ছাব্বিশের আগে SIR কাঁটায় বিদ্ধ মতুয়া গড়, ড্যামেজ কন্ট্রোলে বঙ্গ সফরে মোদী-শাহ!

December 19, 2025 | 2 min read
Published by: Raj

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২০.৩৫: দোরগোড়ায় ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচন। তার আগেই নাগরিকত্ব ও ভোটার তালিকা সংশোধন বা ‘এসআইআর’ (SIR) ইস্যুতে উত্তপ্ত হয়ে উঠল বাংলার রাজনীতি। বিশেষ করে মতুয়া অধ্যুষিত জেলাগুলিতে এখন আশঙ্কার মেঘ। ভোটার তালিকায় নাম থাকা বা বাদ যাওয়া নিয়ে যে হট্টগোল শুরু হয়েছে, তাতে প্রশ্ন উঠছে- তবে কি মতুয়াদের নাগরিকত্ব পাওয়ার স্বপ্ন বিশবাঁও জলে? এই প্রবল উৎকণ্ঠা ও ক্ষোভের আবহেই শনিবার রানাঘাটে (Ranaghat) সভা করতে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi)। রাজনৈতিক মহলের মতে, বিধানসভা ভোটের আগে মতুয়া ভোটব্যাঙ্কে ফাটল রুখতেই তড়িঘড়ি এই বঙ্গ সফরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলার ভোট-রাজনীতিতে মতুয়া সম্প্রদায় (Matua Community) বরাবরই এক ‘নির্ণায়ক শক্তি’। পরিসংখ্যান বলছে, রাজ্যের ২৯৪টি আসনের মধ্যে অন্তত ৭৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে হার-জিতের সমীকরণ ঠিক করে দেন মতুয়া ভোটাররা। বিশেষ করে ৩১টি সংরক্ষিত আসনের চাবিকাঠি থাকে তাঁদের হাতেই। বনগাঁ, রানাঘাট ও কৃষ্ণনগরের মতো লোকসভা কেন্দ্রগুলিতেও মতুয়াদের প্রভাব প্রশ্নাতীত। ২০১৯-এর লোকসভা ও ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে সিএএ (CAA) চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়ে মতুয়াদের একচেটিয়া সমর্থন পেয়েছিল বিজেপি (BJP)। মাঝে পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল (TMC) কিছুটা জমি ফিরে পেলেও, ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে মতুয়ারা ফের পদ্ম শিবিরের উপরেই আস্থা রেখেছিলেন। কিন্তু ২০২৬-র আগে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে।

সম্প্রতি ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ বা SIR প্রক্রিয়া শুরু হতেই নতুন করে দানা বেঁধেছে বিতর্ক। খোদ বিজেপি সাংসদ তথা ঠাকুরবাড়ির সদস্য সুব্রত ঠাকুর (Subrata Thakur) বিস্ফোরক দাবি করে বসেছেন। তাঁর মতে, তালিকায় যে সমস্ত ভোটারদের সন্দেহজনক হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে, তাঁদের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ। তাঁর এই মন্তব্যের পরেই মতুয়া সমাজ জুড়ে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। নাগরিকত্ব পাওয়া তো দূরের কথা, উল্টে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়ার ভয়ে সিঁটিয়ে রয়েছেন অনেকে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আসরে নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেসও। বনগাঁয় পাল্টা সভা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন যে, NRC বা তালিকা সংশোধনের নামে কাউকে তাড়াতে দেওয়া হবে না। ফলে স্বভাবতই প্রবল চাপের মুখে পড়েছে গেরুয়া শিবির।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মতুয়া মহলে (Matua Community) এই পুঞ্জীভূত ক্ষোভ প্রশমিত করতেই শনিবার রানাঘাটে হাইভোল্টেজ সভা করতে আসছেন প্রধানমন্ত্রী। মোদীর সফরের রেশ কাটতে না কাটতেই আগামী ২৯ তারিখ রাজ্যে পা রাখবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। সূত্রের খবর, শাহের এই সফরের মূল লক্ষ্যই হলো বুথ স্তরে দলের সংগঠনকে মজবুত করা এবং মতুয়াদের ক্ষতে প্রলেপ দেওয়া। ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে যে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে, তা দূর করতে এবং আগামী বিধানসভা নির্বাচনে কোন রণকৌশলে বিজেপি এগোবে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে শাহের সফরে।

সব মিলিয়ে, বিধানসভা নির্বাচনের আগে মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক নিয়ে দড়ি-টানাটানি এখন চরমে। একদিকে তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়ার আতঙ্ক, অন্যদিকে মোদী-শাহের আশ্বাস- এই দ্বিমুখী সঙ্কটে দাঁড়িয়ে মতুয়ারা শেষ পর্যন্ত কোন দিকে ঝুঁকবেন, সেটাই এখন দেখার। তবে শনিবারের রানাঘাট (Ranaghat) সভা থেকেই বিজেপি (BJP) মতুয়া মন জয়ে কতটা সফল হয়, সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে গোটা রাজ্য।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen