যমশেরপুর জমিদার বাড়িতে দুর্গাপুজোর ঐতিহ্যে মিশে আছে বিপ্লবীদের স্মৃতি

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৯:০৪: রাজপাটের জৌলুস হারালেও আজও অম্লান যমশেরপুরের বাগচী বাড়ির পুজো। ৩৫৬ বছরের পুরনো দুর্গাপুজো আজও সাবেকি রীতিতে পালিত হয়, যেখানে প্রতিটি ইটে মিশে আছে ইতিহাস, সংস্কৃতি ও স্বাধীনতা সংগ্রামের গন্ধ।
১৭১১ সালে সৃষ্টিধর বাগচীর উদ্যোগে শুরু হয় এই পুজো। বাগচী পরিবারের আদি নিবাস ছিল রাজশাহীতে, পরে নদীয়ার যমশেরপুরে বসতি স্থাপন করে। স্থানীয় গোয়ালা সম্প্রদায়ের সহায়তায় শুরু হয় দুর্গাপুজো, যা আজও তাঁদের হাতেই সম্পন্ন হয়।
এই জমিদার বাড়ির নাটমন্দিরে একচালা ডাকের সাজে পূজিত হন দেবী দুর্গা। অষ্টম বংশধর শেখরনাথ বাগচী জানান, “দেবীর গায়ের রং হালকা হলুদ, সিংহ সাদা, অসুর সবুজ, গণেশ গোলাপি ও কার্তিকও হালকা হলুদ।” পূর্ণ বৈষ্ণব মতে চারদিন নিরামিষ ভোগের পর দশমীতে কচু শাক-ইলিশ ভোগে পুজোর সমাপ্তি ঘটে।
স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় এই বাড়ি ছিল বিপ্লবীদের গোপন আশ্রয়স্থল। পলাতক বন্দিরা রাতে লুকিয়ে অঞ্জলি দিতে আসতেন, আবার ভোরের আগেই চলে যেতেন। নজরুল, বাঘাযতীনের মতো ব্যক্তিত্বের পদচিহ্নও পড়েছে এই বাড়িতে।

বড় প্যান্ডেলের বদলে এখনও টাঙানো হয় পেল্লায় চাঁদোয়া, যাত্রার আসরও বসে। কলকাতা থেকে আসেন যাত্রাশিল্পীরা। পুজোর ক’দিন অতিথি অভ্যাগতদের জন্য থাকে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা। দশমীর দুপুরে এলাকার ঘোষ সম্প্রদায়কে পাত পেড়ে আপ্যায়ন করা হয়, বিকেলে তাঁরাই প্রতিমা কাঁধে নিয়ে কালীতলার বিলে বিসর্জন দেন।
যমশেরপুরের এই দুর্গাপুজো শুধু এক ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি এক জীবন্ত ইতিহাস, যেখানে রাজনীতি, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও জনজীবনের গল্প একত্রে বোনা।