বিজেপিশাসিত ওড়িশায় ফের ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে পিটিয়ে খুন বাংলার পরিযায়ী শ্রমিক, প্রতিবাদে গর্জে উঠল তৃণমূল
Authored By:

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৭:২৫: ভিনরাজ্যে কাজে গিয়ে ফের নির্মম পরিণতির শিকার বাংলার পরিযায়ী শ্রমিক। বিজেপিশাসিত ওড়িশার সম্বলপুরে ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ সন্দেহে পিটিয়ে খুন করা হলো মুর্শিদাবাদের এক যুবককে। নিহতের নাম জুয়েল শেখ (৩০)। অভিযোগ, জনসমক্ষে নিজেদের মধ্যে বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণেই তাঁকে ‘বাংলাদেশি’ দেগে দিয়ে বেধড়ক মারধর করে একদল দুষ্কৃতী। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই বিজেপির (BJP) ‘বিদ্বেষমূলক রাজনীতি’র বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিয়েছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদের সুতি-১ নম্বর ব্লকের বাসিন্দা জুয়েল শেখ ও তাঁর কয়েকজন সঙ্গী দিন কয়েক আগেই রাজমিস্ত্রির কাজে ওড়িশার সম্বলপুরে গিয়েছিলেন। বুধবার রাতে কাজ শেষে একটি চায়ের দোকানে বসে জুয়েল, আরিক ও পলাশ নিজেদের মধ্যে বাংলায় কথা বলছিলেন। অভিযোগ, সেই সময় পাঁচজনের একটি দল সেখানে চড়াও হয় এবং তাঁদের ভাষা শুনেই ‘বাংলাদেশি’ বলে গালিগালাজ শুরু করে। আতঙ্কিত শ্রমিকরা নিজেদের ভারতীয় নাগরিকত্বের বৈধ পরিচয়পত্র দেখালেও দুষ্কৃতীরা তাতে কর্ণপাত করেনি। প্রাণের ভয়ে আরিক ও পলাশ কোনওরকমে পালিয়ে যেতে পারলেও জুয়েলকে ধরে ফেলে উন্মত্ত জনতা। রাস্তায় ফেলে তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁকে উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এই মর্মান্তিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক চাপানউতোর। ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই নিহত শ্রমিকের বাড়িতে পৌঁছান স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব ও পুলিশ প্রশাসন। রাজ্যের মন্ত্রী আখরুজ্জামান সরাসরি বিজেপি সরকারকে নিশানা করে বলেন, “ডবল ইঞ্জিন সরকারের রাজ্যে বাঙালি মুসলিমদের টার্গেট করা হচ্ছে। বিজেপি যে বাংলা-বিরোধী, এই ঘটনা তার জলজ্যান্ত প্রমাণ।”
কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠক করে বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দাগেন রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা (Shashi Panja)। তিনি বলেন, “আর কতদিন বাঙালিদের শাস্তি পেতে হবে শুধুমাত্র এই কারণে যে বাংলা বিজেপির কাছে মাথা নত করেনি? যারা পরিশ্রম করে খায়, নাগরিক অধিকার দাবি করে-তাদের অপরাধ কি শুধু বাংলা ভাষায় কথা বলা? বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে বারবার বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের নিশানা করা হচ্ছে, আর প্রতিবারই তাদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ তকমা দেওয়া হচ্ছে।”
তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ তথা পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম (Samirul Islam) জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) এই ঘটনায় অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। নিহতের দেহ এবং আহতদের দ্রুত রাজ্যে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সামিরুল ইসলাম বলেন, “বিজেপির দীর্ঘদিনের বাংলা-বিরোধী প্রচারের সরাসরি ফল এই হত্যাকাণ্ড। বিজেপি নেতারা সচেতনভাবে বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের অনুপ্রবেশকারী ও সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করে যে বিষাক্ত বয়ান তৈরি করেছেন, আজ তা রাস্তায় নেমে এসেছে।” সম্বলপুর থানার পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করলেও এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে খবর।