মহালয়ার ভোরে যেন ঘরে ফিরে আসেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ 

বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র না থেকেই আত্মপ্রকাশ করেন সেখানে… ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। পুত্রবধূ, নাতি, পরিজন… কালজয়ী স্ত্রোত্র শেষ হলে শুরু করেন তাঁরা দিনের কাজকর্ম।

September 17, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

রামধন মিত্র লেনের বাড়িটা আজও আছে। একইরকম। মহালয়ার সকালে এখনও সেখানে শোনা যায় ঘড়ির অ্যালার্ম। আজও সবাই একসঙ্গে বসেন। রেডিওর নব ঘুরিয়ে অপেক্ষা থাকে সেই ‘মাহেন্দ্রক্ষণের’…। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র না থেকেই আত্মপ্রকাশ করেন সেখানে… ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। পুত্রবধূ, নাতি, পরিজন… কালজয়ী স্ত্রোত্র শেষ হলে শুরু করেন তাঁরা দিনের কাজকর্ম।

মঙ্গলবার সকালে ওই বাড়ির তিনতলার একটি ঘরে বসে কথা হচ্ছিল বীরেন্দ্রবাবুর নাতি সায়ম ভদ্রের সঙ্গে। মহালয়ার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমিও বহুবার দাদুর ঘরে বসে একসঙ্গে এই বিশেষ দিনে শুনেছি মহিষাসুরমর্দিনী। দেখতাম দাদু মনোযোগ দিয়ে ওই স্তোত্রপাঠ চোখ বুজে শুনছেন। আর তাঁর দু’চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল। অথচ তাঁর কোনও হুঁশই নেই। দাদু তখন আর নিজের মধ্যে থাকতেন না।’ 

বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের পুত্রবধূ ৭৮ বছরের প্রবীণা সুস্মিতা ভদ্র বলেন, ‘আমার শ্বশুরমশাই প্রায়ই বলতেন, চোখ বুজে শুনতে শুনতে তাঁর মনে হতো স্বয়ং দশভুজা মা যেন ওই ঘরে এসে বিরাজ করেছেন। মহিষাসুরমর্দিনী শুরু হওয়া মাত্র আর কারও কথা বলার জো নেই। আমরাও আর সে সাহস দেখাতাম না। ওই বিশেষ দিনে সারাদিন ধরে মানুষজন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসতেন। জমিয়ে চলত নানা গল্পগুজব। কোথা থেকে যে দিনটা শেষ হয়ে যেত, তা টেরই পাওয়া যেত না।’

তিনি বলেন, ‘এখনও মহালয়ার দিনে দেখতে পাই, বহু মানুষ আমাদের এই বাড়িটা দেখতে আসেন। তাঁরা বাইরে থেকে আমার প্রয়াত শ্বশুর মশাইয়ের মূর্তি, স্মারক বেদি ও বাড়িটির আশপাশ চত্বর ঘুরে দেখে থাকেন। মনের ভেতর একটা আনন্দ অনুভব করি।’ 

ওই প্রবীণার কথায়, আমাদের এই বসতবাটিতে আমার শ্বশুর মশায়ের কাছে কে না এসেছেন! সেই তালিকা দীর্ঘ। এসেছেন বনফুল, দাদাঠাকুর, তারাশঙ্কর থেকে শুরু করে উত্তমকুমার, কমল মিত্র, বিশ্বজিৎ, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, রামকুমার চট্টোপাধ্যায় সহ অগণিত শিল্পী। সিনেমা জগতের বহু দিকপালও তাঁর কাছে মাঝেমধ্যে আসতেন।

বীরেন্দ্রবাবুর নাতি বলেন, ‘৯১ সালে দাদু মারা যাওয়ার পর দেখেছিলাম দাদুর প্রতি মানুষের কী অসীম ভালোবাসা। দাদুর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়া মাত্র কাতারে কাতারে মানুষ আমাদের এই বাড়িটার সামনে ভিড় করেছিলেন। অনেকে হাতে ছিল ফুলের মালা আর চোখ ভর্তি জল। একসময় লোকের ভিড় এড়াতে তিনতলা থেকে দাদুর মরাদেহ রাখা হয়েছিল আমাদের সুসজ্জিত ঠাকুর দালানে। দীর্ঘ সময় মানুষ এসে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে যান।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen