শতবর্ষে গুরু দত্ত: ভারতীয় চলচ্চিত্রের মহাকাব্যিক নায়কের আখ্যান

নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি,১২:২৫: ভারতীয় চলচ্চিত্র তাবড় তারকাদের জন্ম দিয়েছে, কোনও কোনও তারকা হয়ে উঠেছেন মিথ, মহাকাব্যিক নায়ক। ১৯২৫ সালের ৯ জুলাই কর্ণাটকের এক চিত্রপুর সারস্বত ব্রাহ্মণ পরিবারে বসন্তকুমার শিবশংকর পাডুকোনের জন্ম হয়। পোস্টার আঁকিয়ে মামার মুখে সিনেমার গল্প শুনেই তাঁর মনে জন্ম হয়েছিল রূপকথার। পরবর্তীতে সেই রূপকথার মহাকাব্যিক নায়ক হয়ে ওঠেন গুরু দত্ত।
পাডুকোন পরিবার ১৯৩০ সালে কলকাতা চলে আসে। গুরু দত্ত ভর্তি হন কলকাতার হেয়ার স্কুলে। কলকাতাতেই থাকতেন তাঁর এক সম্পর্কিত মামা বিবি বেনেগাল। কমার্শিয়াল আর্টিস্ট, চিত্রকর বেনেগালের লেনিনসরণীর বাড়িতে প্রায় গুরু দত্ত চলে আসতেন তাঁদের পদ্মপুকুর রোডের বাড়ি থেকে। ভাগ্নেকে সিনেমা দেখার পাস জোগাড় করে দিতেন বেনেগাল। সিনেমার প্রতি আকর্ষণ তাঁর কৈশোর থেকেই ছিল। আলমোড়ায় উদয়শঙ্করের কাছে নাচ শিখেছেন কিছুদিন।
গুরুদত্ত পাড়ুকোন পরবর্তীকালে ছোট হয়ে হল গুরু দত্ত।
কলকাতায় লিভার ব্রাদার্সের কারখানায় টেলিফোন অপারেটরের চাকরিটা পেয়ে বাবা-মায়ের কাছে টেলিগ্রাম করেছিলেন বসন্তকুমার শিবশঙ্কর পাড়ুকোন। মাইনেও কম নয়। বেশিদিন চাকরির আরাম
সইল না! চাকরিটা ছেড়েই দিলেন। পাড়ি দিলেন বাবা-মায়ের কাছে মায়ানগরীতে। পুনের প্রভাত ফিল্ম স্টুডিওতে চাকরি জুটে গেল। প্রভাত ফিল্ম স্টুডিওতে তাঁর আলাপ হল দেব আনন্দ আর রেহমানের সঙ্গে। সেই বন্ধুত্ব শেষ জীবন অবধি অটুট ছিল। জ্ঞান মুখার্জি, অমিয় চক্রবর্তীর মতো তৎকালীন বিখ্যাত পরিচালকদের সহকারী হিসেবে কাজ করেন গুরু। অভিনয়ও করতে হয়েছে গুরু দত্তকে। অভিনীত ছবিগুলোর মধ্যে কাশ্যপ পরিচালিত ‘চাঁদ’ (১৯৪৪), বিশ্রাম বেদকারের ‘লাখরানী’ (১৯৪৫)। আদিনাথ ব্যানার্জীর ‘মোহন’ (১৯৪৭)-এ সহকারী পরিচালকের কাজ করেন।
এর মধ্যে দেব আনন্দ তৈরি করে ফেলেছেন নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা ‘নবকেতন’। নবকেতনের প্রথম ছবি ‘বাজি’ (১৯৫১) পরিচালনা করতে হবে গুরুকে। নায়ক দেব আনন্দ। ফিল্ম সুপারহিট। শুরু হল গুরু-যুগ।
বম্বে টকিজের ব্যানারে জ্ঞান মুখার্জির ‘সংগ্রাম’ (১৯৫০) ছবির সহকারী পরিচালনা করেন তিনি। জ্ঞান মুখার্জিকে গুরু মানতেন গুরু দত্ত। গুরু দত্ত তাঁর ‘পিয়াসা’ (১৯৫৭) জ্ঞান মুখার্জির স্মৃতির উদ্দেশে নিবেদন করেন। দর্শকদের মতে, এটিই তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ ছবি।