কীভাবে ‘হাতি’ হয়ে উঠেছিল বঙ্গ ঐতিহ্য ও লোকসংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ?

আজ‌ও নিম্ন অসম, উত্তরবাংলার লোকশিল্পীরা ‘হাতির গান’ করেন।

December 13, 2023 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi
কীভাবে ‘হাতি’ হয়ে উঠেছিল বঙ্গ ঐতিহ্য ও লোকসংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ?

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: একসময়ে রাজা, জমিদারদের আমলে‘হাতি’ ছিল অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। যুগে যুগে জঙ্গলের কাঠ বহন, যুদ্ধবিগ্রহ, শিকার, বিনোদন ইত্যাদি প্রায় সব ক্ষেত্রেই হাতিকে কাজে লাগানো হত। অসম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, দিনাজপুর, রংপুর, জলপাইগুড়িসহ অখন্ড বাংলায় হাতিকে কেন্দ্র করে নানা লোকসঙ্গীত এবং লোকসংস্কৃতির গড়ে উঠেছিল।

আজ‌ও নিম্ন অসম, উত্তরবাংলার লোকশিল্পীরা ‘হাতির গান’ করেন। হাতিকে নিয়ে গান বাঁধেন ‘আরে হাতি মার্কা কেরাসিন/কায় বা আইনলেন দ্যাশতে/বাপ রে বাপ মাও রে মাও/মোর গাও ঝমঝম 
করে রে’।

এবার আসি হাতির গান কিভাবে সৃষ্টি হল সেই বিষয়ে। অসমের গৌরীপুর রাজ পরিবারের সদস্যরা কুনকি, মাহুত, ফান্দি ও দফাদারদের সাহায্যে গভীর অরণ্য থেকে জংলি হাতিকে ধরে আনতেন। তারপর নানা কৌশলে জংলি হাতিকে পোষ মানিয়ে সামাজিক, বাণিজ্যে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হতো। এসবের মাঝেই গড়ে উঠল বাংলার লোকসংস্কৃতিতে নতুন সংযোজন ‘হাতি ধরার গান’।

সেই সময়ে হাতি সত্যি সত্যিই শান্ত হতো গানের সুরে,ঢোল, করকা, বাঁশি, সানাইয়ের তালে। সংসার চালানোর তাগিদে ঘন জঙ্গলে মাহুত, ফান্দি, দফাদারদের দিনের পর দিন হাতি শিকার, হাতির প্রশিক্ষণের কাজে জঙ্গলে, নানা ক্যাম্পে দিনযাপন করতে বাধ্য হতো। তখন পরিবার, আত্মীয়-স্বজনদের বিচ্ছেদের দুঃখে তাঁদের পরিবারের গৃহকর্ত্রীদের করুণ আর্তি ফুটে উঠতো একধরনের ‘হাতিগানে’, যাকে স্থানীয় ভাষায় বলা হত ‘মাহুত বন্ধুর গান’। আবার মাহুতবন্ধু এবং ফান্দিদের জীবন সংগ্রাম নিয়ে উত্তরবঙ্গে একধরনের গানের প্রচলন ছিল, যাকে বলা হতো ‘বিরুয়া গান। হাতি কামোত্তোজিত বা হস্তিনী ঋতুমতী হলে তখন তাকে বশে রাখার জন্য মাহুতরা একধরনের নিচু সুরের গান গাইতেন, সেই গানই ‘বিরুয়া’ বা ‘বিরুয়ার গান নমে পরিচিত। আবার সেই হাতিকে পরিবারের সদস্য মনে করে নানা রঙ্গরসের গানও প্রচলিত ছিল তৎকালীন সমাজে।

প্রসঙ্গত, গৌরীপুরের রাজা প্রভাতচন্দ্র বড়ুয়া ও তাঁর ছেলে মেয়েরা, বিশেষত রাজকুমার প্রমথেশ বড়ুয়া, প্রকৃতিশ চন্দ্র (লালজি), রাজকুমারী নীহারবালা বড়ুয়া (লোকসংস্কৃতি সংগ্রাহক), লালজি দুহিতা প্রতিমা বড়ুয়া হাতিসংস্কৃতি হাতিগানের চর্চা ও প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। প্রমথেশ বড়ুয়া তাঁর ‘মুক্তি’ ছায়াছবিতে প্রথম তাঁর রাজপরিবারের পোষা হাতি ‘জংবাহাদুর-কে ব্যবহার করেছিলেন। প্রতিমা বড়ুয়া ১৯৫৪ সালে ‘হস্তির কন্যা’ ছবিতে সর্বপ্রথম অনেকগুলি হাতির গান গেয়ে এই সঙ্গীতকে লোকসমাজে জনপ্রিয় করে তোলেন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen