‘হিন্দু ভালো, মুসলমান খারাপ, এই মর্মেই ইতিহাস লেখার চেষ্টা চলছে’, মোদী জমানায় বাকস্বাধীনতা নিয়ে সরব রুশদি

December 8, 2025 | 2 min read
Published by: Saikat

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২০:৪৬: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (Narendra Modi) জমানায় ভারতে বাকস্বাধীনতা চরম সঙ্কটের মুখে, এমনটাই দাবি করলেন প্রবাদপ্রতিম লেখক সলমন রুশদি (Salman Rushdie)। তাঁর অভিযোগ, বর্তমান ভারতে ইতিহাস বিকৃত করার এক গভীর ষড়যন্ত চলছে, যেখানে নির্দিষ্ট একটি সম্প্রদায়কে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ‘ব্লুমবার্গ’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই ব্রিটিশ-মার্কিন লেখক ভারতের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’-এর লেখকের দাবি, ভারতে হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “ভারতে আমার অনেক বন্ধু রয়েছেন। সেখানকার সাংবাদিক, লেখক এবং বিদ্বজ্জনেদের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি, তাঁদের স্বাধীনতা ধীরে ধীরে হরণ করা হচ্ছে। এটা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।”

রুশদির অভিযোগের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ইতিহাস রচনার ভঙ্গি। তিনি বলেন, “ভারতে নতুন করে ইতিহাস লেখার প্রচেষ্টা চলছে। যার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো- হিন্দুরা ভালো এবং মুসলমানরা খারাপ। এর নেপথ্যে অনেক বড় শক্তি কাজ করছে।” এই প্রসঙ্গে তিনি প্রয়াত নোবেলজয়ী লেখক ভি এস নয়পলের ‘আহত সভ্যতা’ (Wounded Civilization) তত্ত্বের উল্লেখ করেন। রুশদির মতে, নয়পল বোঝাতে চেয়েছিলেন যে মুসলিমদের আগমনেই ভারতীয় সভ্যতা জখম হয়েছে, আর বর্তমানে সেই ধারণাটিকেই প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

ঘটনাচক্রে, ভারতে সলমন রুশদি বরাবরই একটি বিতর্কিত নাম। তবে তাঁকে ঘিরে মূল বিতর্ক তৈরি হয়েছিল কংগ্রেস জমানাতেই। ১৯৮৮ সালে রাজীব গান্ধীর সরকারের আমলে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের অভিযোগে তাঁর লেখা ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ বইটির আমদানি কার্যত নিষিদ্ধ করা হয়। দীর্ঘ তিন দশক পর, ২০১৯ সালে সন্দীপন খান নামক এক ব্যক্তির করা মামলার প্রেক্ষিতে দিল্লি হাই কোর্ট সম্প্রতি এক ঐতিহাসিক রায় দেয়। আদালত জানায়, বই নিষিদ্ধকরণের কোনও সরকারি বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিজ্ঞপ্তি না থাকায় নিষেধাজ্ঞাও আর বলবৎ থাকে না। ফলে ভারতে এখন রুশদির ওই বিতর্কিত বই পাওয়ার ক্ষেত্রে আর কোনও আইনি বাধা নেই। এই বিষয়টি নিয়ে বিজেপির তরফে বরাবরই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ‘সংখ্যালঘু তোষণ’-এর অভিযোগ তোলা হয়েছে। অথচ, সেই বিজেপি শাসিত ভারতের বিরুদ্ধেই এবার কলম ধরলেন রুশদি।

প্রসঙ্গত, ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ প্রকাশের পর ১৯৮৯ সালে ইরানের তৎকালীন সুপ্রিম লিডার আয়াতোল্লা খোমেইনি রুশদির বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা বা ফতোয়া জারি করেছিলেন। দীর্ঘ ১৩ বছর আত্মগোপনে থাকতে হয়েছিল তাঁকে। এমনকি ২০২২ সালে নিউ ইয়র্কে একটি সাহিত্যসভায় তাঁর ওপর মারণ হামলাও হয়, যাতে তিনি একটি চোখ হারান। সেই সময় ভারতের মোদী সরকার (Modi government) এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছিল এবং জানিয়েছিল ভারত সর্বদা হিংসা ও কট্টরপন্থার বিরোধী। কিন্তু এবার সেই সরকারের আমলেই দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলে নতুন বিতর্কের জন্ম দিলেন বুকারজয়ী এই সাহিত্যিক।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen