লেডিকেনির ইতিবৃত্ত 

কেউ বলেন লেডি ক্যানিংয়ের ভারতে আগমনের উদ্যেশ্যে ভীম নাগ এই মিষ্টি বানিয়েছিলেন। কেউ বলেন লেডি ক্যানিংয়ের জন্মদিন উপলক্ষ্যে লর্ড চার্লস ক্যানিংই অর্ডার দিয়ে ভাজা রসের মিষ্টি বানিয়েছিলেন।

January 31, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

লর্ড ক্যানিং এই মাটিতে খুব তাড়াতাড়ি জনপ্রিয় গভর্নর জেনারেল হয়ে উঠেছিলেন ব্রিটিশদের কাছে অন্যদিকে ভারতীয়দের কাছে নিন্দিত। চার্লস ক্যানিং ভারতীয় অধিবাসীদের ওপর গবেষণামূলক কাজ করেছিলেন। সিপাহী বিদ্রোহের সময় তাঁর প্রসংশনীয় ভূমিকা পরের বছরেই তাঁকে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম ভাইসরয় হিসাবে অধিষ্ঠিত করা হয়। ততদিনে চার্লস ক্যানিংয়ের মতোই তাঁর স্ত্রী শার্লটও পরিচিত হয়ে গেছেন লেডি ক্যানিং নামে। 

এখনকার সেলিব্রিটিদের মতোই তখনও লর্ড এন্ড লেডি ক্যানিংয়ের বিবাহিত জীবন নিয়েও আলোচনা কম হত না। বিশেষ করে লেডি ক্যানিং হয়ে উঠলেন জনপ্রিয় এক চরিত্র। হাজার হোক, ভাইসরয়ের স্ত্রী বলে কথা। তাছাড়া তিনি  ভারতীয় সংস্কৃতির ওপর দারুণ সহানুভূতিশীল ছিলেন। অসাধারণ সুন্দরী লেডি ক্যানিং দক্ষ চিত্রশিল্পীও ছিলেন। ফুল ও গাছের প্রতি ছিল ভালোবাসা। ব্যারাকপুরের বাড়িতে তাঁর নিজের হাতে তইরি করা বাগান ছিল দেখবার মত।

ক্যানিং ভারতের সামগ্রিক উন্নতির জন্য তিনি সবসময় সচেষ্ট ছিলেন। স্ত্রীর সান্নিধ্য এবং উৎসাহ পেয়েছেন কাজের ব্যস্ততার মাঝেই। এই উপমহাদেশে তিনিই প্রথম কাগজের মুদ্রার প্রচলন করেন। মাতলা নদীর তীরে একটি আধুনিক বন্দর তৈরির স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। এ জন্য ওখানকার জঙ্গল কেটে তৈরি হয়েছিল একটি দফতর। এখন ক্যানিং-এর স্মৃতি বিজড়িত সেই পোর্ট ক্যানিং কোম্জল’র বাড়িটি কোনওক্রমে টিঁকে রয়েছে কালের গ্রাস বাঁচিয়ে। 

লর্ড ক্যানিং-এর ভারতবাসের শেষদিকে ওঁকে খুব দুঃসময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। তখন কাজের চাপ ছিল অনেক! তিনি যখন তরাই অঞ্চলে কাজে ব্যস্ত সেই সময় স্বাস্থ্য পরিবর্তনের জন্য ওঁর স্ত্রী ছিলেন দার্জিলিঙে, ওখানেই জাঙ্গল ফিভার বা ম্যালেরিয়া জ্বরে আক্রান্ত হন তিনি। দ্রুত ওঁকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয় কলকাতায়, কিন্তু অবস্থা ক্রমশ খারাপের দিকে যেতে থাকে। অবশেষে ১৮৬১-র নভেম্বরে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রাজভবনে। 

লেডির প্রিয় জায়গা ছিল ব্যারাকপুরে গঙ্গার তীর। ওঁর ইচ্ছেকে সম্মান জানিয়ে সেই গঙ্গাতীরে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে ওঁকে সমাধিস্থ করা হয়। এখান সেখানে পুলিশ ট্রেনিং স্কুল। ১৮০০ সালে লর্ড ওয়েলেসলি এই জায়গায় ব্যারাকপুর পার্ক নির্মাণে উদ্যোগী হন। পরে লেডির সমাধির করুণ দশা দেখে তার উপরে একটি ছাউনি তৈরি করে দেওয়া হয়, কিন্তু দুর্ভাগ্য, রঙিন পাথরের কারুকাজ করা সেই সমাধি সংরক্ষণ করা দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। এরপর কলকাতার সেন্ট জন’স চার্চে সমাধিটি স্থানান্তরিত করা হয়। তারপর লর্ড ক্যানিংও ফিরে গেলেন স্বভূমিতে। লেডি ক্যানিংয়ের মৃত্যুর পর কলকাতায় বেশ কিছুদিন তাঁকে নিয়ে চর্চা হয়। 

কথিত তাঁর স্মৃতির উদ্যেশ্যে কলকাতার বিখ্যাত মিষ্টি ব্যবসায়ী ভীম চন্দ্র নাগ বানিয়ে ফেলেন লেডি ক্যানিং নামে এক নতুন মিষ্টি। বাঙ্গালা যেমন ইংরেজদের মুখে মুখে বেঙ্গলি হয়ে গিয়েছিল, ঠিক তেমনিই নতুন মিষ্টি লেডি ক্যানিং  চলতি কথায় হয়ে উঠল লেডিকেনি। এইভাবে ভারতের প্রথম ভাইসরয়পত্নীর নাম থেকে গেল বাংলার মিষ্টির মধ্যে। প্রায় সব সরকারি অনুষ্ঠানে একবাক্যে জায়গা পেতে লাগলো লেডিকেনি। শুধু পুজোয় প্রসাদ হিসেবে লেডিকেনি, রসগোল্লার মতোই ব্রাত্য থেকে গেল।

কেউ  বলেন লেডি ক্যানিংয়ের ভারতে আগমনের উদ্যেশ্যে ভীম নাগ এই মিষ্টি বানিয়েছিলেন। কেউ বলেন লেডি ক্যানিংয়ের জন্মদিন উপলক্ষ্যে লর্ড চার্লস ক্যানিংই অর্ডার দিয়ে ভাজা রসের মিষ্টি বানিয়েছিলেন। তবে লেডি ক্যানিংয়ের নাম যে এই মিষ্টির সঙ্গে জড়িয়ে আছে সেকথা সবাই একবাক্যে স্বীকার করবেন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen