দরকার হলে জীবন দেব, কিন্তু বাংলা ভাষা কেড়ে নিতে দেব না, বীরভূমে মমতা
ভিনরাজ্যে বাঙালিদের হেনস্থার অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা যদি সবাইকে আশ্রয় দিতে পারি, তোমরা কেন পারবে না?

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৬:৪৪: বাঙালি অস্মিতায় শান দিতে রবিভূমে ফের বাঙালি চেতনার বার্তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ভাষা আন্দোলনের আবহে বোলপুরে বিশাল পদযাত্রা করল তৃণমূল কংগ্রেস। রবি ঠাকুরের প্রতিকৃতি হাতে হাঁটলেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে, অন্যদের হাতে দেখা গেল বাংলা বর্ণমালার নানা অক্ষর।
মিছিল শেষে মঞ্চ থেকে শুরুতেই উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আপনাদের ভালোবাসায় আমি আপ্লুত। বাংলায় জন্মগ্রহণ করে আমি আজ গর্বিত। আমি যেন মাটির মানুষ থাকতে পারি।সবাইকে নিয়ে যেন একসাথে পথ চলতে পারি, সকলের কথা বলতে পারি।”
ভিনরাজ্যে বাঙালিদের হেনস্থার অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা যদি সবাইকে আশ্রয় দিতে পারি, তোমরা কেন পারবে না? বাইরে আমাদের ২২ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক বাইরে কাজ করে।যাকে তাকে বাংলাদেশী বলছে, রোহিঙ্গা বলছে , পুশব্যাক করছে বাংলাদেশে। সব নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও কেন এই অত্যাচার?দিল্লিতে একটা পরিবারকে বিভিন্নই থানায় নিয়ে গিয়ে হেনস্থা করা হচ্ছে, বাঙালি কলোনিতে গিয়ে বলছে রাজ্য ছেড়ে দিতে।”
এরপর তিনি নাম না করে বলেন, “স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলা, বাংলার মানুষ পথ দেখিয়েছিলো, আর সেই বাংলাকেই আপনারা ভুলে গেলেন? আমি কারও নাম নেবো না। যার যা বোঝার বুঝে নেবেন। বাংলার অবদান কি করে ভুলে গেলেন?”
স্পষ্ট বার্তা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সবাই একই ভাষায় কথাবলে না। বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান, রাজবংশীদের, মতুয়াদের একটা টিপিক্যাল ভাষা রয়েছে। আমি কোনও ভাষার বিরোধী নই। কিন্তু বিভেদ তৈরি করে এমন কোনও নীতিরই বিরোধী আমি। আমরা ঐক্যের পক্ষে, বৈচিত্র্যের মাঝে মিলনই ভারতের শক্তি।”
প্রধানমন্ত্রীকে নাম না করে আক্রমণ শানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “যখন সৌদি আরব, আবু ধাবি, মালদ্বীপ গিয়ে জড়িয়ে ধরে টাকা দিয়ে আসেন তখন দেখেন হিন্দু না মুসলমান? দিল্লিতে একটা পরিবারকে বিভিন্নই থানায় নিয়ে গিয়ে হেনস্থা করা হচ্ছে, বাঙালি কলোনিতে গিয়ে বলছে রাজ্য ছেড়ে দিতে। মহারাষ্ট্রে সংখ্যালঘুকে খুন করে বস্তায় ভরেছে। এই হল ডবল ইঞ্জিন সরকার। বিরাট বড় গেম প্ল্যান চলছে, SIR এর নামে মানুষকে ব্ল্যাকলিস্ট করে NRC করতে চায়।গুজরাতে বসে বাংলার মানুষের লিস্ট তৈরী করছে। রোহিঙ্গা বলে কোটি কোটি নাম বাদ দিচ্ছে, কোথা থেকে এলো এতো রোহিঙ্গা? ওদের এই অপদার্থ নীতির জন্য দেশ ভেঙে যাবে। এই সরকার ২০২৯ পর্যন্ত চলবে না। ক্ষমতায় না থাকলে কোথায় যাবেন জায়গাটা দেখে রেখেছেন তো? নির্বাচন কমিশনকে নিয়ন্ত্রণ করছে কেন্দ্র। সরকারে বসে বিজেপি এজেন্সি দিয়ে যা ইচ্ছে তাই করছে। অন্যদের বদনাম করে নিজেরা টাকা কামাচ্ছে, অন্যদের চোর বলছে। “
সবশেষে তিনি বলেন, “লড়াই হচ্ছে, লড়াই হবে। যারা বাইরে অত্যাচারিত হচ্ছেন, আমি বলবো তারা বাংলায় ফিরে আসুন। পুলিশের হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করুন, আমি আপনাদের ট্রেনে করে ফিরিয়ে আনবো, আপনাদের বাঁচার সুযোগ করে দেব। আমাদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই, আমরা সম্প্রীতি, সংহতি নিয়ে এক হয়ে চলি। দরকার হলে জীবন দেব, কিন্তু বাংলা ভাষা কেড়ে নিতে দেব না। এই ভাষা আমাদের সস্কৃতির মেরুদন্ড। ভাষার ওপর সন্ত্রাস মানছি না, মানব না।”