ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম রথ-উৎসব মাহেশের রথযাত্রা
আজ দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসেন মাহেশের রথযাত্রায়। এখানে রথের মেলা চলে প্রায় একমাস ধরে। মাহেশের মন্দির বাংলার প্রথম রথযাত্রার শুরু এখানেই।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৩:২৬: সন্ন্যাস গ্রহণের পর নবদ্বীপ থেকে পুরী যাওয়ার পথে মহাপ্রভু চৈতন্যদেব মাহেশের মন্দিরে আসেন। মাহেশের মন্দির দেখে মুগ্ধ মহাপ্রভু, মন্দিরের নাম দেন ‘নব নীলাচল’।
আজ থেকে ৬০০ বছরেরও বেশি পুরনো সময়ের কথা। আরাধ্য দেবতা জগন্নাথদেবকে নিজে হাতে ভোগ নিবেদন করবেন বলে সাধক ধ্রুবানন্দ পুরীধামে যান। পাণ্ডাদের কাছে অপমানিত হয়ে ফিরে আসেন মাহেশ। তারপর স্বপ্নে দেখা দেন জগন্নাথদেব। মাহেশে গঙ্গারধারে এক কুটিরে জগন্নাথদেবের মূর্তি তৈরি করে শুরু করেন সাধনা। নিজ হাতে ভোগ নিবেদন করেন জগন্নাথদেবকে। নীলাচলে যাওয়ার পথে একদিন চৈতন্যদেব মাহেশে সেই কুটিরে এসে হাজির হন। ধ্রুবানন্দের অনুরোধে চৈতন্যদেব দ্বাদশ গোপালের পঞ্চম গোপাল কমলাকর পিপলাইকে মন্দির সেবার দায়িত্ব দিলেন। কমলাকর পিপলাই মাহেশেই থেকে গেলেন। তাঁর উত্তারধিকারীরা আজও মন্দিরের সেবাইত। কমলাকর পিপিলাই মাহেশে রথযাত্রার প্রবর্তন করেন। পুরীর পর এটিই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রথযাত্রা।

হাজার শালগ্রাম শিলার রত্নবেদির উপর প্রতিষ্ঠিত জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা। পুরীর মতো এখানে মূর্তিবদল হয় না। প্রতি বছর স্নানযাত্রার পর হয় অঙ্গরাগ। তিনদিন মন্দিরের দরজা বন্ধ রেকে নতুন রূপ দেন শিল্পী। কমলাকরের রথ আজ নেই। মাহেশের রথ একাধিকবার পরিবর্তিত হয়েছে। বর্তমান রথটি লোহার তৈরি। ন’টি চূড়া, রথের সামনে নীলও সাদা রঙের দুটি ঘোড়া, সারথি ও দুটি রাজহাঁস রয়েছে। আজ দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসেন মাহেশের রথযাত্রায়। এখানে রথের মেলা চলে প্রায় একমাস ধরে। মাহেশের মন্দির বাংলার প্রথম রথযাত্রার শুরু এখানেই।
ভাগীরথী নদীতে ভেসে আসা নিম কাঠ থেকেই মাহেশের জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা মূর্তি নির্মিত হয়েছিল। ধ্রুবানন্দের প্রতিষ্ঠিত পুরনো বিগ্রহ আজও পূজিত হয়। ১৭৫৪ সালে মাহেশের প্রথম রথটি নির্মাণ করেন এক মিষ্টি ব্যবসায়ী। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হুগলি জেলার তৎকালীন দেওয়ান শ্যামবাজারের কৃষ্ণরাম বসু মাহেশের রথযাত্রায় (Mahesh Rath Yatra) এসেছিলেন। পরের বছর তিনি পাঁচ চূড়া বিশিষ্ট কাঠের রথ নির্মাণ করেন, দায়ভার নেন মাহেশের রথের। তৈরি করান চওড়া রাস্তা। পরবর্তীকালে ১৭৯৮ সালে তাঁর ছেলে গুরুপ্রসাদ নয় চূড়ার নতুন রথ নির্মাণ করে দেন। সেই থেকেই এই বসু পরিবারের দায়িত্বে মাহেশের রথ। সেই রথ ১৮৮৪ সালে রথযাত্রার দিন পুড়ে যায়। বসু পরিবারের তৎকালীন কর্তা কৃষ্ণচন্দ্রের তত্ত্বাবধানে মার্টিন বার্ন কোম্পানি পরের বছর ১২৫ টন ওজনের লোহার রথ তৈরি করেন। এই রথই আজও দেখা যায়। ৫০ ফুট উচ্চতার চারতলা এই রথটির নির্মাণে খরচ পড়েছিল ২০ লক্ষ টাকা।