বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং ঐতিহাসিক ভুল

বামফ্রন্টের শরিকদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকার জরুরি কাজটাও করে উঠতে পারেননি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷

August 8, 2024 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: উদ্ধত, অহঙ্কারী, সাহিত্য-সিনেমায় বেশি উৎসাহী, শিল্পপতিদের দু চোখে দেখতে না পারা বুদ্ধদেব সম্পর্কে জ্যোতিবাবুর মন্তব্য ছিল, ও পারবে৷ ও অনেক বদলেছে, ও পারবে৷ পেরেছেন বুদ্ধদেব ঠিকই, অন্তত রাজ্যে শিল্প আনতে গেলে শিল্পপতিদের ব্যাপারে নাক সিঁটকোলে যে হবে না, নন্দন-রবীন্দ্রসদন চত্বর ছেড়ে মাঝে মধ্যে যে বণিকসভার অনুষ্ঠানে যেতে হবে, পাঁচতারা হোটেলের মহার্ঘ ভোজসভা এড়িয়ে গেলে যে চলবে না, এটা তিনি ঠিকই বুঝেছেন৷

কিন্তু ব্যক্তিমানুষ বুদ্ধদেব কিছু বোঝেনওনি, নিজেকে বদলাবার চেষ্টাও করেননি৷ ফলে সিঙ্গুরে টাটাদের কারখানার জমি অধিগ্রহণের সময় যখন কৃষিজমি রক্ষার আন্দোলন সবে দানা বাঁধছে, পুলিশ পাঠিয়ে নিরীহ কৃষকদের পিটিয়ে, পার্টির ক্যাডারদের দিয়ে সমান্তরাল সন্ত্রাস তৈরি করে, কার্যত গায়ের জোরে কাজ হাসিল করতে চেয়েছেন৷ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন অনশনে বসেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার ছেড়ে গিয়ে আলোচনায় বসার দূরদর্শীতাটুকু দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন৷ সেই অনশন আন্দোলন প্রসঙ্গে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের নেত্রী সম্পর্কে কুৎসিত মন্তব্য করেছেন তাঁর দলের সম্পাদক, বুদ্ধবাবু রা কাড়েননি৷ এরপর সিঙ্গুরে আন্দোলন যখন ক্রমশ মারমুখী হয়ে উঠছে, তখনও তুমুল ঔদ্ধত্য দেখিয়ে ঘোষণা করেছেন, টাটাদের কেশাগ্র কাউকে স্পর্শ করতে দেবেন না৷

ফল কী হল ? টাটা মোটরসের ন্যানো কারখানা রাজ্য ছেড়ে চলে গেল গুজরাটে৷ বুদ্ধবাবু এবং তাঁর দলের হাতে রয়ে গেল ভোটের প্রচারের জন্য পিচবোর্ডের তৈরি ন্যানোর কিছু কাট আউট৷ বিরোধীদের আন্দোলনের জেরে টাটাদের প্রকল্প রাজ্যের বাইরে চলে গেল, এটা যেমন সত্যি, বুদ্ধদেবের সরকার শিল্পের অনুকূল পরিবেশ গড়ে সেই প্রকল্পকে নিরাপদ রাখতে ব্যর্থ হল, এটাও সমান সত্যি৷ রাজ্যপালের মধ্যস্থতায় মুখ্যমন্ত্রী শেষ পর্যন্ত যখন আলোচনার টেবিলে এলেন তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে৷

নন্দীগ্রামে কেমিকেল হাব নিয়েও একই ব্যাপার৷ একদিকে পার্টির ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী লাগাতার সন্ত্রাস ছড়িয়ে যাচ্ছে, আরেকদিকে লক্ষ্ণণ শেঠ, বিনয় কোঙারের মত দুর্মুখ নেতারা নানা ধরণের বিবৃতি, কটাক্ষ করে পরিস্থিতিতে ইন্ধন জুগিয়ে গেছেন, এবং মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পুলিশ পাঠিয়ে, গুলি চালিয়ে সেই পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছেন৷ তখন পশ্চিমবঙ্গ তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের বিজ্ঞাপনে খোদ রবীন্দ্রনাথের পংক্তির সুবিধাজনক আড়ালে বুদ্ধবাবুর সরকারের সদম্ভ উক্তি, আমরা চলি সমুখপানে কে আমাদের রুখবে।

রুখে কিন্তু দিল শেষপর্যন্ত, মানুষই রুখে দিল৷ রাজনৈতিক সন্ত্রাস, পুলিশের লাঠি গুলি কিছুই কাজে এল না৷ নন্দীগ্রামে কেমিকাল হাব করা গেল না৷ কিন্তু ভুল স্বীকার করা দূরে থাক, উল্টে বুদ্ধবাবুরা ভুলের দায় চাপিয়ে দিলেন মানুষের ঘাড়ে. বললেন, নন্দীগ্রামের মানুষ ভুল করেছে৷ কেমিকাল হাব হবেই৷ বাছা হল নয়াচরকে৷ সম্প্রতি এক বিদেশী বিশেষজ্ঞ সংস্থা নয়াচর ঘুরে বলে গেছে, ভুল জায়গা বাছা হয়েছে৷ অদূর ভবিষ্যতে ফের জলে ডুববে নয়াচর৷ কিন্তু কেমিকেল হাব গড়ে রাজ্যের উন্নতি নয়, প্রশ্ন যেখানে আত্মম্ভরিতা আর ক্ষমতা জাহিরের, সেখানে নয়াচর ডুবলেই কি, ভাসলেই কি৷

অন্যদিকে বামফ্রন্টের শরিকদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকার জরুরি কাজটাও করে উঠতে পারেননি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ বরং সিঙ্গুর হোক বা নন্দীগ্রাম, যে কোনও বিতর্কিত ইস্যুতে এটাও প্রকাশ হয়ে পড়েছে যে বিচক্ষণ জ্যোতি বসু জীবনে যে কটা ভুল করেছিলেন তার মধ্যে একটা হল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পদে নিজের উত্তরসূরি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ওপর আস্থা রাখা৷

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen