অভিবাসী ভারতীয়দের নাগরিক মর্যাদা রক্ষায় ডাহা ফেল মোদী সরকার, সাগরিকার স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিশ জয়শঙ্করকে, তোপ মমতার
মোদী সরকার ভারতীয় অভিবাসীদের নাগরিক মর্যাদা রক্ষা করতে ব্যর্থ হলেও কলম্বিয়ার মতো ছোট দেশ সসম্মানে ফিরিয়ে এসেছেন তার নাগরিকদের।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: মার্কিনমুলুকে পালাবদলের পর অনুপ্রবেশকারী হঠাও অভিযান শুরু হয়েছে। শয়ে শয়ে অভিবাসীদের সামরিক বিমানে বসিয়ে দেশ থেকে বিতাড়িত করছে ট্রাম্প প্রশাসন। হাতে হাতকড়া, পায়ে শিকল পরিয়ে ভারতীয় অভিবাসীদের ফেরত পাঠিয়েছে আমেরিকা। অভিযোগ, বেআইনিভাবে তাঁরা আমেরিকায় প্রবেশ করছিলেন বলে অভিযোগ। সেই নিয়ে উত্তাল হয় দেশের সংসদ। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাকেত বক্তব্য রাখেন, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিশ আনেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষ। মোদী সরকার ভারতীয় অভিবাসীদের নাগরিক মর্যাদা রক্ষা করতে ব্যর্থ হলেও কলম্বিয়ার মতো ছোট দেশ সসম্মানে ফিরিয়ে এসেছেন তার নাগরিকদের। এই উদাহরণ তুলে ধরে বিজেপি তথা এনডিএ সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।



শিকল বেঁধে, সামরিক বিমানে ভারতীয়দের ফেরত পাঠানোর ঘটনায় লোকসভা এবং রাজ্যসভায় সরকারকে কাঠগড়ায় তোলেন বিরোধীরা। সমালোচনার মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত ৬ ফেব্রুয়ারি সংসদে ভাষণ দিতে আসেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। কিন্তু কূটনৈতিক ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্নের জবাব দেওয়ার পরিবর্তে, তিনি জানান, “এই প্রথম অভিবাসী ফেরত পাঠাল না আমেরিকা। এজেন্টরা ভুল বুঝিয়ে নিয়ে গিয়েছিল ভারতীয় অভিবাসীদের। কী ভাবে তাঁরা আমেরিকা পৌঁছলেন, তা জানার চেষ্টা চলছে। আমেরিকার বায়ুসেনার বিমান কেন ভারতের মাটিতে নামল, তাতে চাপিয়ে কেন ভারতীয়দের আনা হল, সেই প্রশ্নের জবাবও দেন জয়শঙ্কর। জানান, এই বিষয়টি পুরোপুরি আমেরিকার অভিবাসন বিভাগের উপর নির্ভর করে।
জয়শঙ্কর আরও বলেন, “ভারতীয় অভিবাসীদের সঙ্গে যাতে অন্যায় আচরণ না করা হয়, তা নিয়ে আমেরিকা সরকারের সঙ্গে কথা চলছে। বিমানে যাতে খাবার, চিকিৎসা পরিষেবার ব্যবস্থা থাকে, সকলের খেয়াল রাখা হয় যাতে, তা নিয়েও আলোচনা চলছে।”
আমেরিকার সেনার বিমানে কেন ভারতীয়দের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হল, কেন আমেরিকার সেনার বিমানকে ভারতের মাটিতে নামতে দেওয়া হল, ভারত কেন নিজের বিমান পাঠিয়ে সসম্মানে সকলকে ফিরিয়ে আনল না, প্রশ্ন ওঠে। রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ সাগরিক ঘোষ বিদেশমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিশ আনেন। ২০ ফেব্রুয়ারি তারিখে তিনি রাজ্যসভার চেয়ারম্যান চিঠি লেখেন, বিদেশমন্ত্রীর ৬ ফেব্রুয়ারি তারিখের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আনা হয় নোটিশ। প্রসঙ্গত, রাজ্যসভার ১৮৭ নম্বর রুল অনুযায়ী সাংসদ সদস্যের স্বধিকার ভঙ্গের অভিযোগ করা হয়। সাগরিকার অভিযোগ, অভিবাসী ফেরত সংক্রান্ত ইস্যুতে সংসদে দাঁড়িয়ে বিদেশমন্ত্রীর ভাষণ বিভ্রান্তিকর ও অসম্পূর্ণ।
২৭ ফেব্রুয়ারি নেতাজি ইনডোরে তৃণমূলের কর্মী সভার মঞ্চ থেকে দলের সুপ্রিমো তোপ দাগেন এই বিষয়ে, তিনি নিশানা করেন মোদী সরকারকে। তিনি বলেন, হাতে হাতকড়া, পায়ে বেড়ি পরিয়ে ভারতীয়দের ফেরত পাঠানো লজ্জাজনক। তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বময় নেত্রীর প্রশ্ন তোলেন, “কেন বিজেপি সরকার কলম্বিয়ার মতো ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনতে বিমান পাঠাতে পারেনি?”
মোদী সরকারকে কাঠগড়ায় তুলে তিনি বলেন, “মোদী সরকার এ বিষয়ে নীরব ছিল। ভারতীয়দের সসম্মানে ফেরানোর বিষয়টি সুনিশ্চিত করা উচিত ছিল কেন্দ্র সরকারের। যখনই নির্বাচন আসে, বিজেপি অনুপ্রবেশের কথা বলে, কিন্তু দেশের নাগরিকদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে শিকল বেঁধে বিতাড়িত করা হল। কেন? এটা দেশের জন্য অত্যন্ত লজ্জার বিষয়।” এর পরেই কমল্বিয়ার সঙ্গে ভারতের তুলনা টানেন তৃণমূল নেত্রী। তিনি বলেন, নাগরিকদের ফেরাতে কলম্বিয়া প্লেনের ব্যবস্থা করতে পারল কিন্তু বিজেপি সরকার পারল না।
প্রসঙ্গত, কলম্বিয়ার মতো ছোট দেশ আমেরিকার সেনা বিমানকে নিজেদের মাটি ছুঁতে দেয়নি, নাগরিকদের হাতে হাতকড়া, পায়ে বেড়ি পরাতে দেয়নি। কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভ পেত্রো, নিজ উদ্যোগে বিমান পাঠিয়ে সসম্মানে নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনেন। নতুন করে তাঁরা যাতে জীবন শুরু করতে পারেন, তার জন্য স্বল্প সুদের ঋণ প্রকল্পেরও ঘোষণা করেন। কলম্বিয়া যদি নাগরিকদের মর্যাদা রক্ষার জন্য আমেরিকাকে যোগ্য উত্তর দিতে পারে, ভারত কেন পারবে না, কার্যত সে প্রশ্নই তুলেছেন তৃণমূল নেত্রী।