Global Hunger Index 2025: এগিয়ে বাংলাদেশ-নেপাল-শ্রীলঙ্কা, ভয়াবহ পরিস্থিতি মোদীর ভারতের!

November 7, 2025 | 2 min read
Published by: Saikat

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৬:৩০: ২০২৫ সালের বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের তালিকা (Global Hunger Index 2025) প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে বিশ্বের ক্ষুধা পরিস্থিতি নিয়ে ১২৩টি দেশের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই তালিকায় ভারতের অবস্থান ১০২ নম্বরে, যা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। ভারতের স্কোর ২৫.৮, যা দেশটিকে ‘গুরুতর’ বা ‘সিরিয়াস’ (Serious) শ্রেণিতে ফেলা হয়েছে।

এই সূচক তৈরি হয়েছে চারটি গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ডের ভিত্তিতে, প্রথমত, জনসংখ্যার কত শতাংশ পর্যাপ্ত ক্যালোরি পাচ্ছেন না। দ্বিতীয়ত, পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের মৃত্যুহার। তৃতীয়ত, শিশুদের উচ্চতা বয়সের তুলনায় কতটা কম (স্টান্টিং) এবং চতুর্থত, শিশুদের ওজন উচ্চতার তুলনায় কতটা কম (ওয়েস্টিং)। এই চারটি সূচকই ভারতের ক্ষেত্রে উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে।

যদিও ভারত বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ খাদ্য উৎপাদক দেশ, তবুও দারিদ্র্য, শিশু অপুষ্টি, খাদ্য বণ্টনের বৈষম্য এবং দুর্বল স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার কারণে ক্ষুধা একটি বড় সামাজিক সংকট হয়ে রয়ে গিয়েছে। শিশুদের মধ্যে স্টান্টিং ও ওয়েস্টিং-এর হার, দুর্বল মাতৃস্বাস্থ্য, ও পুষ্টির বৈচিত্র্যের অভাব এখনও বড় উদ্বেগের কারণ। দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও আঞ্চলিক বৈষম্য সমস্যাকে আরও গভীর করছে।

ভারতের চেয়ে অনেক ভাল অবস্থান প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কার। তারা যথাক্রমে ‘মাঝারি’ বা ‘কম’ ক্ষুধার স্তরে রয়েছে, যা প্রমাণ করে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি ব্যবস্থায় তারা তুলনামূলকভাবে সফল। ভারতের ক্ষেত্রে খাদ্য উৎপাদনে অগ্রগতি থাকলেও, দারিদ্র্য, অপুষ্টি এবং স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার দুর্বলতা ক্ষুধা সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে। দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও আঞ্চলিক বৈষম্য সমস্যাকে আরও গভীর করছে।

বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের ২০২৫ সালের তালিকা অনুযায়ী, বাংলাদেশের স্কোর ১৯.২, অবস্থান ৮৫ নম্বরে, এই দেশটিকে ‘মাঝারি’ (Moderate) শ্রেণিতে ফেলা হয়েছে। নেপালের স্কোর ১৪.৮, অবস্থান ৭২ নম্বরে, ‘মাঝারি’ (Moderate) শ্রেণিতে রাখা হয়েছে এই দেশটিকে। এছাড়াও ভারেতের প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কার স্কোর ১১.২, অবস্থান ৬১ নম্বরে, ‘কম’ (Low) ক্ষুধার শ্রেণিতে রাখা হয়েছে এই দেশটিকে।

সর্বশেষ বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের ২০২৫ সালের তালিকা (Global Hunger Index 2025) অনুসারে, প্রযুক্তি ও কৃষিক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি সত্ত্বেও পৃথিবীর প্রায় প্রতি দশজনের মধ্যে একজন এখনও পর্যাপ্ত খাদ্য পাচ্ছেন না। প্রায় ৬৭৩ মিলিয়ন মানুষ দীর্ঘস্থায়ী ক্ষুধায় ভুগছেন। খাদ্য উৎপাদনে অগ্রগতি হলেও, খাদ্যের সমান বণ্টন এখনও বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দারিদ্র্য, যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন, অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং দুর্বল প্রশাসন- এই কয়েকটি প্রধান কারণ বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা বাড়াচ্ছে। আফ্রিকা ও এশিয়ার বহু দেশে এই সংকট আরও গভীর। সংঘাত, খরা এবং বাস্তুচ্যুতি-প্রবণ এলাকাগুলিতে মানুষ শুধু খাদ্য নয়, চাষাবাদ বা খাদ্য কেনার সামর্থ্যও হারাচ্ছেন।

Global Hunger Index 2025 অনুযায়ী, বেশ কয়েকটি দেশ “অত্যন্ত উদ্বেগজনক” ও “গুরুতর” ক্ষুধার্ত দেশের তালিকায় পড়েছে। এদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান, মাদাগাস্কার, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র (DRC) এবং হাইতি। এই দেশগুলিতে চলমান সংঘাত, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও রাজনৈতিক অস্থিরতা পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে।

সোমালিয়া দশকের পর দশক ধরে গৃহযুদ্ধ, খরা ও বাস্তুচ্যুতির শিকার। দুর্বল অবকাঠামো এবং বার বার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চাষবাস প্রায় অসম্ভব। তাই দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুধাপীড়িত অঞ্চলের একটি।

দক্ষিণ সুদানও একই সমস্যায় ভুগছে। বন্যা, হিংসা ও প্রশাসনিক ভাঙনের কারণে খাদ্য সরবরাহ চেইন ভেঙে পড়েছে। গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষ বাজার বা ত্রাণের নাগাল পাচ্ছেন না। দেশের গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স স্কোর ৩৭.৫, যা তাকে বিশ্বের শীর্ষ ক্ষুধাগ্রস্ত দেশগুলির একটিতে স্থান দিয়েছে।

ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো (DRC)-র অবস্থাও তেমনই। প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হলেও, সংঘাত ও দুর্বল পরিকাঠামো দেশের কৃষিকে ধ্বংস করেছে। চাষিরা নিরাপত্তার অভাবে জমি ছেড়ে পালাচ্ছেন, ফলে বিপুল জনগোষ্ঠী খাদ্য সংকটে ভুগছে।

হাইতির অবস্থা আরও শোচনীয়। দারিদ্র্য, ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় ও ভূমিকম্পে ফসল ও অবকাঠামো বারবার ধ্বংস হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক দুর্দশা দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে আরও বিপন্ন করে তুলেছে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen