শস্যবিমার পুরো প্রিমিয়ামই দেবে রাজ্য
এই প্রকল্পে বছরে দু’দফায় পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক অনুদান মেলে। তাছাড়া নথিভুক্ত কৃষক মারা গেলে তাঁর পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।

রাজ্য সরকার প্রধান ফসলগুলির জন্য কৃষিবিমার ব্যবস্থা করেছে। কৃষকদের এরজন্য প্রিমিয়াম দিতে হবে না, পুরোটাই দেবে রাজ্য সরকার। বাংলা শস্যবিমা সংক্রান্ত গাইডলাইনে এই বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। ব্যাঙ্ক ও গ্রামীণ কৃষি সমবায় সংস্থা থেকে চাষের জন্য ঋণ নিলে বাধ্যতামূলকভাবে বিমা করতে হয়। এতদিন ঋণ নিলে এই বিমা করিয়ে নিত ব্যাঙ্ক ও সমবায় সংস্থাগুলি। ঋণের মধ্যেই বিমার প্রিমিয়ামের খরচ ধরা থাকত। সেক্ষেত্রে কৃষককেই প্রিমিয়ামের খরচ মেটাতে হতো। কৃষি দপ্তরের গাইডলাইনে বলা হয়েছে, সরকারি উদ্যোগে অধিকাংশেরই কৃষিবিমা করা হয়েছে। তাই ব্যাঙ্ক ও কৃষি সমবায় সংস্থাগুলির আর আলাদা করে কৃষকদের থেকে বিমা করানোর প্রয়োজন নেই। যদি দেখা যায়, কোনও চাষি গত বছর বাংলা শস্যবিমা প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না, অথচ এবার ঋণ নিতে এসেছেন, তাঁদের নামের তালিকা কৃষি দপ্তরের স্থানীয় আধিকারিকদের কাছে পাঠিয়ে দিতে হবে। নির্দিষ্ট প্রোফর্মায় বিমা করানোর নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সেই তালিকা জমা দিতে বলা হয়েছে। ওই তালিকার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট চাষিকে বাংলা শস্যবিমার অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
এবার শস্যবিমা প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য চাষিদের আর আলাদা করে আবেদন করতে হয়নি। গত বছর শস্যবিমার প্রকল্পের আওতায় থাকলে এবং কৃষকবন্ধু প্রকল্পে নথিভুক্ত থাকা সব চাষির জন্য বিমা করে দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৪৭ লক্ষ চাষি এখন কৃষকবন্ধু প্রকল্পে নথিভুক্ত রয়েছেন। এই প্রকল্পে বছরে দু’দফায় পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক অনুদান মেলে। তাছাড়া নথিভুক্ত কৃষক মারা গেলে তাঁর পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।
এই ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে স্বাভাবিকভাবে এবার খরিফ ফসলে শস্যবিমা করানো চাষির সংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছে। গতবার এই সংখ্যা ছিল ২৬ লক্ষ। এবার তা বেড়ে এখনই ৫৮ লক্ষ হয়েছে। এই সংখ্যা আরও বাড়বে। রাজ্য সরকারের কথামতো কৃষিবিমা পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাটি আমন ধানের উপর বিমা করানোর সময়সীমা ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে। এখনও যে কৃষকরা বিমার আওতায় আসেননি, তাঁরা এর সুযোগ নিতে পারবেন। যে কোনও চাষি কৃষি দপ্তরের বিমা সংক্রান্ত পোর্টালে গিয়ে নিজের ভোটার কার্ডের নম্বর দিয়ে জেনে নিতে পারবেন তাঁর বিমা হয়েছে কি না। বিমা না হয়ে থাকলে কৃষি দপ্তরের ব্লক অফিসে যোগাযোগ করতে হবে। সরকারি হিসেবে রাজ্যে কৃষক পরিবারের সংখ্যা এখন প্রায় ৭২ লক্ষ। এর মধ্যে জমির মালিক ছাড়াও ভাগচাষিরা আছেন। সরকার চাইছে সবাই যেন বিনাখরচে শস্যবিমা করিয়ে নেন। কোনও কারণে ফসলের ক্ষতি হলে বিমা কোম্পানি যাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা মিটিয়ে দেয়, তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোন ধরনের ক্ষতিপূরণ কতদিনের মধ্যে দিতে হবে, তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। বিমা সংস্থা তা না দিলে তাদের আর্থিক খেসারত দিতে হবে, সেই ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।