ঐতিহ্যের শহরে ধুঁকছে ঘোড়াগাড়ির ব্যবসা

মোটর সাইকেলে ‘জয় রাইড’ কিংবা দামি গাড়িতে ‘লং ড্রাইভ’, এইসবই লেটেস্ট ট্রেন্ড। শহরের রাজপথে ঘোড়ার খুরের শব্দ আজ প্রায় অতীত। কালো ধোঁয়া আর হর্নের আওয়াজ ছাপিয়ে গিয়েছে অবলা প্রাণীর গতিপ্রকৃতি। আর এই ট্রেন্ডে ‘পেটের ভাত’ হারাতে বসেছেন শহরের ঘোড়াগাড়ির মালিকরা। শীতের দুপুরে যাত্রীর অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে ভিক্টোরিয়ার সামনে বসে থাকেন শেখ শাহরুলরা।

February 25, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

মোটর সাইকেলে ‘জয় রাইড’ কিংবা দামি গাড়িতে ‘লং ড্রাইভ’, এইসবই লেটেস্ট ট্রেন্ড। শহরের রাজপথে ঘোড়ার খুরের শব্দ আজ প্রায় অতীত। কালো ধোঁয়া আর হর্নের আওয়াজ ছাপিয়ে গিয়েছে অবলা প্রাণীর গতিপ্রকৃতি। আর এই ট্রেন্ডে ‘পেটের ভাত’ হারাতে বসেছেন শহরের ঘোড়াগাড়ির মালিকরা। শীতের দুপুরে যাত্রীর অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে ভিক্টোরিয়ার সামনে বসে থাকেন শেখ শাহরুলরা।

তিনটি জুড়িগাড়ির মালিক শেখ শাহরুল। সংসারে অভাবের কারণে মাত্র ১২ বছর বয়সে তাঁকে হাতে তুলে নিতে হয় ‘চাবুক’। সেই থেকে রেড রোড চত্বরে ঘোড়াগাড়ি ছুটিয়ে আসছে তিনি। শাহরুলের মতে, ‘মানুষ বড্ড বেশি যন্ত্র নির্ভর হয়ে পড়েছে। গতির নেশায় শহরের ঐতিহ্যকে ভুলতে বসেছে আজকের প্রজন্ম।’ তাই ব্যবসা বাঁচাতে ঘোড়াগাড়িকে আধুনিক করে তুলতে হচ্ছে মালিকদের। পুরনো ধাঁচ ঝেড়ে ফেলে নয়া মডেলে গাড়ি তৈরি করেছেন অনেক ব্যবসায়ী। উদ্দেশ্য একটাই, পেটের ভাত জোগাড় করা।

অবশ্য যাত্রীসংখ্যা বাড়াতে বিশেষ পন্থা অবলম্বন করেছেন শাহরুল। প্রায় তিন লক্ষ টাকা খরচ করে তিনি তৈরি করিয়েছেন ‘বাহুবলী’। হিন্দি সিনেমার আদলে ঘোড়াগাড়িটি তৈরি। মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সাধারণ মানুষের আকর্ষণ বৃদ্ধির জন্যই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অনেক গাড়িতে আবার রয়েছে বিশেষ ‘সেলফি জোন’। এভাবেই জুড়িগাড়ির প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালাচ্ছেন শাহরুল সহ অন্যান্যরা।

ব্যবসার হাল খারাপ হওয়ায় ঘোড়া লালন-পালন করতেও রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন মালিকরা। তাঁরা জানিয়েছেন, প্রতিটি ঘোড়া দেখাশোনার জন্য দিনে হাজার দেড়েক টাকা খরচ হয়। খাওয়া-দাওয়া এবং ওষুধপত্র বাবদ প্রতিদিন বিপুল টাকা ব্যয় করতে হয় মালিকদের। এক ঘোড়া চালক বলেন, ‘আমাদের ১০০ টাকা কেজি দরে ঘাস কিনতে হয়। প্রতিটি ঘোড়া দিনে পাঁচ-ছ’ কেজি ঘাস খায়। বাজার ভালো না হলে অথবা বর্ষাকালে আমাদের গয়না বন্ধক দিয়েও ঘোড়াদের খাওয়াতে হয়। ওরা না বাঁচলে তো আমরাও বাঁচবো না।’

এছাড়াও ঘোড়ার খোরাকি হিসেবে প্রচুর পরিমাণ ছোলার আয়োজন করতে হয় মালিকদের। তাঁদের দাবি, ইদানীং ছোলার দাম প্রচুর বেড়ে গিয়েছে। তাই অবলাদের খাওয়ার খরচ জোগাতেই কালঘাম ছুটে যাচ্ছে। খরচ বৃদ্ধির হলেও যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া যাচ্ছে না। রেড রোড থেকে ফোর্ট উইলিয়াম হয়ে আবার গন্তব্যে ফিরে আসতে জুড়িগাড়ি চালকরা কোনও ক্ষেত্রে ৩০০ আবার কোনও ক্ষেত্রে ৪০০ টাকা পান। তবে যাত্রীর অভাবই ভাবাচ্ছে তাঁদের।

জুড়িগাড়ির পাশাপাশি ময়দানের ঘোড় সওয়ারদের অবস্থাও তথৈবচ। জরাজীর্ণ প্রাণীগুলি এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করলেও সওয়ারি জোটে না মালিকদের। ঘোড়া মালিক আব্দুল জানালেন, ‘আজকের শিশুরা অনেক বেশি মোবাইল নির্ভর। তারা গেম ছাড়া আর কিছু বোঝে না। আগে বাচ্চারা ময়দানে ঘুরতে এলে ঘোড়ার পিঠে চড়ার বায়না করত। এখন সেই প্রচলন ধীরে ধীরে উঠে যাচ্ছে।’ তাঁর মতে, ইংরেজি নববর্ষের দিন এক-একজন সওয়ারি পিছু ১০০ টাকা করে রোজগার হয়েছিল ঘোড়া মালিকদের। তবে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পেরনোর পর সেই রেট সওয়ারি প্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় নেমে গিয়েছে।

বড়দিন থেকে শুরু করে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ব্যবসা ফিরলেও জীবিকার হাল ফেরেনি জুড়িগাড়ি মালিকদের। তবে আধুনিকীকরণের আঙিনায় যাত্রীসংখ্যা বাড়াতে তৎপর আব্দুল-শাহরুলরা। তাঁদের জীবিকার মাধ্যমে শহরের ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয় কি না, সেটাই এখন দেখার।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen