কলকাতা ভারতের সমস্ত প্রান্তের মানুষজনকে স্বাগত জানায়, লিখলেন ঝুম্পা লাহিড়ী

কিছু শৃঙ্খল মুক্ত করে দিন, বা সুতো ছিঁড়ে ফেলুন, এবং তাতেই কথোপকথন হারিয়ে যাবে; চাপিয়ে দেওয়া নীরবতা, জাতিসত্ত্বার সাধারণ এবং বাজে ধারণা নিয়ে বসে থাকা একটি ছন্নছাড়া সমাজ আমাদের জন্যে পড়ে রয়েছে।

August 17, 2022 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

(ইংরেজিতে এই লেখাটি প্রথম প্রকাশ পায় ১৫ আগস্ট, ২০২২-এ pen.org আয়োজিত India at 75-এর অন্তর্গত অন্যতম রচনা হিসেবে। পাঠকদের সুবিধার্থে লেখাটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করা হয়েছে )

আমি ভারতের বাইরে জন্মেছি এবং ভারতের বাইরেই বড় হয়েছি; সেই কারণেই অদেখা ভারত আমার মনে আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ জায়গা করে নিয়েছিল।

আমি বাবা-মায়ের কাছে বেড়ে উঠেছি। দেশের বাইরে থাকায় আমার বাবা-মা সব সময় অন্যান্য ভারতীয়দের সংস্পর্শে আসার চেষ্টা করত এবং আমার ধারণা হয়েছিল যে ভারতীয়রা সর্বদাই বৈচিত্র্যময়। আমি বড় হয়েছি আমাদের রোড আইল্যান্ডের ছোট বাড়িতে। সেখানে আমাদের সেই বাড়িতে আমার বাবা-মা যখন বিভিন্ন ভারতীয় পরিবারকে আমন্ত্রণ জানাত, আমি উপলব্ধি করতাম যে, ভারতবর্ষ বিভিন্ন ধরণের মানুষের এক নমনীয় পাত্র, যেখানে মানুষেরা ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলে, যাদের খাদ্যরুচি আলাদা, পোশাক আলাদা এবং প্রার্থনার ধরণ আলাদা। এই বৈচিত্রগুলো ভারতকে সমৃদ্ধ করেনি; বরং এই বৈচিত্রগুলোই হল ভারত।

সেই অর্থে মনে হয়েছিল, ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থেকে কয়েক আলোকবর্ষ এগিয়ে। অন্তত আমার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তাই মনে হয়েছিল, কারণ আমেরিকায় নামেই সকলে এক সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে মিলেমিশে থাকে, কিন্তু বাস্তবে সবাই বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং প্রাদেশিকতায় পরিপূর্ণ।

আমার মা কলকাতার উদাহরণ দিয়ে বলতেন এত এমন এক শহর যা ভারতের সমস্ত প্রান্তের মানুষজনকে স্বাগত জানায়। এই শহর আমার সেই ধারণা নিশ্চিত করেছে যে, ‘অন্য’কে আপন করে নেওয়ার গুণ ভারতের কাঠামোর মধ্যেই নিহিত।

ভারতের বহুভাষিক দিক আমাকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিতও করছে আবার সান্ত্বনাও দিয়েছে, কারণ এটি কথোপকথনে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং অনুবাদের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে। একাধিক ভাষার সহাবস্থান কৌতূহলের জন্ম দেয়, ব্যাখ্যার প্রয়োজন এসে পড়ে এবং অসীম ক্ষমতার যেকোনও ধারণাকে ধ্বংস করে দেয়। কিছু শৃঙ্খল মুক্ত করে দিন, বা সুতো ছিঁড়ে ফেলুন, এবং তাতেই কথোপকথন হারিয়ে যাবে; চাপিয়ে দেওয়া নীরবতা, জাতিসত্ত্বার সাধারণ এবং বাজে ধারণা নিয়ে বসে থাকা একটি ছন্নছাড়া সমাজ আমাদের জন্যে পড়ে রয়েছে।

লেখক পরিচিতি

(ঝুম্পা লাহিড়ীর জন্ম লন্ডনে, আমেরিকায় বাবা-মার কাছেই তাঁর বেড়ে ওঠা। নিজের প্রথম ছোট গল্প সংকলন ‘ইন্টারপ্রিটার অফ ম্যালডিস’-এর জন্যে তিনি পুলিৎজার পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। এছাড়াও তিনটি উপন্যাস ও দুটি ছোট গল্প সংকলন রয়েছে তাঁর। তিনি ইংরেজি ও ইতালিয় ভাষায় লেখেন)

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen