শীতকালে বাহারে ভরে উঠুক আপনার বাগান 

সকাল-বিকেল খেয়াল রাখবেন, মাটিতে হাত দিলে যেন ভিজে ভাব থাকে, এমন ভাবে জল দেবেন। মাঝে মাঝে জল স্প্রে করে দিলেও ভাল কুঁড়ি আসে।

December 3, 2020 | 3 min read
Published by: Drishti Bhongi

বাগানে একটা স্থলপদ্ম গাছই শোভা বাড়িয়ে দেয় প্রায় দ্বিগুণ। দীর্ঘদেহী সে গাছে থোকা থোকা সাদা ফুল দিনান্তে গোলাপি বর্ণ ধারণ করে। পুজোর থালায়, গৃহসজ্জায়— পরতে পরতে সাজানো একগুচ্ছ পাপড়ির স্থলপদ্ম নিজগুণে ও রূপে গৃহস্থালির অঙ্গ হয়ে উঠেছে। 

বাড়িতে বাগান করার মতো জায়গা না থাকলেও টবে বা কম রোদ আসে এমন জায়গায় অনেকে এই গাছের হাইব্রিড ভার্সন লাগিয়ে থাকেন। সাদা, গোলাপি, বেগুনি, কমলা বিভিন্ন রঙের সিঙ্গল পেটালের স্থলপদ্ম করা যায় স্বল্প পরিসরে।

মালভেসি ফ্যামিলির এই গাছ কটন রোজ় (Cotton Rose) বা কনফেডারেট রোজ় নামে পরিচিত, ফুলের পসরায়। জবার সঙ্গে এই গাছের প্রকৃতি ও পরিচর্যায় অনেক মিল। অল্প যত্নেই স্থলপদ্ম গাছ ঝলমলিয়ে উঠতে পারে আপনার বাগানে। 

যদি কম জায়গার মধ্যে (১২ ইঞ্চির টবে) ছোট আকারে (কমবেশি পাঁচ ফুট) হাইব্রিড গাছ করতে চান, তা হলে শুধু পূ্র্ব দিকের রোদ সকাল ১১টা পর্যন্ত পেলেই চলবে। হালকা ছায়া পেলে এই গাছ ভাল ফুল দিতে পারে। আবার পূর্ণ দৈর্ঘ্যের বড় স্থলপদ্ম গাছ পুরোপুরি সূর্যালোকে থাকলেও চলে, কারণ এটি মূলত গ্রীষ্মপ্রধান জায়গার গাছ। ছোট ডাল থেকে স্থলপদ্ম গাছ করতে পারেন। আগে জেনে নিন উপযুক্ত সয়েল বেড কী ভাবে তৈরি করবেন। গাছের মাটি ঠিক তৈরি করলে ফুলও পাবেন ভাল।

জমি পোক্ত করা

যে কোনও গাছ লাগানোর আগেই উপযুক্ত জমি প্রস্তুত করা প্রয়োজন। স্থলপদ্ম গাছ লাগানোর আগে যে মাটি প্রস্তুত করতে হবে, তা যেন অবশ্যই পোরাস সয়েল হয়। অর্থাৎ মাটি ছিদ্রযুক্ত হবে, যাতে জল না দাঁড়ায়। আবার মাটি যাতে কখনও পুরোপুরি শুকনো না হয়ে যায়, সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। 

মালভেসি ফ্যামিলির যে কোনও গাছের বেড প্রস্তুত করার ক্ষেত্রেই এটি মাথায় রাখা প্রয়োজন (যেমন জবা গাছ)। গার্ডেন সয়েলের সঙ্গে ভার্মিকম্পোস্ট অথবা এক বছরের পচা গোবর সার, বালি (সিলভার স্যান্ড) এবং কোকোপিট ১:১:১:১ অনুপাতে মেশাতে হবে। এর মধ্যে এক চামচ নিম খোল ও আধ চামচ হাড়ের গুঁড়ো দিলে ফাঙ্গাল ইনফেকশন থেকে গাছকে রক্ষা করা যায়।

ফুল খেলার দিন

স্থলপদ্ম সারা বছরের গাছ। বসন্তের সময় থেকে শীতের গোড়া পর্যন্ত ফুল দেয়। শীতে ফুল হলেও নতুন কুঁড়ি সে ভাবে আসে না, কারণ তা ডরম্যান্ট সিজ়ন। এ সময়ে গাছকে বেশি খাবার দিতে নেই। নভেম্বরে বা ফেব্রুয়ারিতে একবার হার্ড প্রুনিং করে ফাঙ্গিসাইড দিয়ে ছায়ায় রেখে দিলে ছোট গাছ ভাল থাকবে। বড় স্থলপদ্ম নিজেই পাতা ঝরিয়ে দেয় শীতে, ফের সেজে ওঠে বসন্তে।

ফুলের যত্ন

ভাল প্রকৃতির ও সংখ্যায় বেশি ফুল চাইলে ধৈর্য ধরতে হবে। গাছ পরিণত হয়ে ওঠার আগেই কুঁড়ি এলে তা কেটে দিতে হবে। না হলে পরবর্তী কালে গাছের বৃদ্ধি ও ফুল দেওয়ার ক্ষমতা কমে আসবে। নিয়মিত প্রুনিং করতে হবে। ধারালো ছুরি বা কাঁচি দিয়ে ডগাগুলো ছেঁটে দিতে হবে নিয়ম করে। গাছের শাখার সংখ্যা যত বেশি হবে, ফুলের সংখ্যাও তত বাড়বে। লম্বা না হয়ে গুচ্ছাকারে গাছের বৃদ্ধি হবে, আর দেখাবেও ভাল।

একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের স্থলপদ্ম গাছ মোটামুটি বছর তিনেকের মধ্যে পরিণত হয়ে যায়। তার পরে কুঁড়ি এলে গাছের খাবারের জোগান দিতে হবে। জৈব সারের মধ্যে পটাশ বা ফসফেট বেছে নিতে পারেন। ভাল ফুল ফোটাতে সাহায্য করে। বাড়িতে কলার খোসা জলে ভিজিয়ে রেখে দিন। তিন দিন পরে ওই জলের ১০০ মিলিলিটার নিয়ে এক লিটার জলে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় দিতে হবে।

গাছের খাবার

এক চামচ পটাশ, এক চামচ খোল ও আধ চামচ ডিএপি মিশিয়ে ১৫ দিন অন্তর দিলে গাছে ভাল ফুল আসবে। এর সঙ্গে একই সময়ের ব্যবধানে ২০:২০:২০ অনুপাতে এনপিকে (নাইট্রোজ়েন:ফসফরাস:পটাশিয়াম) আর হাড়ের গুঁড়ো— এই মিশ্রণও দিয়ে যেতে হবে।

মিলিবাগ জাতীয় পোকা অনেক সময়ে গাছে বাসা বাঁধে। ছোট শ্যাম্পুর স্যাশের অর্ধেকটা এক লিটার উষ্ণ গরম জলে মিশিয়ে গাছে স্প্রে করলে পোকা চলে যায়। এই গাছ ভিজে মাটি পছন্দ করে। আবার অতিরিক্ত ভিজে কিংবা শুকনো হয়ে গেলে কুঁড়ি এসেও ঝরে যেতে পারে। সকাল-বিকেল খেয়াল রাখবেন, মাটিতে হাত দিলে যেন ভিজে ভাব থাকে, এমন ভাবে জল দেবেন। মাঝে মাঝে জল স্প্রে করে দিলেও ভাল কুঁড়ি আসে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen