বিক্ষোভের জেরে পিছু হটল মোদী সরকার! আরাবল্লীতে নিষিদ্ধ নতুন খনন
Authored By:
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২২:২৪: লাগাতার আন্দোলনের জেরে অবশেষে নতিস্বীকার করল মোদী সরকার (Modi Govt)। ভারতের প্রাচীনতম পর্বতমালা এবং উত্তর ও পশ্চিম ভারতের ‘ফুসফুস’ বলে পরিচিত আরাবল্লীকে বাঁচাতে বড়সড় সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্র। বুধবার কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হল, আরাবল্লী অঞ্চলে নতুন করে আর কোনও খননকার্যের ইজারা বা ‘লিজ’ দেওয়া যাবে না। সংশ্লিষ্ট সমস্ত রাজ্যকে এই নির্দেশ কঠোরভাবে পালনের বার্তা দিয়েছে কেন্দ্র।
কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে পরিবেশকর্মীদের বড় জয় হিসেবেই দেখা হচ্ছে। মন্ত্রকের নির্দেশিকায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, আরাবল্লীর পরিবেশগত ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতেই এই কড়া পদক্ষেপ। অবৈধ এবং অনিয়ন্ত্রিত খননকাজ রুখতে এই প্রক্রিয়ায় ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ ফরেস্ট্রি রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন (ICFRE)-কে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মূলত পরিবেশগত, ভূতাত্ত্বিক এবং ভূদৃশ্য বা ল্যান্ডস্কেপের বিচারে আরাবল্লীর কোন কোন এলাকা অতি স্পর্শকাতর, তা চিহ্নিত করবে এই সংস্থা। পাশাপাশি, সমগ্র অঞ্চলের জন্য একটি বিজ্ঞানভিত্তিক ‘খনি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা’ (MPSM) প্রস্তুত করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে তাদের।
প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিন ধরেই আরাবল্লী (Aravalli) নিয়ে উত্তাল ছিল পরিবেশমহল। অভিযোগ উঠছিল, শিল্পপতি ‘বন্ধুদের’ পকেট ভরাতেই নাকি এই প্রাচীন পর্বতমালা ধ্বংসের ‘ব্লুপ্রিন্ট’ তৈরি করেছিল সরকার। কয়লা ও নির্মাণ শিল্পের স্বার্থে আরাবল্লীর পাথর ও খনিজ ভাণ্ডারকে ব্যবহারের জন্য আইনি পথ সুগম করা হচ্ছিল বলে দাবি করেছিলেন বিরোধীরা ও পরিবেশকর্মীরা। বিতর্ক চরমে পৌঁছতেই তড়িঘড়ি ‘ড্যামেজ কন্ট্রোলে’ নামে কেন্দ্র এবং বুধবার নতুন ইজারা প্রদানে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নেয়।
ভৌগোলিক ও পরিবেশগত দিক থেকে আরাবল্লীর গুরুত্ব অপরিসীম। হরিয়ানা, রাজস্থান, গুজরাট ও দিল্লি জুড়ে বিস্তৃত এই পর্বতমালা কেবল জীববৈচিত্র্যের আধারই নয়, লুনি, চম্বল ও সবরমতীর মতো গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলির উৎসস্থলও। পরিবেশবিদদের মতে, আরাবল্লী প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে রাজস্থানের থর মরুভূমির গ্রাস থেকে দিল্লি ও সংলগ্ন অঞ্চলকে রক্ষা করে। এই পর্বতমালা কর্পোরেটদের হাতে গেলে বা খননকার্যের (Mining) ফলে ধ্বংস হলে ভয়াবহ দূষণের পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ জলের ভাণ্ডারে টান পড়বে এবং চরম জলসংকট দেখা দেবে।
উল্লেখ্য, এবার থেকে সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক নির্দেশ মেনে পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করেই সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলিকে চলমান প্রকল্পগুলি এগিয়ে নিতে হবে। এদিকে ফরেস্ট সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, আরাবল্লি এলাকায় প্রায় ১০ হাজার খনন কার্যকলাপ পর্বতমালাটিকে মারাত্মক বিপদের মুখে ফেলছে। এই পরিস্থিতিতে সেন্ট্রাল এমপাওয়ার্ড কমিটি সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ দাবি করলেও, কেন্দ্রের বক্তব্য, রাজস্থানে রিচার্ড বারফি গাইডলাইন অনুযায়ী ১০০ মিটারের বেশি উচ্চতার গঠনগুলিকেই আরাবল্লির অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়।