‘মুক্ত ফিলিস্তিন’-এর ডাক দিচ্ছে কলকাতার এই পুজো

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১২.৪৬: বেহালার এক দুর্গা পুজোয় মা দুর্গার আগমনী বার্তা এবার ধ্বনিত হচ্ছে ফিলিস্তিনের আকাশে। কলকাতায় ধ্বনিত হচ্ছে ফিলিস্তিনের মুক্তির ডাক। বেহালা ফ্রেন্ডস ক্লাবের দুর্গোৎসবের প্রতিপাদ্য হয়ে উঠেছে গাজায় চলমান বিধ্বংসী রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও দুর্ভিক্ষ। সর্বজনীন এই পুজোমণ্ডপে শিল্পের ভাষায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ এই মানবিক সংকটকে। স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিতে সাজানো হয়েছে প্যান্ডেলের প্রতিটি কোণ।
দর্শনার্থীদের স্বাগত জানাচ্ছে গাজাবাসী ফিলিস্তিনি কবি নামা হাসানের কবিতা ‘Face to Face’। “Genocide” শব্দটি লেখা একটি চিত্রপটের পাশেই স্থান পেয়েছে এই কবিতাটি। এর ঠিক বিপরীত দেয়ালে লেখা “ফিলিস্তিন মুক্তি পাক” দাবিটি, যা নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে তীব্র বিতর্ক। এই গণহত্যা ও মুক্তির দাবির মাঝখানে স্থাপন করা হয়েছে একটি ভেন্ডিং মেশিন, যেখান থেকে ক্যানড ড্রিঙ্কের বদলে বের হচ্ছে অস্ত্র।
পুরো প্যান্ডেল জুড়ে বাজছে ফিলিস্তিনি নাট্যকার রিদা গাজালেহর কণ্ঠ, যা বলছে দুর্ভিক্ষপীড়িত ফিলিস্তিনিদের মর্মান্তিক বাস্তবতার কথা। দর্শনার্থীরা একটি পাঁজরের হাড়ের মতো কাঠামোর দিয়ে প্রবেশ করে এমন এক জায়গায় পৌঁছন, যেখানে চালের বস্তা গাদা করে রাখা হয়েছে। যা দেখতে একেবারে ১৯৪৩ সালের বাংলার দুর্ভিক্ষের ছবির মতো। দেয়ালজুড়ে টাঙানো আছে চিত্তপ্রসাদ ও জয়নুল আবেদিনের সেই সব স্ক্র্যাচ চিত্রকর্ম, যা ফুটিয়ে তুলেছিল খাদ্য আটকে রাখার কারণে সৃষ্ট ভয়াবহ ক্ষুধার ছবি।
এবছর এই পুজোমণ্ডপে দেবী দুর্গা ও তার সন্তানদের রূপে পরিবর্তন আনা হয়েছে। তাঁদের সমস্ত জাঁকজমক ও জৌলুস মুছে দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সাধারণ ও রুক্ষ রূপ। যেন এই দুর্ভিক্ষ দেবীকে পর্যন্ত স্পর্শ করেছে। সংগঠকদের দাবি, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক নীতির কারণে সৃষ্ট ১৯৪৩ সালের বাংলার দুর্ভিক্ষ ও গাজায় ইচ্ছাকৃতভাবে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষের মধ্যে রয়েছে উল্লেখযোগ্য মিল। তাই এই শিল্পীসত্তার মধ্য দিয়ে তারা ফিলিস্তিনি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এবং বিশ্ববিবেককে জাগ্রত করার আহ্বান জানাচ্ছেন।