অনলাইনে জ্ঞানের ঘাটতি, সমীক্ষায় মিলল চাঞ্চল্যকর তথ্য

তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াদের মধ্যে করা একই পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সম্পূর্ণ বাক্যটি স্বাছন্দ্যে পড়তে পারছে গ্রামের মাত্র ২৬% এবং শহরের মাত্র ৩১% পড়ুয়া।

September 9, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

‘করোনাজনিত লকডাউনের কারণে শিক্ষাক্ষেত্র এবং পাঠ্যক্রম থেকে দীর্ঘকাল বিচ্ছিন্ন অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী। প্রাথমিক স্তরে শিশুদের সার্বিক অক্ষরজ্ঞান ও একটি সম্পূর্ণ বাক্য পড়তে ও লিখতে পারার ক্ষেত্রে যথেষ্ট অবনতি ঘটেছে। ১২ শব্দের একটি সহজ বাক্য পড়তে পারার পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়াদের মধ্যে গ্রাম ও শহরের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ৭৭% ও ৬৫% ছাত্রছাত্রী কয়েকটি অক্ষরের বেশি পড়তেই পারছে না। উল্লেখ্য, এই পড়ুয়ারা গত বছর প্রথম শ্রেণিতে ভরতি হয়েছিল এবং লকডাউনের মধ্যেই তারা দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে।

তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াদের মধ্যে করা একই পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সম্পূর্ণ বাক্যটি স্বাছন্দ্যে পড়তে পারছে গ্রামের মাত্র ২৬% এবং শহরের মাত্র ৩১% পড়ুয়া। এক পাশাপাশি দেখা গিয়েছে তৃতীয় শ্রেণিতে শুধুমাত্র বিয়োগ করতে পারে এরকম পড়ুয়ার সংখ্যা ২০২০ সালের শেষে কমে দাঁড়িয়েছে ১৭.৩ শতাংশে। ১৭ মাসের মতো বেশি সময় ধরে বিদ্যালয়গুলি টানা বন্ধ।

এর ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের আর্থ–সামাজিকভাবে দুর্বল পরিবারগুলি থেকে আসা পড়ুয়ারা এবং বিশেষত শিশুরা শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং শিক্ষাব্যবস্থা থেকেই বাদ পড়ছে’ –এমনই চিত্র উঠে এল “স্কুল চিলড্রেন্স অনলাইন অ্যান্ড অফলাইন লার্নিং (স্কুল)” শীর্ষক একটি সমীক্ষায়। প্রায় ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবক, অর্থনীতিবিদ জ্যঁ দ্রেজ–সহ ৪ জনের একটি দলের মাধ্যমে সংগঠিত হয়েছে এই সমীক্ষাটি।

সম্প্রতি ১৫টি রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় ও শহরের বিভিন্ন বসতি অঞ্চলের সরকারি স্কুলের প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্তরের প্রায় ১৪০০ জন পড়ুয়াদের নিয়ে করা এই সমীক্ষার “লকড আউটঃ এমার্জেন্সি রেসপন্স অন স্কুল এডুকেশন” নামক রিপোর্টে উঠে এসেছে এই সমস্ত তথ্য। বেসরকারি উদ্যোগে করা এই সমীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে তর্ক থাকবে।

সরকারের সঙ্গে তথ্যেরও ফারাক দেখা দিতে পারে ভবিষ্যতে। তবে, “প্রাথমিকভাবে লকডাউন পর্যায় দেশ জুড়ে করা এই সমীক্ষা হাতেগরম কয়েকটি তথ্য হাজির করেছে মানুষের সামনে, যা দেখে অন্তত কিছুটা আন্দাজ মিলছে বাস্তব পরিস্থিতির”– একাধিক শিক্ষাবিদ এই কথা জানিয়েছেন।

সমীক্ষার রিপোর্টে উঠে এসেছে, দেশের গ্রামীণ এলাকায় মাত্র ৮% পড়ুয়া নিয়মিত অনলাইন পঠন-পাঠনের (Online Class) সঙ্গে যুক্ত এবং শহরে এই সংখ্যাটি প্রায় ২৪% শতাংশের কাছাকাছি। লকডাউনে কর্মহীন অবস্থায় আর্থসামাজিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির পক্ষে অসম্ভব হয়ে উঠেছে পড়ুয়াপিছু একটি স্মার্টফোন অথবা নিয়মিত ‘ডেটা প্যাকেজের’ জোগান দেওয়া।

শিক্ষাঙ্গনে এই পর্বে সামাজিক-অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল পরিবারের শিশুদের পিছিয়ে পড়ার বিষয়টি তিনটি ধাপের মধ্য দিয়ে ক্রমবর্ধমান হয়ে উঠছে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে রিপোর্টটিতে – ১) লকডাউনের আগে থেকেই বিদ্যমান ফারাক, ২)লকডাউনের মধ্যে পড়তে শেখা, লিখতে শেখা ইত্যাদি জ্ঞানের ঘাটতি হওয়া এবং ৩)শিক্ষার কোনরকম অগ্রগতি ছাড়াই উচ্চতর শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়া। এই সমীক্ষাটির রিপোর্ট ঘিরে আলোচনা চলছে।

সমর্থন যেমন রয়েছে তেমনই অনেকে এই তথ্য পুরোপুরি স্বীকার করতে চাইছেন না বলে জানা গিয়েছে। তবে সার্বিকভাবে শহরাঞ্চল বাদ দিলে গ্রামের পড়ুয়াদের শিক্ষাদান পর্ব যে এই লকডাউনে যথেষ্ট ব্যহত হয়েছে, তা ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে বলে মত অধিকাংশ শিক্ষাবিদের।

লকডাউনে শিক্ষাঙ্গন বন্ধ থাকার বিপুল প্রভাব পড়েছে স্বাক্ষরতার হারের উপর। ২০১১ এর জনগণনা অনুযায়ী দেশবাসীর স্বাক্ষরতার হার ছিল ৯১ শতাংশ। এই সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে গ্রামের ক্ষেত্রে তা নেমে এসেছে ৬৬ শতাংশে এবং শহরের ক্ষেত্রে ৭৪ শতাংশে।FacebookTwitterWhatsAppShare



TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen