সুদূর অ্যালাবামা থেকে শান্তিপুর- বাংলার শতাব্দী প্রাচীন শিল্পের খোঁজে মার্কিন গবেষকেরা

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২০:২৬: বাংলার তাঁতশিল্পের খ্যাতি যে কেবল দেশের মাটিতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা সাত সমুদ্র পাড়েও সমান সমাদৃত, তা আবারও প্রমাণিত হলো। শান্তিপুরের বিখ্যাত তাঁতশিল্প (Shantipur Handloom Industry) এবং ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের টানে সুদূর আমেরিকার অ্যালাবামা থেকে ছুটে এলেন এক বিশেষ গবেষক দল। এই দলে ছিলেন কলকাতার ভূমিপুত্র তথা বর্তমানে অ্যালাবামা প্রবাসী ড. সঞ্জয় সিংহ, তাঁর স্ত্রী এবং আরও তিনজন মার্কিন গবেষক। তাঁদের সঙ্গ দেন এক সংস্কৃত পণ্ডিতও।
জানা গেছে, গবেষক দলটি মূলত অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণে ভারতে এসেছিলেন। কিন্তু শান্তিপুরের সঙ্গে একটি বিশেষ ঐতিহাসিক যোগসূত্র এবং এখানকার তাঁতশিল্পের প্রতি গভীর আগ্রহ তাঁদের এই প্রাচীন জনপদে টেনে আনে। এই সফরের অন্যতম আকর্ষণ ছিল শান্তিপুর সাহিত্য পরিষদ গ্রন্থাগার।
সুদূর অ্যালাবামা এবং নদীয়ার (Nadia) শান্তিপুরের মধ্যে এক অদ্ভুত মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন হেলেন কেলার। হেলেন কেলারের জন্মস্থান অ্যালাবামা। বহু বছর আগে শান্তিপুর সাহিত্য পরিষদ হেলেন কেলারকে নিয়ে একটি বিশেষ গবেষণা ও প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল। সেই খবর কোনওভাবে পৌঁছেছিল অ্যালাবামার এই গবেষকদের কাছে। সেই সূত্র ধরেই তাঁরা শান্তিপুর সাহিত্য পরিষদ পরিদর্শনের আগ্রহ প্রকাশ করেন।
গবেষকদের সফরের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল শান্তিপুরের শতাব্দী প্রাচীন তাঁতশিল্পের ওপর গবেষণা। সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের তাঁতশিল্পীদের কাজ নিয়ে গবেষণা করা এই দলটির বিশেষ আগ্রহ ছিল শান্তিপুরের হাতে বোনা শাড়ির ওপর। এখানকার তাঁতশিল্পের স্বকীয়তা, নকশার বৈচিত্র্য এবং ঐতিহ্যের খোঁজে তাঁরা শহরজুড়ে বিভিন্ন তাঁতশিল্পীদের বাড়ি ঘুরে দেখেন।
তাঁদের মূল অন্বেষণ ছিল- আজকের আধুনিকতার ভিড়ে শান্তিপুরে কি এমন কোনও বিরল বা লুপ্তপ্রায় শাড়ি তৈরি হয়, যা সম্পূর্ণ হাতে বোনা এবং যা প্রাচীন শিল্পরীতির সাক্ষ্য বহন করে? তাঁতশিল্পীদের নিপুণ কাজ দেখে অভিভূত হন বিদেশী অতিথিরা।
তাঁতবাড়ি পরিদর্শনের পর গবেষক দলটি পৌঁছন শান্তিপুর সাহিত্য পরিষদে (Shantipur Sahitya Parishad)। সেখানে সংরক্ষিত দুষ্প্রাপ্য সামগ্রী দেখে তাঁরা বিস্ময় প্রকাশ করেন। গ্রন্থাগারে সযত্নে রক্ষিত আছে ১৮৬৪ সালের পুরনো পত্রিকা, ১৭২ বছরের প্রাচীন নানা ঐতিহাসিক দলিল এবং বহু দুষ্প্রাপ্য পুঁথি। তবে তাঁদের সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করে সেখানে সংরক্ষিত শান্তিপুরের পুরনো আমলের কিছু হাতে বোনা ঐতিহ্যবাহী শাড়ি। ইতিহাসের এই অমূল্য সম্পদ এবং শান্তিপুরের কৃষ্টির গভীরতা দেখে আবেগপ্লুত হয়ে পড়েন ড. সিংহ ও তাঁর সহগবেষকরা।