শৈশবে RSS শাখায় লাগাতার যৌন হেনস্থা, অবসাদে আত্মহত্যা করলেন কেরলের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার

October 12, 2025 | 2 min read
Published by: Ritam

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১০:৪৭: কেরলের ত্রিভান্দ্রামের থাম্পানূরে এক লজ থেকে ২৬ বছর বয়সি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার আনন্দু আজির (Anandu Aji) ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে বৃহস্পতিবার। প্রাথমিকভাবে পুলিশ এটিকে আত্মহত্যা বলে মনে করছে। কোট্টায়ম জেলার থাম্বলাকাডের বাসিন্দা আনন্দু দীর্ঘদিন ধরে গভীর মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন বলে জানা গিয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সেই মানসিক যন্ত্রণা ও হতাশার মূল কারণ হিসেবে তিনি নিজেই দায়ী করেছেন সঙ্ঘ পরিবারের মূল সংগঠন আরএসএসকে (RSS)।

 

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় থাম্পানূরের একটি লজের ঘরে আনন্দুর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান কর্মচারীরা। পরে পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগে আনন্দুর ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল থেকে একটি নির্ধারিত সময়ের পোস্ট প্রকাশ্যে আসে। সেখানে তিনি নিজের আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত ও তার কারণ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন।

 

পোস্টে আনন্দু লিখেছেন, “আমি কোনো প্রেমঘটিত ব্যর্থতা, ঋণ বা অন্য কোনো কারণে আত্মহত্যা করছি না। আমি করছি কারণ আমি মারাত্মক অবসাদে ভুগছি। ওষুধের কারণে কাজেও মন দিতে পারছি না।” তিনি জানান, ছোটবেলায় সঙ্ঘ পরিবারের সদস্যদের হাতে যে যৌন ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন, তার ফলেই সারাজীবনের জন্য মানসিক যন্ত্রণা ও মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি।

 

 

 

আনন্দুর কথায়, “আমি রাগ করি না কারও ওপর, শুধু একজন ব্যক্তি ও একটি সংগঠনের ওপর করি। সংগঠনটি আরএসএস, যেখানে আমার বাবা আমাকে পাঠিয়েছিলেন। সেখানেই আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা, একের পর এক নির্যাতন।”

 

নিজেকে “ধর্ষণের শিকার” বলে বর্ণনা করে আনন্দু লিখেছেন, “আমি শিশুকালে একাধিকবার যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছি। অনেকের মুখ মনে নেই, কিন্তু আমি প্রকাশ করব সেই ব্যক্তির নাম, যিনি আমাকে ৩-৪ বছর বয়সে নির্যাতন করেছিলেন।”

 

তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর প্রতিবেশী ও পরিচিত এক ব্যক্তি, যার নামের আদ্যক্ষর NM, এবং যিনি আরএসএস ও বিজেপির সক্রিয় সদস্য, দীর্ঘদিন ধরে তাঁকে যৌন নির্যাতন করেছেন। আনন্দু বলেন, “সে আমাকে ভাইয়ের মতো মনে করত, আমিও তাকে বিশ্বাস করতাম। কিন্তু আমি ছিলাম তার কাছে কেবলমাত্র এক যৌন খেলনা। পরে যখন ওসিডি রোগ ধরা পড়ে, তখনই বুঝতে পারি এই নির্যাতনের ভয়াবহ প্রভাব আমার মনে ও শরীরে কতটা গভীর।”

 

আনন্দু আরও জানিয়েছেন, আরএসএস-এর আইটিসি ও ওটিসি (OTC) শিবিরগুলিতেও তাঁকে একাধিকবার যৌন ও শারীরিক নির্যাতনের মুখে পড়তে হয়েছিল। “ওরা কোনো কারণ ছাড়াই লাঠি দিয়ে মারত। সেই অভিজ্ঞতা আজও আমার মনে দগদগে ক্ষত হয়ে আছে,” লিখেছেন তিনি।

 

আরএসএসকে তিনি ‘নির্যাতনের আশ্রয়স্থল’ বলে উল্লেখ করেছেন। সতর্ক করেছেন, এই সংগঠনের সদস্যদের কাছ থেকে দূরে থাকতে। তাঁর দাবি, আরও অনেক শিশু আরএসএস ক্যাম্পে একইরকম নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

 

https://www.instagram.com/p/DPlqrW_EYjU/?igsh=MWFwczZpaGJoazZxeA==

 

১৫ পাতার আত্মহত্যার চিঠিতে আনন্দু আরও লিখেছেন, সম্প্রতি কিছু মানুষ, এমনকি ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাও তাঁর প্রতি বিরূপ আচরণ করতে শুরু করেছিলেন। তিনি মনে করেন, হয়তো বিজেপি ও আরএসএসের সমালোচনা করার জন্যই তাঁকে এভাবে দূরে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

 

আনন্দুর মৃত্যু এখন কেরলজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। তাঁর আত্মহত্যার চিঠি ও সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ঘিরে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই দাবি করছেন, অভিযোগগুলির পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ তদন্ত হোক এবং দোষীদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হোক।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen