চালু মাত্র ২টি, তিন বছরে ৪০০ বন্দে ভারত ট্রেন কিভাবে, প্রশ্ন বিশেষজ্ঞ মহলে
মঙ্গলবার এই ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন, সংসদে রেলের ‘ডিমান্ডস ফর গ্রান্টস’ পেশ হওয়ার পরেই বিভিন্ন জোনের বাজেট বরাদ্দের বিষয়টি স্পষ্ট হবে। পরে জানা গিয়েছে, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পে বরাদ্দ গত বছরের থেকে ২০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ১০০ কোটি করা হয়েছে।

‘সুপার ক্রিটিক্যাল’, ‘ক্রিটিক্যাল’ এবং জমি অধিগ্রহণ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে, এমন রেল প্রকল্পের বাস্তবায়নেই মিলবে বেশি বরাদ্দ। মঙ্গলবার এই কথাই স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। এবং রেলমন্ত্রীর এদিনের বক্তব্য থেকেই কার্যত একটা ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে এবারের বাজেটে সম্ভবত বাংলার রেল প্রকল্পগুলিতে বরাদ্দের পরিমাণ নামমাত্র হতে চলেছে। অন্তত এমনটাই মনে করছে তথ্যাভিজ্ঞ মহল। কলকাতা মেট্রোর বিভিন্ন প্রকল্পের বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে কিছুটা অন্য ছবি দেখা যেতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। রেল সূত্রের খবর, কলকাতা মেট্রোর বাজেট বরাদ্দ গত অর্থবর্ষের তুলনায় অন্তত কয়েকশো কোটি টাকা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার এই ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন, সংসদে রেলের ‘ডিমান্ডস ফর গ্রান্টস’ পেশ হওয়ার পরেই বিভিন্ন জোনের বাজেট বরাদ্দের বিষয়টি স্পষ্ট হবে। পরে জানা গিয়েছে, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পে বরাদ্দ গত বছরের থেকে ২০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ১০০ কোটি করা হয়েছে।
২০২১-২২ অর্থবর্ষেও বাংলার একাধিক প্রকল্পে প্রতীকী এক হাজার টাকা করে বরাদ্দ করেছিল রেলমন্ত্রক। সেই বরাদ্দের প্রসঙ্গে তৎকালীন রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল জানিয়েছিলেন, জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রকল্পের কাজ থমকে রয়েছে বলেই নামমাত্র বরাদ্দ করতে হয়েছে। মঙ্গলবার যেভাবে বর্তমান রেলমন্ত্রী সার্বিকভাবেই সরাসরি জমি অধিগ্রহণের প্রসঙ্গটি টেনে এনেছেন, তাতে এবারেও বাংলার বিভিন্ন রেল প্রকল্পে প্রতীকী বরাদ্দের ইঙ্গিত স্পষ্ট। পরবর্তী তিন বছরে সারা দেশে ৪০০টি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেন চালু করার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি চালু হতে পারে হাওড়া-রঁাচি রুটে। কিন্তু, বর্তমানে চালু রয়েছে মাত্র দু’টি বন্দে ভারত ট্রেন। তিন বছরে তা বাড়িয়ে কীভাবে ৪০০টি করা যাবে, সংশয় তৈরি হয়েছে তা নিয়ে। একইভাবে আগামী তিন বছরে ১০০টি প্রধানমন্ত্রী গতিশক্তি কার্গো টার্মিনাল এবং স্থানীয় পণ্যের প্রসারের লক্ষ্যে ‘এক স্টেশন, এক পণ্য’ নীতি গ্রহণের কথাও বলা হয়েছে। তবে এই টার্গেট শেষ পর্যন্ত পূরণ হবে কি না, সন্দেহ রয়েছে তা নিয়েও। এই কার্গো টার্মিনালগুলির মধ্যে একটি হবে বাংলার জনাই রোডে। অন্য একটি হবে বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানায় মাইথনে।
২০২২-২৩ আর্থিক বছরের সাধারণ বাজেটে এমনিতে রেলের ভাঁড়ার কার্যত শূন্যই। যদিও রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এই অভিযোগ মানতে চাননি। বরং তিনি এদিন রেল সেক্টরে ‘রেকর্ড’ বরাদ্দের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন নির্মলা সীতারামনকে। রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে রেলে ১ লক্ষ ৩৭ হাজার কোটি টাকার মূলধনী বিনিয়োগের ঘোষণা করা হয়েছে বাজেটে। যা গত আর্থিক বছরের তুলনায় কয়েক হাজার কোটি টাকা বেশি। একইসঙ্গে রেলমন্ত্রী বলেছেন, ‘ আগামী আর্থিক বছরে রেলের অপারেটিং রেশিও লক্ষ্যমাত্রা স্থির হয়েছে ৯৮ শতাংশ।’ অর্থাৎ, ওই অর্থবর্ষে ১০০ টাকা আয় করতে রেলকে ৯৮ টাকা খরচ করতে হবে। ফলে রেলের শোচনীয় অবস্থাই সামনে আসছে।
মঙ্গলবারের বাজেট ঘোষণায় দেশের দু’হাজার কিলোমিটার রেললাইনকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির আওতায় এনে উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘কবজ’। উত্তরবঙ্গের ট্রেন দুর্ঘটনার জেরেই কি এই ইস্যুতে ঘুম ভেঙেছে রেলের? উঠছে প্রশ্ন। রেলমন্ত্রী বলেছেন, ‘ময়নাগুড়িতে ট্রেন দুর্ঘটনার কথা মাথায় রেখেই সবথেকে বেশি এলএইচবি কোচ তৈরির উপর জোর দেওয়া হয়েছে।’ রেলের রোলিং স্টক খাতে বরাদ্দ প্রায় আট হাজার কোটি টাকা। ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডরের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ১৫ হাজার ৭১০ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা। ট্র্যাক রিনিউয়ালের জন্য প্রায় ১৩ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা, গেজ কনভারশনের জন্য প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা এবং ডবলিংয়ের জন্য প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। নতুন রেললাইনের জন্য ২৫ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি বরাদ্দ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তবে ৪০০টি বন্দে ভারত চালানোর কথা বললেও ভাড়া না কমানোর ইঙ্গিতই দিয়েছেন মন্ত্রী।