‘ধর্মের আফিম’ই এখন ভরসা? ভোটের টানে ঠাকুরবাড়িতে সুজন-মীনাক্ষীর ‘মন্দির-দর্শন’

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২২:৩১: কার্ল মার্ক্স একদা বলেছিলেন, ‘ধর্ম হল আফিম’। কিন্তু ভারতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে সেই আফিমের নেশা কি এবার তথাকথিত বস্তুবাদী বামেদেরও পেয়ে বসল? অন্তত মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটায় যা ঘটল, তা দেখে রাজনৈতিক মহলে এই প্রশ্নই এখন জোরালো হয়ে উঠেছে। ভোটের অমোঘ টানে নীতি-আদর্শের বেড়া টপকে হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ মন্দিরে মাথা নোয়ালেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী (Sujan Chakraborty) ও মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় (Minakshi Mukherjee)।
সামনেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে মতুয়া গড়ে নিজেদের জমি শক্ত করতে মরিয়া সব পক্ষই। মতুয়া আবেগে শান দিতে ‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’ কর্মসূচিতে মঙ্গলবার গাইঘাটায় উপস্থিত হয় সিপিএম (CPM) নেতৃত্ব। আর সেখানেই দেখা গেল এক নজিরবিহীন দৃশ্য। যে বামেরা বরাবর নিজেকে ‘নিরীশ্বরবাদী’ বলে দাবি করে, সেই দলের শীর্ষ নেতাদের দেখা গেল ঠাকুরবাড়ির মন্দিরে শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রণাম করতে। শুধু তাই নয়, বনগাঁ শহরে সিপিএমের মিছিলে দলীয় পতাকার পাশাপাশি মতুয়া ভক্তদের ডঙ্কা-কাঁসি ও নিশান নিয়েও হাঁটতে দেখা যায়। বনগাঁ ১ নম্বর গেটে গুরুচাঁদ ঠাকুরের মূর্তিতে মাল্যদান করেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম (Md Salim)।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এসআইআর আবহে মতুয়া সমাজে যে ক্ষোভ বা ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে, তাকেই এবার রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগাতে চাইছে বামেরা। এতদিন ঠাকুরবাড়িকে কেন্দ্র করে তৃণমূল (TMC) ও বিজেপির (BJP) দড়ি টানাটানি দেখল রাজ্যবাসী, এবার সেই লড়াইয়ে কি তবে বামেরাও ভাগ বসাতে চাইছে?
ঠাকুরবাড়িতে (Thakurbari) দাঁড়িয়ে অবশ্য রাজনৈতিক কৌশলের কথা স্বীকার করেই সুজন চক্রবর্তী (Sujan Chakraborty) বলেন, ‘‘তৃণমূল মতুয়াদের ওপর দখলদারি নিতে চেয়েছিল। বিজেপি সেই দখলদারিতে ভাগ বসানোর চেষ্টা করে। আমরা সেই দখলদারি ভেঙে দেব।’’ অন্যদিকে মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘মতুয়ারা বাংলার শিল্প-সংস্কৃতির অঙ্গ। তৃণমূল ও বিজেপি মতুয়া ঠাকুরবাড়িকে ভাগ করেছে।’’ তবে এদিন কর্মীদের চাঙ্গা করতে গিয়ে কিছুটা মেজাজও দেখান সেলিম। দলীয় ক্যাডারদের উদ্দেশে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘ঝান্ডায় যে ডান্ডা আছে সেটা কঞ্চি হলে হবে না। মোটা ও মজবুত করতে হবে। তাতে তেল মাখালে-ই বাংলা বাঁচবে।’’
সব মিলিয়ে, ভোটের বাদ্যি বাজার আগেই মতুয়া গড় দখলে বামেদের এই নয়া অবতার রাজ্য রাজনীতিতে নতুন জল্পনার জন্ম দিল। এখন দেখার, ‘ধর্মের আফিম’ বর্জন করা কমরেডদের এই মন্দির-দর্শন ব্যালট বাক্সে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে।