চলতে চলতে ৪০: কলকাতার হলুদ ট্যাক্সি ফিরছে স্মৃতির সাজে, চলমান শিল্পকর্ম হয়ে

September 10, 2025 | 3 min read
Published by: Drishti Bhongi

 

 

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২১:০০: কলকাতার হলুদ ট্যাক্সি শুধু একটি যানবাহন নয়, বহু মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক আবেগের নাম। প্যান্ডেল হপিং, অফিস যাত্রা, প্রেমের প্রথম দেখা – সবকিছুর সঙ্গেই যেন জড়িয়ে আছে এই ট্যাক্সির গল্প। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই চেনা ট্যাক্সিগুলি হারিয়ে যেতে বসেছে। শহরের রাস্তায় তাদের সংখ্যা কমছে, আর সেই হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় মন খারাপ অনেকেরই।

তবে এবার সেই মনখারাপের মাঝেই এল এক খুশির খবর। বিদায়ের বদলে ফিরছে হলুদ ট্যাক্সি- তাও একেবারে নতুন রূপে, নতুন সাজে। এশিয়ান পেইন্টসের ‘চলতে চলতে ৪০’ প্রকল্পে শহরের ৪০টি হলুদ ট্যাক্সি হয়ে উঠেছে চলমান শিল্পকর্ম। প্রতিটি গাড়ি বলছে একেক দশকের গল্প- দুর্গাপুজোর রূপান্তর, শহরের সংস্কৃতি, মানুষের স্মৃতি।

২০২৫ সালে এশিয়ান পেইন্টস শরদ সম্মান পুরস্কারের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে শুরু হয়েছে অভিনব প্রকল্প ‘চলতে চলতে ৪০’, যেখানে ৪০টি হলুদ ট্যাক্সিকে রূপ দেওয়া হয়েছে শহরের চার দশকের সাংস্কৃতিক স্মৃতির চলমান শিল্পকর্ম হিসেবে।

 

প্রতিটি ট্যাক্সির গায়ে আঁকা হয়েছে একেক দশকের পুজোর রূপান্তর, শিল্প, সমাজ ও স্মৃতির গল্প। ২২টি ট্যাক্সি ইতিমধ্যেই কলকাতার রাস্তায় চলছে সাধারণ ট্যাক্সির মতোই, বাকি ১৮টি ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাস্তায় নামবে। ১১ সেপ্টেম্বর থেকে শহরের সর্বত্র চলবে এই চলমান প্রদর্শনী।

 

চার দশকের শিল্পভাষা

১৯৮৫-১৯৯৫: শিল্পী বিক্রমজিৎ পালের চিত্রে দেখা যায় এক প্রবীণ শিল্পী মা দুর্গার মুখ গড়ছেন, সঙ্গে ধাকি, রিকশা, আলপনা ও শরদ সম্মানের প্রথম বিজ্ঞাপন।

১৯৯৫- ২০০৫: মীনাক্ষী সেনগুপ্তের শিল্পে ফুটে উঠেছে চন্দননগরের এলইডি আলো, লাল-সাদা শাড়ির মা দুর্গা, ট্রাম, রোলের দোকান ও বেলুন বিক্রেতা।

২০০৫- ২০১৫: সায়ন মুখোপাধ্যায়ের চিত্রে মা দুর্গার বিদ্রোহী চুল, নারী ক্ষমতায়নের বার্তা, প্রবাসীদের স্বাগত ও শ্রেষ্ঠ প্রতিমাশিল্পীর সম্মান।

২০১৫- ২০২৪: সৃষ্টি গুপ্তরায়ের শিল্পে উঠে এসেছে ডিজিটাল যুগের পুজো-ইনস্টাগ্রাম, VR হেডসেট, সেলফি তোলা দর্শনার্থী ও UNESCO-র স্বীকৃতি।

 

ট্যাক্সিগুলির ভিতরের সাজসজ্জায় ব্যবহৃত হয়েছে সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়ের Paris X Calcutta সংগ্রহের টেক্সটাইল – যেখানে মুঘল বাগান, কাশ্মীরি জামদানি, চৌরঙ্গীর ফুলের পথ, রাজবাড়ির গালিচা ও কোম্পানি স্কুলের শিল্পের ছাপ রয়েছে।

 

Asian Paints-এর MD ও CEO অমিত সিংগল বলেন, “প্যান্ডেল দর্শন, কুমারটুলির শিল্পী, বিচারক-সবাই একসময় হলুদ ট্যাক্সিতে যাতায়াত করতেন। তাই এই ট্যাক্সিগুলিকে শহরের চলমান প্রতীক হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।”

 

এই ট্যাক্সিগুলি আর শুধু যাত্রী বহন করে না, শহরের প্রতিটি অলিগলিতে নিয়ে আসে যেন এক চলমান প্রদর্শনী। কলকাতা তার স্মৃতি ধরে রাখে, আর সেই স্মৃতির বাহক হয়ে উঠেছে এই হলুদ ট্যাক্সিগুলি – যারা চলতে চলতে বলে যায় পুজোর গল্প, শহরের গল্প, আমাদের গল্প। হলুদ রঙের গায়ে আঁকা ইতিহাস, অভ্যন্তরে সাব্যসাচীর টেক্সটাইল, আর চলতে চলতে শহরের অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়া স্মৃতির ছোঁয়া- সব মিলিয়ে এই ট্যাক্সিগুলি হয়ে উঠেছে কলকাতার চলমান সময়রেখা।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen