অজয় নদের তীরে বাউলের সুরে মুখরিত জয়দেব মেলা
মকর সংক্রান্তির পুণ্যস্নানের আগেই পুণ্যার্থীদের সুবিধার জন্য খুলে দেওয়া হল বীরভূমের জয়দেব কেঁদুলির মেলা।

মকর সংক্রান্তির পুণ্যস্নানের আগেই পুণ্যার্থীদের সুবিধার জন্য খুলে দেওয়া হল বীরভূমের জয়দেব কেঁদুলির মেলা। এবার নির্মল জয়দেব মেলা ঘোষণার পাশাপাশি স্বচ্ছতার দিকেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মেলা চলবে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। অজয় নদের বুকে কীর্তনের আখড়াগুলিতে ভিড় জমতে শুরু করেছে।
পৌষ সংক্রান্তির পুণ্যস্নান উপলক্ষে কবি জয়দেবের তিরোধান দিবসকে সামনে রেখে এই মেলার সূচনা করেন নিম্বার্ক সম্প্রদায়ের মহন্তরা। প্রায় ৯০০ বছর পূর্বের এক কবিকে নিয়ে ঐতিহ্যবাহী এই মেলা আজও সমান জনপ্রিয়। এই মেলা এখন ‘বাউল মেলা’ হিসেবে পরিচিত। এই মেলা বীরভূমের সবচেয়ে বড় এবং প্রাচীন মেলা। বর্তমান জয়দেব মন্দিরটি কবির আবাসস্থলে বর্ধমানের মহারাজ কীর্তিচাঁদ বাহাদুর ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করেন। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ এখন তা সংরক্ষণ করছে। বৈষ্ণব কবি জয়দেবের তিরোধান দিবস উপলক্ষে এই মিলন মেলার সূচনা।
মেলার নিরাপত্তায় বসানো হয়েছে কুড়িটিরও বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা। নজরদারি চালানোর জন্য ১১টি ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে ৯০ জন অফিসার, ২৫০ জন কনস্টেবল, ১৪৫০ মতো সিভিক ভলান্টিয়ারকে। মেলায় ইভটিজিং সহ নানা অপরাধ আটকাতে চারটি অ্যান্টি ক্রাইম টিম ও সাদা পোশাকের পুলিশের বিশেষ দলকে রাখা হয়েছে। মোটর সাইকেল ও মোবাইল ভ্যান থাকছে। পুলিশের পক্ষ থেকে ১৭টি পুলিশ সহায়তা কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
মেলায় সাধুদের ২৫০টি আখড়া বসেছে। ৫০০টিরও বেশি স্টল বসানো হয়েছে। বুধবার মকরের পুণ্যস্নানের জন্য নদীর তিনটি ঘাট তৈরি করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের তরফে। স্নান করতে এসে যাতে কোনও ভাবেই দুর্ঘটনা না ঘটে, তার জন্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী মোতায়েন থাকছে। ৬ জন ডুবুরি রাখা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৬০০টিরও বেশি অস্থায়ী শৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে। তৈরি রাখা হয়েছে ২০০ জন সাফাই কর্মীকেও।
বাতাস যেন বাউল সুরে মুখরিত। আখড়ায় আখড়ায় চলছে বাউল আর কীর্তন গান। সব মিলিয়ে এখন কনকনে শীতে খোলা আকাশের নীচে রাত কাটিয়ে পুণ্যস্নানের আনন্দে সব কষ্ট উধাও।