কাশী বিশ্বনাথ করিডর নির্মাণের জন্য ভেঙে গিয়েছে শতাব্দী প্রাচীন অনেক যৌথ পরিবার

ভেঙে গিয়েছে যৌথ পরিবার। এখন আর সকাল হলে দাদার সঙ্গে দেখা হয় না ভাইয়ের

December 18, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi
(ছবি সংগৃহীত)

বারো ঘর এক উঠোনেই বেড়ে ওঠা প্রভাত সিংয়ের। সকাল হতেই মা, জেঠিমা, কাকিমাদের ছোটাছুটি শুরু হতো হেঁশেলে। বাবা-জ্যাঠাদের তখন কাজে যাওয়ার চরম ব্যস্ততা। কচিকাঁচারা তৈরি হচ্ছে স্কুলে যাওয়ার জন্য। হাঁকডাকে গমগম করত বারাণসীতে শতাব্দী প্রাচীন সিংদের এই বাড়ি। বহু সুখ-দুঃখের সাক্ষী প্রভাতদের নোনা ধরা সেই দালান। কিন্তু আজ উন্নয়নের গ্রাসে ধুলোয় মিশেছে সেটি। নেপথ্যে কাশী বিশ্বনাথ করিডর। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত ধরে জাঁকজমক করে যার সূচনা হয়েছে মঙ্গলবারই। কাশী বিশ্বনাথ করিডরের প্রদীপের তলায় অন্ধকারের এই ছবিই এখন বারাণসীতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। প্রভাতরা আজ বাস্তুহারা। সরকারের বদান্যতায় মাথা গোঁজার একটা ছাদ মিলেছে বটে। কিন্তু ভেঙে গিয়েছে যৌথ পরিবার। এখন আর সকাল হলে দাদার সঙ্গে দেখা হয় না ভাইয়ের। কিংবা বাবার সঙ্গে কাকার। মা-কাকিমার হেঁশেলও হয়ে গিয়েছে আলাদা। কেউ শহরের এ প্রান্তে তো কেউ অন্যপ্রান্তে। যোগাযোগ বলতে মোবাইল ফোন। আর তাতেই ফেলে আসা দিনের টুকরো টুকরো স্মৃতি ধরে রেখেছেন প্রভাত। মুছে যাওয়া দিনগুলো এখন শুধুই তাঁকে পিছু ডাকে। তাই সুযোগ পেলেই তিনি মণিকর্ণিকা ঘাটের পাশে নির্জনে বসে মোবাইলের গ্যালারিতে হাতড়ে বেড়ান বারো ঘরের স্মৃতি।

শুধু প্রভাত নন, বারাণসীর অলিগলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এরকম বহু চরিত্র। যেমন ওঙ্কার দীক্ষিত। ৩৭ বছরের এই যুবক একটি প্রসাধনীর দোকান চালান। দাদুর হাতে গড়া খুপড়ি সেই দোকানটিকে মনের মতো সাজিয়েছিলেন। কিন্তু মোদির স্বপ্নের প্রকল্প গ্রাস করেছে তাকে। ওঙ্কারের গলায় রুটি-রুজি হারানোর কষ্ট। রাস্তার ধারে টুলে বসে বললেন, ‘দাদু প্রথমে কনৌজে দোকানটি খোলেন। সেখান থেকে সরে এসে দোকানের ঠিকানা হয় সরস্বতী ফটক। উত্তরাধিকার সূত্রে দোকানটা হাতে এসেছিল। এটাই ছিল আমার রুটি-রুজির একমাত্র সম্বল। কিন্তু সরকার হুকুম দিল, কাশী বিশ্বনাথ মেগা প্রকল্পের জন্য দোকান ছাড়তে হবে। বাধ্য হয়ে গুটিয়ে নিলাম। চোখের সামনে দেখলাম, একদিন বুলডোজার এসে মাটিতে মিশিয়ে দিল আমার ভালোবাসার দোকান। ওই এলাকাতেই অন্য এক কোণে একটা ছোট্ট দোকান করেছি। সংসার তো চালাতে হবে! এখন বাবা বিশ্বনাথই ভরসা।’ শেষ বয়সে এসে ললিত যাদবের কষ্টটাও কোনও অংশে কম নয়। ছোট থেকে বেড়ে ওঠা যে শহরে, সেখানেই উন্নয়নের নামে একের পর এক হেরিটেজ বিল্ডিংকে গুঁড়িয়ে দেওয়া মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না ৭২ বছরের এই বৃদ্ধ। চেনা শহর তাঁর কাছে এখন অচেনা। ঝা চকচকে করিডর ঘিরে ঢক্কা নিনাদ ছুঁতে পারেনি এই বৃদ্ধকে। নিজের মনে বলে চলেছেন, ‘উন্নয়নের নামে একের পর এক হেরিটেজ বাড়িকে যেভাবে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তা মেনে নেওয়া যায় না।’

আমজনতার এই হা-হুতাশ কানে পৌঁছয়নি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। করিডর উদ্বোধনে এসে তিনি বলেছেন, ‘কাশীর মানুষকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তাঁরা বাবার জন্য যে দান করেছেন, তা আমি ভুলব না।’ প্রধানমন্ত্রীর এই প্রলেপে প্রভাত-ওঙ্কার-যাদবের ক্ষত যে সারবে না, চাপা ক্ষোভই তার প্রমাণ।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen