যুবভারতী কাণ্ড: ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে অরূপের চিঠি মুখ্যমন্ত্রীকে

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৪:৪০: যুবভারতী কাণ্ডের পর পদত্যাগ করতে চাইলেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। জানা গিয়েছে, ক্রীড়া মন্ত্রকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন অরূপ বিশ্বাস। তদন্ত কমিটি গঠিত হওয়ার পরই অরূপ সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, কমিটি যখন তৈরি হয়েছে তখন কোনও মন্তব্য করবেন না তিনি। শোনা যাচ্ছে, নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে ক্রীড়ামন্ত্রী হিসাবে অব্যাহতি চেয়েছেন অরূপ। সমাজ মাধ্যমে একটি পদত্যাগ পত্রের ছবিও ভাইরাল হয়েছে। তার সত্যতা যাচাই করেনি দৃষ্টিভঙ্গি। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, অরূপ বিশ্বাসের ইস্তফা গ্রহণ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আপাতত ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ দপ্তর দেখবেন মুখ্যমন্ত্রী। সূত্রের খবর, তদন্ত শেষ না-হওয়া অবধি ওই দুটি দপ্তর মুখ্যমন্ত্রীর অধীনেই থাকবে।

মেসি সফরে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে সল্টলেকের যুবভারতী স্টেডিয়াম (Yuva Bharati Krirangan)। শনিবার শহরে এসেছিলেন মেসি (Lionel Messi)। তাঁকে দেখতে হাজার হাজার টাকা দিয়ে টিকিট কেটে যুবভারতীতে যান অনুরাগীরা। কিন্তু মেসিকে গ্যালারি থেকে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। শুরু হয় তুমুল অশান্তি। মেসির কলকাতা তথা ভারত সফরের প্রধান আয়োজক শতদ্রু দত্তকে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এবার মেসির অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলার ঘটনায় ছ’জনকে তলব করেছে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট। ছ’টি পৃথক সংস্থার প্রতিনিধি তাঁরা। শতদ্রু দত্তের সংস্থার কর্তারাও সমন পেয়েছেন। মাঠে মেসির সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী। সাংবাদিক, নিরাপত্তারক্ষীদের মতো তিনিও রোষে পড়েন মেসি অনুরাগীদের। সমাজ মাধ্যমে শুরু হয় তীব্র ট্রোল।

উল্লেখ্য, সল্টলেক স্টেডিয়ামে মেসির অনুষ্ঠানে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল। মাত্র ১৬ মিনিটেই মাঠ ছাড়তে হয় মেসিদের। অভিযোগ, মেসিকে গ্যালারি থেকে দেখা যায়নি। তিনি মাঠে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ঘিরে ধরেছিলেন নেতা-মন্ত্রী, সাংবাদিক, সেলেব, নিরাপত্তারক্ষী আয়োজক কর্তাব্যক্তিরা ছিলেন। মেসি মাঠ ছাড়তেই ফেটে পড়েন ভক্তরা। ক্ষিপ্ত জনতা যুবভারতীতে ভাঙচুর চালায়। চেয়ার উপড়ে ছোড়া হয় মাঠে। মাঠের ভিতর ঢুকে পড়েন হাজার হাজার মানুষ। পুলিশকে তাড়া করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছিল। শনিবারই মেসির সঙ্গে হায়দ্রাবাদে উড়ে যাচ্ছিলেন শতদ্রু। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে আয়োজক শতদ্রু দত্তকে গ্রেপ্তার করে বিধাননগর পুলিশ। রবিবার বিধাননগর মহকুমা আদালত শতদ্রুর জামিনের আর্জি খারিজ করে দিয়েছে। তাঁকে ১৪ দিনের পুলিশি হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে বিশৃঙ্খলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

উল্লেখ্য, ঘটনার তদন্তের জন্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীমকুমার রায়ের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কমিটিতে আছেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তীরা। রবিবার যুবভারতী পরিদর্শন করেছেন তাঁরা। নমুনা সংগ্রহ করেছেন। দীর্ঘক্ষণ স্টেডিয়ামের ভিতরে বৈঠক করেছে তদন্ত কমিটি। সোমবার রাতে নবান্নের কাছে জমা পড়েছে তদন্ত কমিটির প্রাথমিক রিপোর্ট। গোটা ঘটনায় সিট গঠন করে তদন্তের সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি অসীমকুমার রায়। আজই যুবভারতীকাণ্ডে রাজ্য পুলিশের সর্বোচ্চ কর্তা, ডিজি রাজীব কুমারকে শো-কজ করলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। বিধাননগর পুলিশের কমিশনার মুকেশ কুমারকেও শো কজ করা হয়েছে। শনিবার মেসির অনুষ্ঠানে কেন বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল, তার জবাব ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দিতে হবে তাঁদের। বিধাননগর পুলিশের ডিসি অনীশ সরকারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ক্রীড়া ও যুব বিষয়ক দপ্তরের প্রধান সচিব রাজেশ কুমার সিংকেও শো কজ করা হয়েছে। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের CEO-কেও অপসারণ করা হয়েছে পদ থেকে। মুখ্যসচিব মনোজের দফতরের তরফে বিবৃতি প্রকাশ করে এই কথা জানানো হয়েছে।