রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি ফাঁকি দিয়েই মোদী সরকারের আয় প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকা
সাধারণ মানুষকে আর্থিক সুবিধা না দিয়ে সরকারি কোষাগার ভরার পিছনে কী কারণ থাকতে পারে, তা বোধগম্য হচ্ছে না অনেকেরই।

রান্নার গ্যাসের (Cooking Gas) ভর্তুকি ইতিমধ্যেই উঠে যাওয়ার জোগাড়। বাদ যাননি গরিবরাও। কারণ, উজ্জ্বলা যোজনাতেও বহু গ্রাহক ভর্তুকি পাচ্ছেন না। পেলেও নামমাত্র। সৌজন্যে নরেন্দ্র মোদী সরকার। অথচ হিসেব বলছে, এই ভর্তুকি ফাঁকি দিয়েই বিগত কয়েক বছরে কেন্দ্র আয় করেছে প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকা। সাধারণ মানুষকে আর্থিক সুবিধা না দিয়ে সরকারি কোষাগার ভরার পিছনে কী কারণ থাকতে পারে, তা বোধগম্য হচ্ছে না অনেকেরই।
রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ফেলার কাজটি শুরু করেছিল ইউপিএ সরকার। ক্ষমতায় এসে মোদীও সেই ধারা বজায় রাখেন। তবে তিনি সেখানে যোগ করেন একটি নতুন মাত্রা—‘গিভ ইট আপ’। অর্থাৎ, কোনও ব্যক্তি যদি ভর্তুকি না নিতে চান, তাহলে তিনি বাজারদরে সিলিন্ডার কিনতে পারেন। তাঁদের ছেড়ে দেওয়া সেই টাকা গরিব মানুষকে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হবে বলেও ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রকল্পটি যখন শুরু হয়, তখন সাধারণ মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৪০০ টাকার উপর ভর্তুকি ঢুকত। দেশ ও দশের স্বার্থে অনেকেই মোদীর ডাকে সাড়া দিয়ে তা ছেড়ে দেন। গত আর্থিক বছরের শেষে, অর্থাৎ মার্চ পর্যন্ত এমন গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৮ লক্ষ। এঁরা সবাই যে স্বেচ্ছায় ভর্তুকি ছেড়েছেন, এমন নয়। অনেকেই মোবাইল ফোনে গ্যাস বুকিং করতে গিয়ে ভুল করে ‘গিভ ইট আপ’-এর নম্বর টিপে তা খুইয়েছেন। আবার যে পরিবারে বছরে ১০ লক্ষ টাকা রোজগার, তাঁদেরও ভর্তুকির তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে কেন্দ্র। দেশের মোট ২৮ কোটি ৯৫ লক্ষ এলপিজি গ্রাহকের নিরিখে সংখ্যাটা কম নয়।
গরিব মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা যে শুধুই কথার কথা, তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে ভুক্তভোগীরা। কারণ, উজ্জ্বলা যোজনায় কেবল গ্যাস সংযোগটি বিনামূল্যে পাওয়া যাচ্ছে। তারপর প্রায় হাজার টাকা দাম দিয়ে সিলিন্ডার কিনতে হচ্ছে গ্রাহককে। কলকাতায় এখন ভর্তুকির পরিমাণ প্রায় ১৯ টাকা। কোনও কোনও জেলায় আরও কম। মানুষকে এমন প্যাঁচে ফেলে সরকারের সুরাহা কত হল? হিসেব বলছে, ২০১৫-১৬ থেকে ২০২০-২১ অর্থবর্ষ পর্যন্ত মোদি সরকার ‘গিভ ইট আপ’ প্রকল্পে বাঁচিয়েছে ৫৭ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা। ভর্তুকি ক্রমশ কমানো হচ্ছে। তিন বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে সরকার এই বাবদ খরচ করেছিল ৩৭ হাজার ২০৯ কোটি টাকা। গত অর্থবর্ষে তা কমে ১১ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। করোনা-লকডাউন পরিস্থিতিতে বেঁচে যাওয়া ওই টাকায় কি আর একটু আর্থিক সুরাহা দেওয়া যেত না? মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলছেন।