বনগাঁয় পদ্ম শিবিরের ‘কাঁটা’ জনসঙ্ঘের প্রার্থীরা

গত লোকসভা ভোটে নাগরিকত্ব ইস্যুতে বনগাঁ কেন্দ্রে বাজিমাত করেছিল বিজেপি। বহু আকাঙ্খিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকর না হওয়ায় মতুয়াদের বড় অংশই বিজেপি’র উপর ক্ষিপ্ত। তার উপর প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পর দলীয় কোন্দল মাত্রাছাড়া পর্যায়ের পৌঁছয়।

April 13, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

ভোট যত এগিয়ে আসছে, বনগাঁ (Bangaon) মহকুমায় গেরুয়া শিবিরের চিন্তা ততই বাড়িয়ে চলেছেন জনসঙ্ঘ সমর্থিত নির্দল প্রার্থীরা। গেরুয়া শিবিরে নব্য বনাম আদি’র লড়াই এখন প্রকাশ্যেই চলে এসেছে। বিক্ষুব্ধ কর্মীদের ক্ষোভের আগুন চোরাস্রোত হয়ে বয়ে চলেছে নির্দল প্রার্থীদের দিকে। আর এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বিজেপি’র ভোট ম্যানেজাররা। দলের মিটিং-মিছিলে যাওয়া বহু নেতা-কর্মী তলে তলে যোগাযোগ রাখছেন নির্দল প্রার্থীদের সঙ্গে। এমনকী, তাঁদের হয়ে ভোটের নীল নকশাও সাজাচ্ছেন। আসলে সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের মনপসন্দ প্রার্থীদের হারাতে আদাজল খেয়ে নেমেছে দলের একাংশ। ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামা বিজেপি (BJP) নেতারা গদ্দার খুঁজতে গিয়ে নিজেরাই হতোদ্যম হয়ে পড়ছেন। যদিও সামনাসামনি বিজেপি নেতারা আত্মবিশ্বাসের হাসি ঝুলিয়ে বলছেন, এমন কোনও সমস্যা।

গত লোকসভা ভোটে নাগরিকত্ব ইস্যুতে বনগাঁ কেন্দ্রে বাজিমাত করেছিল বিজেপি। বহু আকাঙ্খিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকর না হওয়ায় মতুয়াদের বড় অংশই বিজেপি’র উপর ক্ষিপ্ত। তার উপর প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পর দলীয় কোন্দল মাত্রাছাড়া পর্যায়ের পৌঁছয়। সাংসদ শান্তনু ঠাকুর প্রভাব খাটিয়ে বিজেপি’র সঙ্গে সংস্রব না থাকা ও অস্বচ্ছ ব্যক্তিদের প্রার্থী করেছেন বলে আদি বিজেপি’র পুরনো নেতা-কর্মীদের অভিযোগ। দলের এই বিক্ষুব্ধ অংশ সর্বভারতীয় জনসঙ্ঘের সমর্থনে গাইঘাটায় বিশিষ্ট চিকিৎসক সজল বিশ্বাস, বনগাঁ উত্তরে আদি বিজেপি নেতা অরবিন্দ বিশ্বাস, বনগাঁ দক্ষিণে অলোক গাইন, বাগদায় শিশির সরকার ও হাবড়ায় কিশোর বিশ্বাসকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। এই নির্দল প্রার্থীদের সমর্থনে তাঁরা প্রচারেও নেমেছেন। ভোট যত সামনে আসছে, চোরাস্রোত ততই বাড়ছে। অনেকেই দিনে বিজেপি প্রার্থীর সঙ্গে প্রচারে গেলেও রাতে বৈঠক করছেন নির্দল প্রার্থীদের সঙ্গে। কেউ কেউ আবার টাকা-পয়সা দিয়েও নির্দল প্রার্থীদের সহযোগিতা করছেন।

গাইঘাটার নির্দল প্রার্থী সজল বিশ্বাস এলাকায় সর্বজনগ্রাহ্য ডাক্তারবাবু। রাতভর তাঁর সঙ্গে বৈঠক করছেন বিজেপি’র ছোট-বড় বহু নেতা। সজলবাবু বলেন, গাইঘাটায় পরিবারতন্ত্র চলছে। পরিবার বড়, নাকি পার্টি বড়—তা প্রমাণ করার প্রয়োজন রয়েছে। অর্থের বিনিময়ে প্রার্থীপদ বিক্রি হয়েছে এখানে। এর জবাব ব্যালটে দেওয়ার জন্য প্রচার চালাচ্ছি। মানুষের সাড়া দেখে আমি উচ্ছ্বসিত।

বনগাঁ উত্তরের নির্দল প্রার্থী অরবিন্দ বিশ্বাস প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রয়াত তপন শিকদারের আপ্ত সহায়ক ছিলেন। গাইঘাটা ও বাগদা থেকে তিনবার তিনি বিজেপি’র টিকিটে বিধানসভা ভোটে লড়েছেন। অরবিন্দবাবু বলেন, ১৯৮৬ সাল থেকে সিপিএমের সঙ্গে লড়াই করে আমরা এই জায়গায় বিজেপিকে এনেছিলাম। আজ উড়ে এসে জুড়ে বসা শান্তনু বনগাঁর অঘোষিত মালিক হয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধেই আমাদের লড়াই। বনগাঁ দক্ষিণের নির্দল প্রার্থী পেশায় ব্যবসায়ী অলোক গাইন বলেন, বিজেপি’র হয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। আজ বাধ্য হয়েই নির্দল প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়েছি। যেভাবে মানুষ সাড়া দিচ্ছেন, তাতে আমি অভিভূত। বাগদার নির্দল প্রার্থী তথা কবিয়াল শিশির সরকার প্রচারে বেরিয়ে গান ধরছেন। তিনি বলেন, বিজেপি সমর্থকরা এবার দল বেঁধে আমায় ভোট দেবে। হাবড়া কেন্দ্রের নির্দল প্রার্থী কিশোর বিশ্বাস বিজেপি’র এসসি মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির আমন্ত্রিত সদস্য। দীর্ঘদিনের পোড় খাওয়া কিশোরবাবু ক্ষোভের কারণেই এবার নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে আলোড়ন ফেলেছেন হাবড়ায়। দিনরাত প্রচার চালানো কিশোরবাবু বলেছেন, প্রচুর হুমকি পাচ্ছি। কর্মীদের গোপনেই কাজ করতে হচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বী রাহুল সিনহা একাদশতম পরাজয় স্বীকার করার প্রহর গুনছেন। দলের নির্দল প্রার্থীদের বিষয়ে বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি মানসপতি দেব বলেন, সোনার বাংলা গড়ার মহাযুদ্ধে আমাদের নেতা নরেন্দ্র মোদী। তাঁকে দেখেই বিজেপিকে ভোট দেবেন মানুষ। যাঁরা দলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen