‘পাকা ব্যবস্থা’র স্বপ্ন ছাড়েনি কুমোরটুলি
বিচালি, খড়ের কুচো, মাটি, কাপড়ের মতো সরঞ্জাম আলাদা করে রাখার জায়গা করে দেওয়ারও পরিকল্পনা ছিল। বিদেশি পর্যটকেরা ঘুরতে-দেখতে এলে তাঁদের জন্য বিশ্রামাগার এবং কাফেটেরিয়া, তা-ও ছিল পরিকল্পনার অঙ্গ।

চারতলা কমপ্লেক্সের একতলায় তৈরি হওয়ার কথা ছিল শিল্পীদের স্টুডিয়ো। উপরের তিনটি তলা জুড়ে শিল্পী ও কারিগরদের থাকার জায়গা। বিচালি, খড়ের কুচো, মাটি, কাপড়ের মতো সরঞ্জাম আলাদা করে রাখার জায়গা করে দেওয়ারও পরিকল্পনা ছিল। বিদেশি পর্যটকেরা ঘুরতে-দেখতে এলে তাঁদের জন্য বিশ্রামাগার এবং কাফেটেরিয়া, তা-ও ছিল পরিকল্পনার অঙ্গ। কিন্তু কুমোরটুলির খোলনলচে আমূল বদলে দেওয়ার এই পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি।
সরস্বতী পুজোর কয়েক দিন আগের কথা। অবাক চোখে প্রতিমা নির্মাণ দেখছিলেন কয়েক জন বিদেশি। কুমোরটুলির সর্বত্র ব্যস্ততা। কোথাও বস্তা করে বিচালি ঢুকছে, কোথাও বা রং করার কাজ চলছে। এরই মধ্যে বায়না করা কোনও প্রতিমা পাড়ায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যা দেখছেন, সবেতেই মুগ্ধ হচ্ছেন বিদেশি পর্যটকের দল। মাঝেমধ্যেই তাঁদের ক্যামেরার ফ্রেমবন্দি হচ্ছে কুমোরটুলির দৃশ্য। সরু একচিলতে গলির মধ্যে দুনিয়ার ব্যস্ততা।
কুমোরটুলিতে ‘পাকা ব্যবস্থা’ হওয়ার স্বপ্ন এখনও দেখেন এখানকার দু’হাজার শিল্পী-কারিগরের বেশির ভাগই। সব পরিকল্পনা কিন্তু পাকা হয়েও গিয়েছিল। তা সত্ত্বেও কুমোরটুলির ‘আধুনিক’ এবং ‘আদর্শ ট্যুরিস্ট স্পট’ হয়ে ওঠা আজও হল না। আধুনিক হওয়া দূরে থাক, এখানকার কারিগর ও শিল্পীদের রোজ বড় ধরনের ঝুঁকি মাথায় নিয়েই কাজ করতে হয়। নির্মাণ সামগ্রীর ধরন, বহু পুরোনো বাড়ি ও সরু গলির জন্য কুমোরটুলি বছরের পর বছর এক রকম জতুগৃহে পরিণত। শুধু যেন একটা জ্বলন্ত শলাকার অপেক্ষা!
কিন্তু এমন অবস্থায় কুমোরটুলির থাকার কথা ছিল না। এখানকার শিল্পীরা বলছেন প্রায় ১২ বছর আগে কুমোরটুলিকে ঢেলে সাজার একটা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল।’ সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে কী হত? শিল্পীরা জানাচ্ছেন, সার সার দরমা ও টিন দিয়ে তৈরি খুপরি ঘরগুলি আর থাকত না। ওই সব খুপরি ঘরেই এখন প্রতিমা নির্মাণ করা হয়। গোটা কুমোরটুলি জুড়ে তৈরি হত বিরাট এক কমপ্লেক্স। পরিবেশটাই আমূল বদলে যেত।