জামালপুরে দলীয় কার্যালয়েই মাংস-মদের আসর! বিক্ষুব্ধ কর্মীদের হাতে প্রহৃত BJP-র একাধিক নেতা
Authored By:

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২০:৩৮: ছাব্বিশের ভোটের আগেই পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে (Jamalpur) বিজেপির (BJP) গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরমে। খোদ দলীয় কার্যালয়কে ‘পানশালা’ বানিয়ে মাংস-মদের আসর বসানোর গুরুতর অভিযোগ উঠল দলেরই একাংশের বিরুদ্ধে। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধবার রাতে ব্যাপক মারধর করা হলো কাটোয়া সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক ও তাঁর অনুগামীদের। বিক্ষুব্ধ ‘আদি’ বিজেপি কর্মীদের হাতে প্রহৃত হয়েছেন একাধিক নেতা। পাশাপাশি দলের তহবিল তছরুপের অভিযোগে বৃহস্পতিবারও বেশ কয়েকজন নেতাকে রাস্তায় ফেলে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে জেলা রাজনৈতিক মহলে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, বুধবার রাতে জামালপুরের বিজেপি কার্যালয়ে আচমকা হানা দেন দলেরই আদি এবং বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা। অভিযোগ, সেই সময় পার্টি অফিসের ভেতরে রীতিমতো রান্নাঘর বানিয়ে মাংস রান্না হচ্ছিল এবং সঙ্গে চলছিল মদ্যপান। ঘটনাস্থল থেকে মদের আসরে মগ্ন অবস্থায় জেলা সাধারণ সম্পাদক সৌমেন হাজরা, ৩ নম্বর মণ্ডলের সভাপতি অসীম শীল, ১ নম্বর মণ্ডলের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ বাগ, বসন্ত পাঁজা এবং ৩ নম্বর মণ্ডলের সাধারণ সম্পাদক সমীরণ দাস-সহ বেশ কয়েকজনকে হাতেনাতে ধরা হয়।
বিক্ষুব্ধ কর্মীদের দাবি, পার্টি অফিস তাঁদের কাছে মন্দিরের মতো, সেখানে এমন অনাচার মেনে নেওয়া যায় না। ক্ষিপ্ত কর্মীরা নেতাদের ঘটনাস্থলেই ব্যাপক মারধর করেন। পার্টি অফিসের ভিতর থেকে মদের বোতল ও গ্লাস উদ্ধার করে সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
বিজেপির অন্দরের খবর, জেলা সভানেত্রী স্মৃতিকণা বসু দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই পুরনো কর্মীদের সরিয়ে নিজের অনুগামীদের বিভিন্ন পদে বসাচ্ছিলেন। পিন্টু সাহা নামে এক আদি বিজেপি কর্মী সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযোগ করেছেন, “আমাদের বুথের বিএলএ-২-এর টাকা এবং প্রধানমন্ত্রীর বাংলা সফরের আগে শক্তিকেন্দ্র পিছু পাঠানো ৫ হাজার টাকা, সবই মেরে দিয়েছেন জেলা সভানেত্রী ও মণ্ডল সভাপতিরা।” বৃহস্পতিবার এই আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে সৌমেন হাজরার আরও কয়েকজন অনুগামীর ওপর চড়াও হন বিক্ষুব্ধরা।
ঘটনার নেতৃত্ব দেওয়া আদি বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন মণ্ডল সভাপতি জগবন্ধু ঘোষ বলেন, “বিজেপি দলটাকে আমরা বাবা-মায়ের থেকেও বেশি ভালোবাসি। পার্টি অফিস আমাদের কাছে মন্দির। সেটাকেই এরা বার বানিয়ে দিয়েছে! দলটাকে এরা শেষ করে দিল।” আরেক নেতা কেশব কোঙারের কথায়, “জেলার বর্তমান নেতৃত্ব সংগঠন শেষ করে দিয়েছে। এখনই বদল না হলে আগামী ভোটে প্রার্থীদের জামানত জব্দ হবে।” জামালপুর বিধানসভা বিজেপির ফেসবুক পেজ থেকেও স্মৃতিকণা বসুর পদত্যাগের দাবি তোলা হয়েছে।
যদিও সমস্ত অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলা সভানেত্রী স্মৃতিকণা বসু জানিয়েছেন, তাঁর কাছে কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। আক্রান্তরা পুলিশের কাছেও কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি। দলীয় স্তরে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে খবর।
অন্যদিকে, এই ঘটনায় কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল। স্থানীয় তৃণমূল নেতা দেবু টুডু বলেন, “তিনটে ‘ম’ দিয়ে বিজেপি চলে। দলীয় কার্যালয়কে বার বানিয়েছে, আবার কর্মীরাই নেতাদের পেটাচ্ছে। মানুষ সব দেখছে, বিজেপি আরও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।”