বাংলার গ্রামে গঞ্জের মনসা মেলা

অনন্ত নাগ, বাসুকি নাগ, শঙ্খ নাগ, পদ্ম নাগ এমন সব কত কত লায়েক সর্পদেবদেবীর পুজো করা হয় এ দিন।

August 17, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

শ্রাবণ মাসের কৃষ্ণ পঞ্চমী অর্থাৎ পূর্ণিমার পরে যে কৃষ্ণপক্ষ তার পঞ্চম দিন হল নাগপঞ্চমী। এদিন মনসাপুজোর রেওয়াজ আছে গোটা ভারতে। অনন্ত নাগ, বাসুকি নাগ, শঙ্খ নাগ, পদ্ম নাগ এমন সব কত কত লায়েক সর্পদেবদেবীর পুজো করা হয় এ দিন। ঘরের মূল প্রবেশ পথের দু’পাশে মনসা ডাল ভেঙে এনে রাখা হয়। বর্ষায় সাপ বেশি বের হয় বলেই এ সময় এই নাগ পুজো।

সাপ আর লোকাচার মনসামঙ্গল থেকেই প্রচলিত। তবে অনেকাংশে সহজ করে নেওয়া হয়েছে।

ঘটে বসো গো মা, পদুমা (পদ্মের ওপরে) কুমারি

তোমারই স্মরণ লয়ে আনতে যাব বারি।

ছোট বড় গুণিন মাগো বন্দিলাম চরণ

তার আগে বন্দি মাগো তোমার এ চরণ॥

বিষ্ণুপুর 

মল্লরাজার দেশ বিষ্ণুপুর। মল্লরাজদরবারে মেলা শুরু হয় বিকেল থেকে। কমে গেছে সাপ এবং সাপুড়ে, তাতে অবিশ্যি মেলার জৌলুস কমেনি। কমেনি জমায়েতও। সাপের গান এবং ‘সাকি’, প্রশ্নোত্তর পর্বও হয়। এক দশক আগেও দেখা যেত অসংখ্য ‘চৌড়ল’। গরুর গাড়ির উপর মাটির বাঘ। তার পিঠে পট্টবস্ত্র পরে সাপুড়ে বা গুণিন। হাতে থাকে ফনা তোলা একটি জ্যান্ত সাপ।

জলপাইগুড়ি

৫০৭ বছরের মনসা পুজো। বহু প্রাচীন এই পুজো নিয়ে মেতে ওঠে জলপাইগুড়ি জেলার মানুষ। পুজোর পাশাপাশি মেলা দেখতে বহু মানুষের ভিড় জমে বৈকুণ্ঠপুরে। এমনিতে মনসা দেবীর ভোগ বলতে সবাই জানে— দুধ আর কলা। কিন্তু এখানে আমিষ ভোগও দেওয়া হয়। পাঁঠার মাংস, ইলিশ, রুই, কাতলা, চিতল, পাবদা দিয়ে দেবীকে ভোগ দেওয়া হয়। রাজবাড়ি চত্বরে বসে তিনদিনের মনসা মেলা। রাজবাড়ির মণ্ডপেই মনসা দেবীর বিগ্রহ তৈরি হয়। পুজোর পরে নৌকায় করে রাজবাড়ির দিঘিতে বিসর্জন দেওয়া হয় দেবীকে।

চাকদহ 

খেদাইতলা গ্রামের ছোট্ট মনসা মন্দির। এক দশকের পুরনো। বড় মনসাপুকুরের শান বাঁধানো ঘাট। শ্রাবণ সংক্রান্তির সকাল থেকেই এখানে শুরু হয় মেলা। সাপুড়েরা ভোর ভোর চলে আসে। মানুষ স্নান সেরে মন্দিরে পুজো দিয়ে সাপুড়েদের সাপের পেঁড়িতে পয়সা দেয়। পেঁড়ি হল বাঁশের ছিলা দিয়ে তৈরি ছোট বড় বাক্স, যাতে সাপ রাখা হয়। ভক্তরা অনেকে এ দিন ছোট ছোট মনসাদেবীর মূর্তি নিয়ে আসে। মেলার দক্ষিণ দিকে সাপুড়েরা গান করে। 

বেথুয়াডহরি

চাকদহর মেলা সেরে দুপুর নাগাদ পৌঁছে যাওয়া যায় বেথুয়াডহরির ব্রহ্মণীতলার সাপের মেলায়। গ্রামের নামও ব্রহ্মণীতলা। বেথুয়াডহরি রেল স্টেশন থেকে সামান্য পথ। খুব প্রাচীন মেলা, তবে এখন সাপ-সাপুড়ে প্রায় নেই।

তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত নাগ পঞ্চমীতে সাপের মেলা (অশোককুমার কুণ্ডু)

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen