জলপাইগুড়ি নাম হল কিভাবে
এই এলাকা খৃষ্টীয় নবম/দশম শতকে বরেন্দ্রভূমি নামে খ্যাত ছিল।

পশ্চিমবঙ্গের(West Bengal) ২৩টি জেলার মধ্যে জলপাইগুড়ি(Jalpaiguri) অন্যতম৷ এই এলাকা খৃষ্টীয় নবম/দশম শতকে বরেন্দ্রভূমি নামে খ্যাত ছিল। অবিভক্ত বাংলাদেশের(Bangladesh) সমগ্র উত্তরাঞ্চলের একটা সময় নাম ছিল পুণ্ড্রবর্ধন। হিউয়েন সাং ও সন্ধ্যাকর নন্দীর মতে পুণ্ড্রবর্ধনের ভৌগােলিক সীমা ছিল পশ্চিমে গঙ্গা ও পূর্বে করতোয়ার মধ্যবর্তী ভূভাগ। এই এলাকাই খৃষ্টীয় নবম/দশম শতক থেকে বরেন্দ্রভূমি নামে খ্যাত ছিল। যদিও পরবর্তীকালে বহিরাগত শত্রুর আক্রমণে রাজাদের রাজ্যের সীমার পরিবর্তন ঘটেছিল। প্রকৃতপক্ষে জলপাইগুড়ি জেলা কামরূপ / প্রাকজ্যোতিষপুর রাজ্যের অংশ বিশেষ । জলপাইগুড়ি আজও ইতিহাসের(History) প্রাচীন সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।
নবগঠিত জলপাইগুড়ি জেলার মহকুমার সংখ্যা হল ৩টি, পৌরসভার সংখ্যা ৪টি, থানার সংখ্যা ১৬টি, গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের সংখ্যা ১৪৮টি এবং গ্রামের সংখ্যা ৫৯৫টি।জলপাইগুড়ি জেলার পূর্বে আলিপুরদুয়ার, পশ্চিমে দার্জিলিং, উত্তরে ভুটান এবং দক্ষিণে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলা এবং বাংলাদেশ-এর পঞ্চগড় জেলা অবস্থিত । প্রাচীনকাল থেকেই উত্তরবঙ্গ তথা জলপাইগুড়ি জেলায় হিন্দু ধর্মের পাশাপাশি বৌদ্ধধর্মের প্রসার ঘটেছিল। এর প্রমাণ দেখা যায় জেলায় অবস্থিত প্রাচীন মন্দিরগুলোর ভাস্কর্য থেকে। ইংরেজরা তাদের শাসনকার্যের সুবিধার জন্য উত্তরবঙ্গকে কয়েকটি অঞ্চলে ভাগ করে নতুন কয়েকটি জেলার সৃষ্টি করেছিল। জলপাইগুড়ি জেলা এই জেলাগুলির মধ্যে অন্যতম। জলপাইগুড়ি নাম হল কিভাবে আজ আমরা সেটাই জানব।
জলপাইগুড়ি নাম হল কিভাবে তা নিয়ে বহু মতান্তর রয়েছে। এ কথা অনেকেই অনুমান করে থাকেন এই অঞ্চলে জলপাই গাছের বাহুল্য থেকে ‘জলপাই’ নাম এবং ‘স্থান’ বলতে গুঁড়িকে বোঝানো হয়েছে। আবার অন্য একটি মতানুযায়ী এই স্থান যেহেতু শিবতীর্থ সেই কারণে শিবের নামের সঙ্গে এই জেলার নামের সাদৃশ্য থাকতে পারে৷ ব্রিটিশ উদ্ভিদ্বিজ্ঞানী এবং অভিযাত্রী স্যার জোসেফ ডালটন হকারের বর্ণনায় ‘জিলপিগুড়ি’ শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায়৷ এছাড়া ব্রিটিশ ভূবিদ জেমস রেনেলের মানচিত্রে জলপাইগুড়িকে ‘জুলপিগোড়ি’ নামে উল্লেখ করা হয়েছে।
জনশ্রুতি অনুযায়ী জল্পেশ্বর নামে এক হিন্দু রাজার দ্বারা একসময় এই অঞ্চল শাসিত হয়েছিল৷ তিনিই জলপাইগুড়ির বিখ্যাত শিব মন্দির(ShibMandir) প্রতিষ্ঠা করেন যেটি বর্তমানে উত্তরবঙ্গের বিখ্যাত একটি পৌরাণিক মন্দির জল্পেশ ধাম নামে খ্যাত। জল্পেশর হল ভগবান শিবের একটি রূপ। এই জল্পেশ্বর রাজার নাম থেকেই জল্পেশ্বর মন্দির(Jalpeshwar Mandir) এবং জলপাইগুড়ি নামের উৎপত্তি এমনটা অনুমান করা যেতেই পারে।