নাগরাকাটায় বন্যা পরিস্থিতি দেখতে গিয়ে আক্রান্ত খগেন-শঙ্কর, নেপথ্যে শাসক দল নাকি BJP-র কোন্দল?

October 7, 2025 | 2 min read
Published by: Ritam

 

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১১:৫০: শনিবার রাতভর বৃষ্টির জেরে দার্জিলিঙের বিভিন্ন এলাকায় ধস নামে। জলমগ্ন হয়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয় ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। সোমবার নাগরাকাটায় বিপর্যস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে আক্রান্ত হন বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু এবং বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। রীতিমতো রক্তাক্ত কাণ্ড হয়। এ ঘটনায় বাংলার শাসক দলকে কাঠগড়ায় তুলেছে বিজেপি। তৃণমূলের দাবি, এর সঙ্গে তাদের দলের কারও যোগ নেই। জনরোষে মুখে পড়ে আক্রান্ত হয়েছেন দুই গেরুয়া নেতা। তৃণমূলের দিকে আঙুল তোলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। সমাজ মাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে বন্যা ও ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সেবা করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এটি তৃণমূল কংগ্রেসের অসংবেদনশীলতা এবং রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার করুণ রূপের স্পষ্ট প্রতিফলন।’ খগেন-শঙ্করের উপর হামলার ঘটনায় রাজ্য ও শাসকদলের নাম জড়ানোর নিন্দা করে পাল্টা পোস্ট করেন মুখ্যমন্ত্রীও। সোমবার হামলার পর পরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্ররোচনায় পা না দিয়ে সংযত ও শান্ত থাকার বার্তা দেন।

নানা মহল থেকে প্রশ্ন উঠছে, বিজেপি জনপ্রতিনিধিদের আক্রান্ত হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে কারা? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিজেপির অন্তর্কলহের তত্ত্বও! নাগরাকাটা বিধানসভা বিজেপির দখলে রয়েছে। ২০২১ সালে বিজেপির টিকিটে নাগরাকাটা থেকে জয়ী হন পুনা ভেংরা। রাজনৈতিকভাবে নাগরাকাটায় বিজেপি বেশ শক্তিশালি। তেমন একটি এলাকায় খোদ বিজেপির সাংসদ ও বিধায়কের উপর তৃণমূল কর্মীরা চড়াও হবেন? এখানেই বাড়ছে সন্দেহ!

 

সোমবার নাগারকাটায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যও হাজির ছিলেন। নাগরাকাটার বামনহাটায় গিয়েছিলেন বিজেপি নেতা শমীক, দীপক, খগেন, শঙ্কর এবং জলপাইগুড়ির বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত রায়। বামনহাটার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের পর শমীক, দীপক এবং জয়ন্ত একটি নৌকায় করে নদীর ওপারের আর একটি গ্রামে যাচ্ছিলেন। পরের নৌকায় যাওয়ার কথা ছিল খগেন এবং শঙ্করের। সেই সময়েই তাঁদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। এখানেই প্রশ্ন, তবে কি হামলাকারীরা শমীক, দীপক এবং জয়ন্তদের চলে যাওয়ার অপেক্ষা করছিলেন? তবে কি গোষ্ঠী কোন্দলের জেরেই আক্রান্ত হলেন খগেন ও শঙ্কর।

খগেন, শঙ্করের হামলাকারীদের পরিচয় প্রকাশ্যে এনে বিরোধী দলনেতা দাবি করেছেন তৃণমূলের গুন্ডা বাহিনী হামলা চালিয়েছে। কয়েকজন সংখ্যালঘুর নাম দিয়েছেন শুভেন্দু। যার প্রেক্ষিতের মন্ত্রী উদয়ন গুহের অভিযোগ, বিজেপি হিন্দু-মুসলমান গন্ডগোল বাঁধানোর চেষ্টা করছে।

খগেন, শঙ্করের উপর হামলার ঘটনায় গর্জে উঠেছে সিপিআইএম। আক্রান্ত দু’জনই প্রাক্তন সিপিআইএম নেতা।সোমবার সিপিআইএমের রাজ্য দপ্তরে সাংবাদিক বৈঠক করেন দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, ‘‘অ-আরএসএস বিজেপির জনপ্রতিনিধিরা মার খেয়েছেন। কারা মারল? তৃণমূলের সঙ্গে থাকা আরএসএস? নাকি বিজেপির আরএসএস?’’ কেন বেছে বেছে এই দু’জনের উপরেই হামলা হল তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সেলিম।

 

 

উল্লেখ্য, সিপিআইএমের মালদহ জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং কৃষক সভার নেতা ছিলেন খগেন। সিপিআইএমের টিকিটে জিতেছিলেন হবিবপুর বিধানসভা থেকে। অন্যদিকে, শঙ্করের উত্থান ডিওয়াইএফআই থেকে। রাজ্যের প্রাক্তন পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী বামনেতা অশোক ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ ছিলেন শঙ্কর। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে খগেন যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। টানা দু’বার বিজেপির টিকিটে জিতে মালদহ উত্তর থেকে সাংসদ হন খগেন। শঙ্কর বিজেপিতে যোগ দেন ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগেও। গুরু অশোককে হারিয়েই বিধানসভায় গিয়েছেন তিনি। ফলে এরা আদি বিজেপি নন। কাজেই সোমবারের ঘটনা দলবদলু বিজেপি নেতাদের উপর আদি শিবিরের আক্রমণও হতে পারে।

অন্যদিকে, শোনা যাচ্ছে বেশ কয়েকজন বিজেপি সাংসদ তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন। যাঁদের নামে দলবদলের জল্পনা চলছে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম খগেন মুর্মু। ফলে এ হামলা বিজেপি কর্মীদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশও হতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ফলো করুন :

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen