic number) ব্যবহার করেছেন, তা নরেশ রায়ের বাবা তারকবন্ধুর এপিক নম্বরের সঙ্গে হুবহু মিলে যাচ্ছে।
যদিও নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন খগেশ্বর। তাঁর সাফাই, ‘‘একই নামে একাধিক ব্যক্তি থাকতেই পারেন। অনলাইনে পাওয়া এপিক নম্বরের সঙ্গে ওই তারকবন্ধুর এপিক নম্বরের মিল নেই। পুরো বিষয়টি নির্বাচন কমিশন খতিয়ে দেখবে।’’
স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে তৃণমূল-বিজেপি রাজনৈতিক তরজা। তৃণমূলের পাথরঘাটা অঞ্চল সভাপতি ভূপেন্দ্রনাথ সিংহ কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘অন্যের বাবাকে ঠাকুরদা সাজিয়ে গণনাপত্র জমা দেওয়া জালিয়াতি। এই ধরণের অনৈতিক কাজ করবেন বলেই হয়তো উনি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছেন। আমরা বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের নজরে আনব।’’ অন্যদিকে, বিজেপিতে যোগ দেওয়া এই নেতার বিতর্ক প্রসঙ্গে দলের স্থানীয় নেতৃত্বের বক্তব্য, বিতর্ক থাকলে তা কমিশনই পরিষ্কার করবে।