বাগবাজার সার্বজনীনে মাতৃপ্রতিমার সাজে আসছে পরিবর্তন

বাগবাজারের মাতৃপ্রতিমাকে সাজিয়ে তোলার কাজে প্রায় তিন পুরুষ ধরে যুক্ত কৃষ্ণনগর মাঝের পাড়ার কর পরিবার।

September 26, 2021 | 2 min read

Authored By:

Drishti Bhongi Drishti Bhongi

বাংলার দুর্গাপুজোয় (Durga Puja 2021) বনেদিয়ানা আর বাগবাজার সার্বজনীন যেন সমার্থক। দুর্গাপুজোর ইতিহাসে যত রদবদলই আসুক না কেন, নানা থিমের চমকে দর্শক যত মোহিতই হোক, সাবেকিয়ানা আর আভিজাত্যে বাগবাজারের মাতৃপ্রতিমা চিরকাল স্বাতন্ত্র্য আদায় করে নিয়েছে। থেকেছে তার নিজস্ব জায়গায়। এবছরই সেই মাতৃপ্রতিমার সাজে আসছে পরিবর্তন। ৪৩ বছর পরে শিল্পী রাজকুমার করের হাত ধরে বদলাচ্ছে মায়ের সাজ।

বাগবাজারের মাতৃপ্রতিমাকে সাজিয়ে তোলার কাজে প্রায় তিন পুরুষ ধরে যুক্ত কৃষ্ণনগর মাঝের পাড়ার কর পরিবার। নিমাইচন্দ্র কর টানা ৩০ বছর রূপদান করেছেন প্রতিমাকে। এরপর সেই দায়িত্ব নেন তাঁর ছেলে পাঁচুগোপাল কর। এক দশক তাঁর হাতেই সেজে উঠেছে বাগবাজারের প্রতিমা। হাত ঘুরে এখন তৃতীয় পুরুষ রাজকুমার কর পেয়েছেন প্রতিমাকে সাজিয়ে তোলার দায়িত্ব। মাঝে অবশ্য এই ভার নিয়েছিলেন অন্য শিল্পী। তবে করোনাকালে তাঁর প্রয়াণের পর আবার কর পরিবারই ফিরেছে প্রতিমাসজ্জার গুরুদায়িত্ব নিয়ে।

নতুন প্রজন্মের শিল্পীর হাত ধরে এবার প্রতিমার সাজেও আসছে বেশ কিছু বদল। এতদিন মায়ের মুকুটের উচ্চতা হত সাড়ে আট থেকে নয় ফুট। এবার সেই উচ্চতা বাড়িয়ে করা হচ্ছে সাড়ে দশ ফুট। দেবী দুর্গার মুকুটটি তৈরি করতে লোহার তার লাগছে ২০ কেজিরও বেশি। লক্ষ্মী-সরস্বতীর মুকুট নির্মাণে গড়ে অন্তত ১৫ কেজি করে তার লাগে। পুঁতি, কাচ, চুমকি, জরির মতো নানা উপকরণে সেজে উঠছে এই মুকুট। লক্ষ্মী-সরস্বতীর মুকুটের উচ্চতা ছিল ছয় ফুট, এবার তা বেড়ে হয়েছে সাড়ে সাত ফুট। অর্থাৎ চিরাচরিত যে মুকুট প্রতিমার মাথায় দেখা যায় এবার তা উচ্চতায় ও সাজের বৈচিত্রে অনেকটাই আলাদা হবে। রাজকুমারের ভাবনায় এ বছরই প্রথম রূপ পাচ্ছে বিশেষ ‘জিনপোষ্ট’ যেখানে লেখা থাকবে বাগবাজার সার্বজনীনের নাম। তা ছাড়া মায়ের বক্ষাবরণীতেও আসছে কিছু পরিবর্তন। সব মিলিয়ে বনেদিয়ানা বজায় রেখেও নতুন প্রজন্মের শিল্পীর ভাবনায় অনেকটাই নতুন সাজে দেখা যাবে বাগবাজারের মাতৃপ্রতিমাকে।

পুজো আসতে আর হাতেগোনা কটাদিন মাত্র। বাগবাজার সার্বজনীনে (Bagbazar Sarbojonin) এই মুহূর্তে তাই ব্যস্ততায় নিঃশ্বাস ফেলার সময় নেই প্রায় স্বপন নস্করের। বিগত চল্লিশ বছর ধরে তিনি এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত। নান আয়োজনে সাজিয়ে তুলছেন মাকে। এই পুজোর ইতিহাসের চলমান সেই সঙ্গী বলছেন, বছর ১৫ ছাড়া ছাড়া মায়ের কাঠামো বদল করা হয়। এ বছর যে কাঠামোর উপর প্রতিমা রূপ পাচ্ছে সেটি বছর দুয়েকের পুরনো। মুকুটের বাড়তি উচ্চতা ধরে এবার সব মিলিয়ে প্রায় ৩৩ ফুট উচ্চতা হবে প্রতিমার। প্রতিমার মুখমণ্ডলের পরিধি প্রায় ৬ ফুট, উচ্চতায় প্রায় আড়াই ফুট। এই প্রতিমা নির্মাণে উপকরণের তালিকাও কম নয়। প্রায় ১২৫টি বাঁশ, ৮০ বান্ডিল খড়ের সঙ্গে থাকে বড় গাড়ির অন্তত চার গাড়ি মাটি। সঙ্গে দড়ি ২০ কেজি আর পেরেক চল্লিশ কেজি। এ ছাড়া পাট, ধানের তুষ ইত্যাদি উপকরণে যে কাঠামোর নির্মাণ তাই-ই প্রতিমার রূপ পায় ক্রমে।

এই বিরাট ও ব্যাপক আয়োজন সার্থক হয়ে ওঠে শিল্পীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে। মায়ের সেই রূপই সকলে দেখেন পুজোর ক-দিন। সত্যজিতের ‘নায়ক’ ছবির অরিন্দম তাঁর শঙ্করদার কথা বলতে গিয়ে বলেছিল, সাবেকি স্টাইল, চালচিত্তির, ডাকের সাজ, বড় বড় চোখ না হলে যেন ভক্তিই আসে না। এ কথা যেন প্রায় গরিষ্ঠসংখ্যক বাঙালির ক্ষেত্রেই সত্যি। আর চোখ বুঝে এই মাতৃপ্রতিমা মনে করলে, যে মুখ ভেসে ওঠে তা অবধারিত ভাবেই বাগবাজার সার্বজনীনের মায়ের মুখ। বনেদিয়ানার টান বাঙালিকে প্রতিবছরই টেনে নিয়ে আসে এই পুজোপ্রাঙ্গনে। এবার সেখানেই বনেদিয়ানার সঙ্গে যোগ পরিবর্তনের। এই যুগলবন্দি যে এবারের পুজোয় সকল পুজোপ্রেমীর কাছে নতুন অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে, সে কথা বলাই যায়।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen