৪০০০ কোটি টাকার তেজস্ক্রিয় ধাতু দর্জি, স্বর্ণশিল্পীর হাতে এল কীভাবে? অবাক স্থানীয়রা
বুধবারের ঘটনা ঠিক কী হয়েছিল?

একজন পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। পেশায় স্বর্ণশিল্পী। আরেকজন পেশায় দর্জি, চাষাবাদও করে। এই দু’জনের কাছে ক্যালিফোর্নিয়াম ও ইরিডিয়ামের মতো পারমাণবিক বোমা তৈরির তেজষ্ক্রিয় ধাতু মেলায় বিস্ময়ের অন্ত নেই স্থানীয় বাসিন্দাদের। এমনকী পরিবারেরও দাবি, এধরণের কোনও বিষয়ের সঙ্গে ওই দু’জনের যোগ আছে, তা তাঁরা কখনও জানতেই পারেননি। যদিও ধোঁয়াশার জায়গাও আছে। ক্যালিফোর্নিয়াম কাণ্ডে ধৃত হুগলির পোলবার পাউনান গ্রামের বাসিন্দা অসিত ঘোষ অধিকাংশ সময়েই বাড়ির বাইরে থাকত। আরেক ধৃত সিঙ্গুরের আনন্দনগরের বাসিন্দা শৈলেন কর্মকারের স্ত্রী পিয়ালিদেবীর দাবি, সম্প্রতি অসিতের সঙ্গে শৈলেনের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। অতীতে কখনও অসিত ঘোষের নাম তিনি শোনেননি।
প্রতিবেশীরা অবশ্য বলছেন, সন্দেহ করার মতো কিছুই এত বছরে তারা দেখেননি। তবে হাতেনাতে তেজষ্ক্রিয় ধাতু সহ ধরা পড়ার পরে বৃহস্পতিবার প্রতিবেশীরা কেউ সরাসরি মন্তব্য করতেও চাননি। তাঁদের বক্তব্য, কিছু একটা ঘটনা তো আছেই। নইলে এই ধাতু ওই দু’জনের কাছে এল কোথা থেকে?
বুধবারের ঘটনা ঠিক কী হয়েছিল? অসিত ঘোষের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পেশায় কৃষিজীবী ওই ব্যক্তি কয়েকদিন ধরেই বাড়িতে ছিল না। মঙ্গলবার রাতে শেষবার তার স্ত্রী’র সঙ্গে কথা হয়েছিল। বুধবার দিনভর অসিতের ফোন সুইচড অফ পেয়েছেন তার স্ত্রী রীতা ঘোষ। আর বৃহস্পতিবার সকালে স্বামীর গ্রেপ্তারের খবর শুনে তিনি স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছেন।
পাউনানের একটি সাধারণ বাড়িতে অসিত ও রীতা ঘোষের সংসার। সন্তান নেই। বাড়িতে থাকেন বয়স্কা মা। রীতাদেবী বলেন, কীভাবে, কী হল, বুঝতে পারছি না। উনি তো জমি-জায়গার কাজে মাঝেমধ্যে তারকেশ্বর সহ নানা জায়গায় যেতেন। কখনও এজাতীয় কিছুর সঙ্গে জড়িত আছেন বলে টের পাইনি। আমার মনে হয় ওকে ফাঁসানো হয়েছে। ফাঁসানোর তত্ত্বই হাজির করছেন শৈলেনের স্ত্রী পিয়ালিদেবীও। তাঁর কাছ থেকে জানা গিয়েছে, বুধবার সকালেই কলকাতায় বন্ধুর বাড়ি যাচ্ছি বলে শৈলেন বেরিয়েছিল। দুপুরে তার ফোন সুইচড অফ পাওয়া যায়। সন্ধ্যার মুখে শৈলেন নিজেই ফোন করে জানায়, সে ঠিক আছে। অথচ তথ্য বলছে, ততক্ষণে পুলিস তাকে গ্রেপ্তার করেছে। পিয়ালিদেবী বলেন, আমার স্বামী কোয়েম্বাটুরে স্বর্ণশিল্পীর কাজ করেন।
কোনওদিন এধরনের কোনও ঘটনার আভাস পাইনি। উনি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন এবং অত্যন্ত বোকা মানুষ। অনেকের কথাই যাচাই না করে বিশ্বাস করে ফেলেন। যে ব্যক্তিকে ওর সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তার সঙ্গে সদ্য পরিচয় হয়েছিল। ওই ব্যক্তি যে তার সঙ্গে আছে, সে কথাও আমার স্বামী বলেনি।
ফলে, ধোঁয়াশা থাকছেই। থাকছে সন্দেহ। গোটা ঘটনার পরে সবচেয়ে জোরাল প্রশ্ন, ক্যালিফোর্নিয়াম বা ইরিডিয়ামের মতো দুর্লভ ধাতু দু’জন তথাকথিত সাধারণ মানুষ পেল কীভাবে? দুই ধৃতের প্রতিবেশীরাও সেই উত্তরই খুঁজছেন।