এবার বিজেপি সঙ্গ ত্যাগের হুমকি জিএনএলএফের

ভোটের আগে কথায় কথায় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা চপার নিয়ে উত্তরবঙ্গে আসতেন। এখন পাহাড় নিয়ে কেউ কিছু বলছেন না। বিজেপির এই ভূমিকায় পাহাড়ে ক্ষোভ বাড়ছে।

June 16, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

পাহাড়েও বিজেপির পায়ের তলার মাটি আলগা হচ্ছে। পাহাড় সমস্যার স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান কী, তা ছ’মাসের মধ্য বিজেপিকে জানাতে হবে। তা না হলে পদ্ম শিবিরের সঙ্গ ত্যাগ করার হুমকি দিল জিএনএলএফ।

গত তিনটি লোকসভা নির্বাচনের মতো এবারের বিধানসভা নির্বাচনেও পাহাড় সমস্যার স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি (BJP)। জিএনএলএফের (GNLF) অন্যতম শীর্ষ নেতা মহেন্দ্র ছেত্রি এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, গত ডিসেম্বর মাস থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সহ বিজেপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়। প্রতিটি আলোচনাতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি পরাজিত হোক বা জয়ী হোক পাহাড় সমস্যার স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের জন্য দ্বিপাক্ষিক আলোচনা শুরু হবে। কিন্তু, ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে বিজেপির কোনও নেতার আর দেখা নেই। ভোটের আগে কথায় কথায় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা চপার নিয়ে উত্তরবঙ্গে আসতেন। এখন পাহাড় নিয়ে কেউ কিছু বলছেন না। বিজেপির এই ভূমিকায় পাহাড়ে ক্ষোভ বাড়ছে।

এতে জিএনএলএফ’কে পাহাড়ের মানুষের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই পাহাড়ে বিজেপির বিরুদ্ধে যে জনমত সংগঠিত হবে তা মেনে নিয়েছেন মহেন্দ্র। তিনি বলেন, পাহাড়ের মানুষের আবেগকে গুরুত্ব দিয়ে বিজেপির কাছে জানতে চাইব, কীভাবে পাহাড় সমস্যার স্থায়ী রাজনৈতিক সামাধান করতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। আমরা ছ’মাস দেখব, এ নিয়ে বিজেপি তার প্রতিশ্রুতি পূরণের ব্যাপারে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে কিনা। পদ্ম শিবির এভাবে নীরব থাকলে বিজেপির জোটসঙ্গী হয়ে থাকা যাবে না।

বিমল গুরুং বিজেপির সঙ্গ ছিন্ন করার পর পাহাড়ে বিজেপির প্রধান জোটসঙ্গী এখন জিএনএলএফ। তাদের সমর্থন থাকাতেই এবার বিধানসভা নির্বাচনে পাহাড়ের তিনটি আসনের দু’টিতে জিতেছে পদ্ম শিবির। সেই জায়গা থেকে জিএনএলএফ সরে গেলে পাহাড়ে বিজেপির কোনও অস্তিত্বই থাকবে না বলে ধারণা রাজনৈতিক মহলের।

বিমল গুরুংয়ের সুরেই বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতিভঙ্গের অভিযোগে সরব হওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে জিএনএলএফ নেতৃত্ব। মহেন্দ্র ছেত্রি আরও বলেন, অনেক আশ্বাস, প্রতিশ্রুতি শুনেছি। আর নয়। এবার বিজেপিকে কিছু করে দেখাতে হবে। আমাদের মূল দাবি ছিল গোর্খাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও ট্রাইবাল হিসেবে ঘোষণা করা। কাজেই এবার বিজেপিকে পাহাড় ইস্যুতে তার অবস্থান পরিষ্কার করে সেইমতো কাজ শুরু করতে হবে।

বিজেপির শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি ডাঃ বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, বিষয়টি আমাদের দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দেখছে। তাঁদের সঙ্গেই জিএনএলএফ নেতৃত্বের বৈঠক হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পরিস্থিতি বুঝে নিশ্চই পদক্ষেপ করবে।

প্রসঙ্গত,এবারের বিধানসভা নির্বাচনে দার্জিলিং ও কার্শিয়াংয়ে বিজেপি জিতেছে। কিন্তু, মোর্চার দুই গোষ্ঠীর ভোট যোগ করলে তা বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের থেকে অনেক বেশি। কালিম্পংয়ে বিনয়পন্থী মোর্চার প্রার্থী জিতেছে। দার্জিলিংয়ে বিজেপি পেয়েছে ৬৮ হাজার ৯০১টি ভোট। সেখানে মোর্চার দুই গোষ্ঠীর মোট ভোট ছিল ৮৫ হাজার ৮৫৩। কার্শিয়াংয়ে বিজেপি পেয়েছে ৭৩ হাজার ৪৭৫ ভোট। সেখানে মোর্চার দুই গোষ্ঠীর মোট ভোট ছিল ৮১ হাজার ৫৪। কালিম্পংয়ে বিনয়পন্থী মোর্চার প্রার্থী পান ৫৮ হাজার ২০৬টি ভোট, বিজেপি পায় ৫৪ হাজার ৩৩৬ ভোট। বিমলপন্থী মোর্চা প্রার্থী পেয়েছেন ৩১ হাজার ৮৫৬ ভোট। কাজেই জিএনএলএফ জোট ছেড়ে বেরিয়ে গেলে পাহাড়ে বিজেপির কোনও অস্তিত্ব থাকবে না বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen