শাড়ির চাহিদা তুঙ্গে, জোগান দিতে হিমশিম

করোনার মরা বাজার দেখে তাঁতি থেকে ব্যবসায়ী কেউই ভাবেননি যে এ বার বিশেষ বিক্রিবাটা হবে।

October 10, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi
ছবি: সংগৃহীত

করোনার মরা বাজার দেখে তাঁতি থেকে ব্যবসায়ী কেউই ভাবেননি যে এ বার বিশেষ বিক্রিবাটা হবে। কিন্তু এখন যখন পুজোর আর মোটে সপ্তাহ দুই বাকি, শাড়ির জোগান দিয়ে উঠতে পারছেন না উৎপাদকেরা। অগ্রিম দিয়েও শাড়ি না পেয়ে প্রতিদিনই ফিরে যাচ্ছেন অন্তত আট থেকে দশ জন। দিনরাত দুই শিফটে পাওয়ারলুম চালিয়েও চাহিদা হিমশিম খাচ্ছেন শান্তিপুরের তাঁত কাপড় ব্যবসায়ীরা। ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে শাড়ির দামও। কাপড়ের হাটে গত বছরও যেখানে দিনে ১৫-১৬ কোটি টাকার লেনদেন হত, এই বছর তা প্রায় দ্বিগুণ বলে ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন। 

গত তিরিশ বছর পাওয়ারলুমে শাড়ি তৈরি করে আসছেন শান্তিপুরের বাগদেবীপুরের গজেন্দ্রনাথ সরকার। তাঁর ৩০টি সাধারণ পাওয়ারলুম ছিল। বছর দুয়েক আগে উন্নতমানের ১৪টি পাওয়ারলুম বসিয়েছেন। এ বার জনপ্রিয় ‘মিনাকারি’ শাড়ি তৈরি হচ্ছে তাতে। ২৪ ঘণ্টা তাঁত চললে দিনে দেড়শোটর মতো ‘মিনাকারি’ শাড়ি তৈরি হয়। কিন্তু এখন দিনে কমপক্ষে দেড় হাজার শাড়ির চাহিদা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “যা উৎপাদন করতে পারছি, চাহিদা তার প্রায় দশ গুণ। প্রতিদিন বড় খরিদ্দারেরা ফিরে যাচ্ছেন। শিলিগুড়ি, মালদহ, কলকাতা থেকে মহাজনেরা ফোন করে পাগল করে দিচ্ছেন।” 

এমনিতেই লকডাউনের কারণে দু’তিন মাস উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ ছিল। তার পরেও ব্যবসায়ীরা বুঝতে পারেননি, পুজোয় আদৌ বাজার কতটা উঠবে, তাই উৎপাদনের গতি বাড়ানো হয়নি। এই ক’দিনে  তাঁতিরা দিনরাত কাজ করলেও গত বারের তুলনায় শাড়ির জোগান প্রায় ৪০ শতাংশ কম বলে শান্তিপুরের বস্ত্র ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন। শ্যামবাজারে হরি সাহা হাট ও হাওড়ার মঙ্গলা হাট খুললেও সেখানে ব্যবসা এখনও তেমন জমেনি জানিয়ে শান্তিপুরের তাঁত ব্যবসায়ীদের দাবি, ওই দুই হাটের খরিদ্দারদেরও বড় অংশ শান্তিপুরের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। শান্তিপুর তাঁতবস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি তারক দাস বলেন, “এক দিকে জোগান কম, তার উপরে কলকাতা ও হাওড়ার দু’টি হাট দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি খুললেও বেশির ভাগ খরিদ্দার আমাদের উপরেই নির্ভর করছেন।” 

এ বার ‘মিনাকারি’ শাড়ির চাহিদার থেকে জোগান অনেক কম থাকায় ন’শো-সাড়ে ন’শো থেকে লাফিয়ে দাম উঠেছে সাড়ে চোদ্দশো থেকে পনেরশো টাকায়। তা সত্ত্বেও জোগান কম থাকায় সেই জায়গায় ঢুকতে শুরু করেছে দক্ষিণ ভারতের সিল্ক। শান্তিপুর তাঁত কাপড় হাট কমিটির সম্পাদক অরুণকুমার ঘোষ বলছেন, “আগে যা কোনও দিন হয়নি, এ বার তা-ই দেখছি। শান্তিপুরের বাজারে দক্ষিণের সিল্ক বিক্রি হচ্ছে। বাজার এ বার অপ্রত্যাশিত রকম ভাল।” 

তারকবাবু বলেন, “অন্য বারের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি চাহিদা বেড়েছে। যারা কিছুটা হলেও স্টক রেখেছিলেন, তাঁরা খুবই ভাল ব্যবসা করছেন এ বছর।”

করোনার মরা বাজার দেখে তাঁতি থেকে ব্যবসায়ী কেউই ভাবেননি যে এ বার বিশেষ বিক্রিবাটা হবে। কিন্তু এখন যখন পুজোর আর মোটে সপ্তাহ দুই বাকি, শাড়ির জোগান দিয়ে উঠতে পারছেন না উৎপাদকেরা। অগ্রিম দিয়েও শাড়ি না পেয়ে প্রতিদিনই ফিরে যাচ্ছেন অন্তত আট থেকে দশ জন। দিনরাত দুই শিফটে পাওয়ারলুম চালিয়েও চাহিদা হিমশিম খাচ্ছেন শান্তিপুরের তাঁত কাপড় ব্যবসায়ীরা। ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে শাড়ির দামও। কাপড়ের হাটে গত বছরও যেখানে দিনে ১৫-১৬ কোটি টাকার লেনদেন হত, এই বছর তা প্রায় দ্বিগুণ বলে ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন। 

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen