উন্নয়ন অস্ত্রেই বিজেপিকে টক্কর মমতার

বিজেপির সেই প্রতিশ্রুতি যে ভাঁওতা ছাড়া আর কিছু নয়, তা স্পষ্ট করেই আজ, মঙ্গলবার জলপাইগুড়ির এবিসিসি ময়দান থেকে উত্তরবঙ্গ জয়ের ডাক দেবেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

December 15, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

একদিকে উত্তরবঙ্গের সামগ্রিক ‘উন্নয়ন’। অন্যদিকে উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব সহ লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে গেরুয়া শিবিরের একগুচ্ছ ‘প্রতিশ্রুতি’। উন্নয়ন পর্বে এখন চলছে ‘দুয়ারে সরকার’ (Duare Sarkar)। অন্যদিকে ফের উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব, চা-বাগান শ্রমিক সহ বিভিন্ন জনজাতির পাশে দাঁড়ানোর ‘আশ্বাস’। বিজেপির সেই প্রতিশ্রুতি যে ভাঁওতা ছাড়া আর কিছু নয়, তা স্পষ্ট করেই আজ, মঙ্গলবার জলপাইগুড়ির এবিসিসি ময়দান থেকে উত্তরবঙ্গ জয়ের ডাক দেবেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। শুধু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নন, বিজেপি বিরোধী শিবিরের প্রধান মুখ হয়েও।

কৃষি বিল ইস্যুতে এখন বেশ কোণঠাসা গেরুয়া শিবির। তামাক, পাট এবং ধান চাষের উত্তরবঙ্গেও কৃষক ক্ষোভের আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। গোটা রাজ্যের মতো উত্তরবঙ্গেও নাগরিকত্ব প্রদানের টোপ ঝুলিয়ে ভোট বৈতরণী পার করেছিল বিজেপি। তারপরও ‘এদেশীয়’ হতে না পারার স্বপ্নভঙ্গে ক্ষোভ বেড়েছে উদ্বাস্তু মানুষের। সেই ক্ষোভ প্রশমনের মরিয়া চেষ্টার মাঝেই জলপাইগুড়ির তিস্তা চরের কয়েক হাজার ‘ছিন্নমূল’ মানুষ ফিরছেন জোড়াফুল শিবিরে। তাঁরাই গত লোকসভা ভোটে পদ্মফুলের পতাকা হাতে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। তাঁদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি বিজেপি (BJP)। চা-বাগান অধিগ্রহণ সহ আদিবাসী মানুষের মানোন্নয়নের প্রতিশ্রুতিও পালিত হয়নি।

গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে সম্পর্কত্যাগ করার পর থেকেই বিমল গুরুং (Bimal Gurung) ঘুরতে শুরু করেছেন তরাই-ডুয়ার্সের বিভিন্ন প্রান্তে। বিজেপির প্রতি মোহভঙ্গ হচ্ছে নেপালিভাষী মানুষেরও। এহেন আবর্তে গেরুয়াশিবির বিরোধী সেই ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে লোকসভা ভোটের পর তৈরি হওয়া ‘ফাটল’ মেরামতে আসরে নেমেছে তৃণমূল। সহায়ক হয়েছে মমতার মস্তিষ্কপ্রসূত ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্প। স্বাস্থ্যসাথী সহ মোট ৩৪টি জনমুখী প্রকল্পের উপভোক্তা হতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে উত্তরবঙ্গে। গোটা রাজ্যের মতোই। রাজ্যের আর এক বিরোধী শিবির বাম-কংগ্রেস জোট কিন্তু এই পর্বে কার্যত ‘ঠান্ডা’। গত লোকসভা ভোটে জলপাইগুড়িতে বাম শিবির পেয়েছিল মাত্র ৭৬,১৬৬ ভোট। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সিপিএমের প্রাপ্ত মোট ৪ লক্ষ ২৫ হাজার ভোটের মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ ২০১৯-এ বিজেপির ঝুলিতে স্থানান্তরিত হয়েছিল। উত্তরবঙ্গের রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, আগামী বিধানসভা ভোটের মূল শত্রু কে, এখনও তা ঠিকই করে উঠতে পারেনি বাম-কংগ্রেস শিবির।

এরকম একটা পরিস্থিতিতে এদিন বিকেলে কপ্টারে বাগডোগরা থেকে জলপাইগুড়ি পৌঁছেই দলের সাতজন বিধায়কের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন তৃণমূল (Trinamool) সুপ্রিমো। কয়েকদিন আগে ‘বেসুরে’ গাইতে শুরু করা ময়নাগুড়ির বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারীও ছিলেন সেই বৈঠকে। উপস্থিত ছিলেন জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল জেলা সভাপতিদ্বয়। সেই বৈঠকেই মমতার স্পষ্ট বার্তা—কারও মুখাপেক্ষী না থেকে সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে ‘হাতিয়ার’ করেই ঐক্যবদ্ধভাবে লড়তে হবে। পরাস্ত করতে হবে বিভেদকামী শক্তিকে। মানুষকে বলতে হবে সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র আর আধার কার্ডের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী যদি দেশের নাগরিক হতে পারেন, তাহলে উদ্বাস্তু-আদিবাসী, রাজবংশী আর নেপালিভাষী মানুষ—সবাই নাগরিক। নাগরিক হওয়ার জন্য কোনও দলের শংসাপত্রের দরকার নেই।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen