ছবিতে দেখুন: দিল্লির বুকে চলল বুলডোজার, জাহাঙ্গীরপুরী জুড়ে শুধুই ক্ষোভ-কান্না
হনুমান জয়ন্তীতে অশান্তির ঘটনার পর থেকে সবকিছু যেন এক লহমায় বদলে যেতে শুরু করল। হিন্দু হোক বা মুসলিম, সকলে মিলেমিশে ওই এলাকায় বাস করেন।

ফের চলল বুলডোজার। এবার রাজধানী দিল্লিতে। নেপথ্যে সেই বিজেপির অভিযোগ এবং তাদেরই পরিচালিত পুরসভার ‘অতিসক্রিয়তা’। আর তার জেরে বুধবার নতুন করে উত্তেজনা ছড়াল জাহাঙ্গিরপুরীতে। এদিন জাহাঙ্গিরপুরীর একাধিক দোকান এবং ‘বেআইনি’ নির্মাণ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিল বিজেপি পরিচালিত উত্তর দিল্লি পুরসভা (এনডিএমসি)। এমনকী, সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ জারির পরও তারা থামেনি। নির্দেশের নথি হাতে না আসার অজুহাতে দীর্ঘক্ষণ পুর আধিকারিকরা উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছেন বলে অভিযোগ।

গত শনিবার হনুমান জয়ন্তীর মিছিলে পাথর ছোড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়েছিল জাহাঙ্গিরপুরী। তারই পাল্টা কি এদিনের ‘বুলডোজার মডেল’? আপাতত এই প্রশ্নে রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে। হনুমান জয়ন্তীকে ঘিরে হিংসার ঘটনার পর কেটেছে মাত্র চারটে দিন। তার মধ্যেই বিজেপি অভিযোগ তুলেছে, হিংসায় অভিযুক্তদের মদতে বেআইনি নির্মাণের রমরমা গোটা এলাকায়।

বিজেপির ‘বুলডোজার রাজনীতি’র সূত্রপাত উত্তরপ্রদেশ থেকে। সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা ভোটের প্রচারে বিরোধীদের উপর বুলডোজার চালানোর হুমকি দিয়েছিলেন যোগী আদিত্যনাথ। নির্বাচনে জয়ের পর তাঁর নামই হয়ে গিয়েছে ‘বুলডোজার বাবা’। রামনবমীতে মধ্যপ্রদেশে হিংসার ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট এলাকায় অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে এই ‘যন্ত্রদানব’-এর সাহায্য নিয়েছিল সে রাজ্যের বিজেপি সরকার। এদিন সেই ছবি ফিরে এসেছে জাহাঙ্গিরপুরীতে।

বুধবার সকাল থেকে ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয় জাহাঙ্গীরপুরী এলাকার একটা বড় অংশ। দিল্লি পুলিসের স্পেশাল সিপি (ল’ অ্যান্ড অর্ডার) দীপেন্দ্র পাঠকের নেতৃত্বে বিশাল পুলিসবাহিনী হাজির হন ঘটনাস্থলে। ছিলেন আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানরা। এনডিএমসি-র মেয়র রাজা ইকবাল সিং সহ পুর আধিকারিকদের উপস্থিতিতে আসে পে লোডার এবং বুলডোজার। বাসিন্দাদের প্রবল বিক্ষোভের মধ্যেই শুরু হয় জবরদখল উচ্ছেদ অভিযান।

বেলা সওয়া ১১টা নাগাদ খবর আসে, এর বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। অভিযোগ, তারপরেও প্রায় দেড় ঘণ্টা উচ্ছেদ অভিযান চলে। স্থানীয় দোকানদার আশু, রাকেশ শর্মারা বলেন, ‘প্রায় ৩০ বছর ধরে আমরা এখানে ব্যবসা করছি। কেউ কখনও আমাদের ব্যবসাকে বেআইনি বলেনি।’ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী।

উচ্ছেদ অভিযান ঘিরে স্থানীয়রা ক্ষোভের সুরে বলেছেন, বছরের পর বছর ধরে এখানে আমরা সকলে বাস করছি। হনুমান জয়ন্তীতে অশান্তির ঘটনার পর থেকে সবকিছু যেন এক লহমায় বদলে যেতে শুরু করল। হিন্দু হোক বা মুসলিম, সকলে মিলেমিশে ওই এলাকায় বাস করেন। উচ্ছেদ অভিযান যে করা হবে, সে নিয়ে আগাম কোনও নোটিশ দেওয়া হয়নি কেন, এ প্রশ্নও তুলেছেন তাঁরা।
