মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কীভাবে মহিলা খেলোয়াড়দের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠলেন জঙ্গলমহল-কন্যা রাজশ্রী হাঁসদা?
মুখ্যমন্ত্রী চাকরির আশ্বাস দেন। সেই সঙ্গে তিনি মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দেন, যাতে তরুণীদের এখনই বিয়ে না-হয় সেই বিষয় দেখার জন্য।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২১:০১: বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে পেয়ে সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন জাতীয়স্তরের রেফারি রাজশ্রী হাঁসদা। তিনি জানান, কম বয়সী মহিলা খেলোয়াড়দের পরিবার থেকে চাপ দেওয়া হয় বিয়ের জন্য। মুখ্যমন্ত্রী চাকরির আশ্বাস দেন। সেই সঙ্গে তিনি মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দেন, যাতে তরুণীদের এখনই বিয়ে না-হয় সেই বিষয় দেখার জন্য।
রাজশ্রী মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন, অ্যাকাডেমির মেয়েরা এখন বিয়ে করতে না-চাইলেও বাড়ির লোকেরা বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন। এখন খেলা নিয়েই থাকতে চান তাঁরা। তাঁর দাবি, সমস্যা শুনে, অ্যাকাডেমির (গোপীবল্লভপুর উইমেনস রেফারি অ্যাকাডেমি) বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। অ্যাকাডেমির খেলোয়াড়দের যাতে তাড়াতাড়ি বিয়ে না হয় তা দেখারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। রাজশ্রীর আরও দাবি, খেলোয়াড়দের সিভিকে চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন।
ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুর থানার পটুলিয়া গ্রামের মেয়ে রাজশ্রীর। বাবা, মা ও দিদি, দাদা, ভাইদের সংসার চলে চাষবাস করে। রাজশ্রী, পাঁশকুড়া বনমালী মহাবিদ্যালয়ে শারীরশিক্ষা বিষয়ে স্নাতকোত্তরের তৃতীয় সেমিস্টারের ছাত্রী। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই তিনি ফুটবল খেলতেন। পরবর্তীতে রেফারি হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। এ বছরের মে মাসে জাতীয়স্তরের রেফারি হন তিনি। পুণেতে অনূর্ধ্ব ১৫ ফুটবল ম্যাচ ছাড়াও সিনিয়র ন্যাশনাল, সাব জুনিয়র ন্যাশনাল ফুটবল প্রতিযোগিতার রেফারির দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
রাজশ্রীর আক্ষেপ, জঙ্গলমহলের আরও অনেক মেয়ের তাঁরই মতো স্বপ্ন ছিল রেফারি হওয়ার। তাঁরা পারেননি। তিনি পেরেছেন। বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নেওয়ার সময়ও রাজশ্রীর মনে ছিল জঙ্গলমহলের মেয়েদের কথা। রাজশ্রী বাংলার দিদিকে জানান, কম বয়সে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে মেয়েরা রেফারি হতে পারছে না। মেয়েদের স্বপ্ন বাঁচাতে চাকরির প্রয়োজন। নয়ত স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে গোপীবল্লভপুরে উইমেনস রেফারি অ্যাকাডেমি শুরু হয়েছিল। প্রথমে ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৪০। ওই কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিয়ে রাজশ্রী সহ পাঁচ জন এখন জাতীয় স্তরের ম্যাচ খেলাচ্ছেন। করোনাকালীন সময়ে দুই বছর বন্ধ ছিল প্রশিক্ষণকেন্দ্র। তার পরে তা বেলিয়াবেড়ায় সরানো হয়। সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাজশ্রী জানান, বহু কিশোরীর বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে মেয়েদের সংখ্যা ১৫। পরিবারের লোকেরা বলেন, হাফ প্যান্ট পরে ছেলেদের খেলাবে। ও সব চলবে না।
রাজশ্রী আরও জানান, তাঁর কষ্ট হয়। অনেক ভাল খেলত ওরা। তিনি পারলাম, ওরা পারল না। ছোটবেলার বন্ধুদের জন্যও খারাপ লাগে তাঁর। এই খারাপ লাগা থেকেই মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। আশ্বাস পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর। রাজশ্রীর আশা, মেয়েগুলোর কিছু একটা হয়ে যাবে। ওই মেয়েদেরও একটা কাজের ব্যবস্থা হলে পরিবার থেকে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া বন্ধ হবে। শুধু রেফারি হয়ে পেট চালানো সম্ভব নয়। রাজশ্রীর কথায়, ৩০-৩২ বছর পর্যন্ত খেলানো যায়। তারপরে তো রোজগারের জন্য চাকরির দরকার হবে। সেই কথা ভেবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এগিয়ে গিয়েছিলেন বলেই জানাচ্ছেন তিনি।