কোভিড মোকাবিলায় বিদেশি স্বাস্থ্য সামগ্রী বণ্টনে অস্বচ্ছতা, কাঠগড়ায় মোদি সরকার
ইতালির প্লান্টগুলি বসানো হবে গ্রেটার নয়ডার আইটিবিপি’র হাসপাতালে। বাকি সরঞ্জামগুলি দেশজুড়ে ৮৬টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিলি করা হবে। এ ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীকে কাজে লাগানো হবে বলেও জানিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক।

বিতর্ক কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না মোদি সরকারের! (Modi govt) গত ক’দিনে কোভিডের মোকাবিলায় বিদেশ থেকে অক্সিজেন সহ বিস্তর স্বাস্থ্যসামগ্রী পেয়েছে ভারত। কিন্তু সেগুলির বিলি-বণ্টন ব্যবস্থা চূড়ান্ত অস্বচ্ছ বলে অভিযোগ উঠেছে। কোনও মন্ত্রকের কাছে কিংবা সরকারি ওয়েবসাইটে এ ব্যাপারে স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই বলেও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এমনকী আমেরিকার সংবাদ মাধ্যমও প্রশ্ন তুলেছে, কোভিড-যুদ্ধে ভারতের পাশে দাঁড়িয়ে স্বাস্থ্যসামগ্রী পাঠানো হচ্ছে। খুব ভালো কথা। কিন্তু সেগুলি বিভিন্ন রাজ্যে বিলি হয়েছে কি না, তার সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া যাবে না কেন? ঘরে-বাইরে এই চাপের মুখে মঙ্গলবার অবশ্য মুখ খুলেছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। তাদের তরফে বলা হয়েছে, বিদেশ থেকে আসা বিভিন্ন সরঞ্জাম রাজ্যগুলিকে পর্যায়ক্রমে দেওয়া হচ্ছে। সংক্রমণের বাড়বাড়ন্তের নিরিখে অগ্রাধিকারের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। অর্থাৎ, যে রাজ্যে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বেশি, সেই রাজ্যে স্বাস্থ্য সরঞ্জাম আগে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই দিল্লি, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গ, অসম, কেরল এবং কর্ণাটকে বিদেশি সামগ্রী বণ্টন করা হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতেও পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। তবে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে পরিবহণ পরিকাঠামোগত সমস্যার দরুন কোভিড সামগ্রী পাঠাতে দেরি হচ্ছে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে।
সূত্রের খবর, গত ৩ মে থেকে কোভিড (Covid 19) মোকাবিলায় বিদেশি সাহায্য আসতে শুরু করেছে দেশে। ব্রিটেন, মরিশাস, সিঙ্গাপুর, রাশিয়া, আমেরিকা, আয়ারল্যান্ড, রোমানিয়া, সৌদি আরব, থাইল্যান্ড, জার্মানি, উজবেকিস্তান, ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও ইতালি সহ কমবেশি ১৪টি দেশ থেকে কোভিড সরঞ্জাম এসেছে ভারতে। তথ্য বলছে, সব মিলিয়ে অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর ১ হাজার ৬৭৬টি, ভেন্টিলেটর ৯৬৫টি, অক্সিজেন সিলিন্ডার ১ হাজার ৭৯৯টি, সিলিন্ডার রেগুলেটর ১ হাজার ২৩টি, অক্সিজেন জেনারেটিং প্লান্ট ৯টি, বেডসাইড মনিটর ১৫০টি, পালস অক্সিমিটার ২১০টি, এন-৯৫ মাস্ক ৯ লক্ষ ২৮ হাজার ৮০০টি, র্যাপিড টেস্ট কিট ৮ লক্ষ ৮৪ হাজার সহ বাইপ্যাপ, করোনার ওষুধ রেমডিসিভির, ইলেকট্রিক সিরিঞ্জ পাম্প অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ফিল্টার প্রচুর পরিমাণে ভারতে পাঠিয়েছে বিভিন্ন দেশ। অথচ. সেগুলি কোভিড-বিধ্বস্ত রাজ্যগুলিকে পাঠাতে স্পষ্ট গাইড লাইন মোদি সরকার তৈরি করেনি বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠেছে।
গত শুক্রবারই স্বাস্থ্যমন্ত্রকের মুখপাত্র লব আগরওয়াল জানিয়েছিলেন, বিদেশ থেকে আসা সাস্থ্যসামগ্রী বিলি-বণ্টনে খুব শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুরো বিষয়টি দেখবে কোভিড মোকাবিলায় গঠিত টাস্ক ফোর্স। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের একটি সূত্রের খবর, প্রথামতো বিদেশি সাহায্য প্রথমে গ্রহণ করে রেড ক্রস সোসাইটি। সেগুলি তারা হস্তান্তর করে বিদেশ মন্ত্রকের হাতে। তারপর সাহায্য-সামগ্রী দেশের অভ্যন্তরে বিলির বন্দোবস্ত করে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে সেগুলি কীভাবে পাঠানো হবে, তার তদারকির দায়িত্বে রয়েছে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি। ওই কমিটির শীর্ষে রয়েছেন কেন্দ্রীয় পরিবহণ সচিব। কিন্তু অভিযোগ, কোনও মন্ত্রকের কাছে বিদেশি সাহায্য বিলি সংক্রান্ত স্পষ্ট কোনও তথ্য নেই। সরকারি ওয়েবসাইটগুলি হাতড়েও কোনও তথ্য মিলছে না। এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ভারতকে সাহায্যকারী অন্যতম দেশ আমেরিকার সংবাদমাধ্যম।
সে দেশের বিদেশ মন্ত্রকের রুটিন সাংবাদিক সম্মেলনে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, কোভিড চিকিৎসার যাবতীয় সরঞ্জাম আমরা ভারতে পাঠাচ্ছি। অথচ, দিল্লি থেকে আমাদের প্রতিনিধিরা জানাচ্ছেন, সেখানে এখনও অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর কিংবা ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। তা হলে ঠিক কতটা পরিমাণ সামগ্রী ভারতে যাচ্ছে? সেগুলি কীভাবে বিলি করা হচ্ছে, সেটাও স্পষ্টভাবে জানা যাচ্ছে না। জবাবে মার্কিন বিদেশ মন্ত্রকের সহকারী মুখপাত্র জেলিনা পোর্টার বলেছেন, ‘এটা সত্যি যে নির্দিষ্ট কোনও ওয়েবসাইট থেকে মার্কিন সাহায্য সংক্রান্ত তথ্য মিলছে না।’ মোদি সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রক এদিন অবশ্য জানিয়েছে, ফ্রান্স থেকে আসা আটটি অক্সিজেন (Oxygen) জেনারেশন প্লান্ট বসানো হয়েছে দিল্লি, হরিয়ানা এবং তেলেঙ্গানার একাধিক হাসপাতালে। ইতালির প্লান্টগুলি বসানো হবে গ্রেটার নয়ডার আইটিবিপি’র হাসপাতালে। বাকি সরঞ্জামগুলি দেশজুড়ে ৮৬টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিলি করা হবে। এ ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীকে কাজে লাগানো হবে বলেও জানিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক।