শান্তিপুরের রায়বাড়িতে ৫০০ বছরের পুজোতে একাকি পূজিত হন ‘কুলোদেবী’

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ০৯:৪০: গ্রামবাংলার দুর্গাপুজো মানেই দেবী দুর্গা তাঁর চার সন্তান-লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ ও কার্তিকের সঙ্গে পূজিত। কিন্তু নৈপুণ্যের শহর শান্তিপুরে রয়েছে একেবারে ব্যতিক্রমী রীতি। রায়বাড়ির ঠাকুরদালানে দুর্গা পূজিত হন একা। নেই কারও উপস্থিতি। গত পাঁচশো বছর ধরে চলে আসছে এই অনন্য পুজো, যা স্থানীয়দের কাছে পরিচিত ‘কুলোদেবী’ নামে।
রায় পরিবার আদতে হুগলির চুঁচুড়ার বাসিন্দা। পরিবারের কর্তা গৌরহরি ঠাকুর অর্থকষ্টে জর্জরিত ছিলেন। কাহিনি মতে, একদিন গৃহদেবতার পুজোর সময়ে এক তৃষার্ত নারী তাঁর কাছে জল চান। গৌরহরি তাঁকে গঙ্গাজল ও নাড়ু দেন। রাতে স্বপ্নাদেশ পান-সেই নারী আসলে দেবী দুর্গা, যিনি পুজো শুরু করার নির্দেশ দেন।
অর্থের অভাবে প্রথমে কুলোর উপর দুর্গার ছবি এঁকে পুজো শুরু হয়। সেখান থেকেই নাম হয় ‘কুলোদেবী’। পরবর্তীতে প্রতিমা প্রতিষ্ঠিত হয়। মুঘলদের অত্যাচারে রায় পরিবার চুঁচুড়া ছেড়ে শান্তিপুরে আশ্রয় নেয়। সেখানেই এই পুজো ধীরে ধীরে রূপ নেয় এক বৃহৎ আচার-অনুষ্ঠানে।
রীতি ও প্রথা অনুসারে, রায়বাড়ির পুজোয় আজও বজায় রয়েছে কিছু বিশেষ রীতি।পূজার আগে ভাজা হয় আনন্দ নাড়ু। নবমীতে মাকে মাছের প্রসাদ দেওয়া হয়। এককালে পশুবলির প্রথা থাকলেও এখন শুধু আঁখ ও কুমড়ো বলি দেওয়া হয়। দশমীর দিন দেবীকে পায়েস মেখে বিদায় জানানো হয়।
যেখানে বাংলার সর্বত্র দুর্গা সন্তানসমেত পূজিত, সেখানে শান্তিপুরের রায়বাড়ির এই প্রাচীন ঐতিহ্য আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, দেবী এখানে মাতৃস্বরূপ শক্তির প্রতীক হিসেবে পূজিত হন। আর সেই শক্তি-উৎসবেই একাকি মায়ের মহিমা ধরা দেয় পূর্ণতায়।