রাজ্যের ওপর আস্থা, কেন্দ্রীয় বাহিনী ফিরিয়ে দিলেন বিজেপির এক ডজন বিধায়ক

তাছাড়া দেশের কোনও রাজ্যে কোনও বিরোধী দলের সব বিধায়ককে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়া হয় না। সেক্ষেত্রে বাংলায় এই চল শুরু করলে, তা বিজেপি’র পক্ষে মোটেই ভালো বিজ্ঞাপন হবে না।

May 20, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

দলীয় বিধায়কদের সবাইকে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দিয়ে বিজেপি (BJP) গোটা দেশকে বোঝাতে চেয়েছিল যে, এ রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটেই ভালো নয়। কিন্তু বিজেপি’র কেন্দ্রীয় নেতাদের সেই দাবিতে কার্যত জল ঢেলে দিয়েছেন দলীয় বিধায়কদের অনেকেই। তাঁরা প্রত্যাখ্যান করেছেন কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা। এই সংখ্যা এক ডজনেরও বেশি। যাঁরা কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা নিচ্ছেন না, তাঁরা ঘুরিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেন, দিল্লির নেতারা যাই ভেবে থাকুন না কেন, বাংলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যথেষ্ট ভালো। তাছাড়া দেশের কোনও রাজ্যে কোনও বিরোধী দলের সব বিধায়ককে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়া হয় না। সেক্ষেত্রে বাংলায় এই চল শুরু করলে, তা বিজেপি’র পক্ষে মোটেই ভালো বিজ্ঞাপন হবে না।

সম্প্রতি দলীয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, বিজেপি’র ৭৭ জন বিধায়কের সুরক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী দেওয়া হবে। কিন্তু প্রায় এক ডজনেরও বেশি বিজেপি বিধায়ক সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন। সূত্রের দাবি, তাঁদের অনেকের যুক্তি, কেন্দ্রীয় জওয়ানদের ঘেরাটোপে থাকলে জনসংযোগে তার প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি সেই জওয়ানদের থাকার জায়গা সহ একাধিক ব্যয় বহন করতে হবে বিধায়কদেরই। সেই ক্ষমতা সবার নেই। তাই কেন্দ্রীয় নেতাদের দেওয়া অভিনব প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন একাধিক বিজেপি বিধায়ক। যার মধ্যে অন্যতম হলেন শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ, ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির শিখা চট্টোপাধ্যায়, মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির আনন্দময় বর্মন প্রমুখ।

এ প্রসঙ্গে শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বলেন, আমার কেন্দ্রীয় নিরাপত্তার প্রয়োজন নেই। কারণ আমি যে রাজনীতি করে বড় হয়েছি, সেখানে নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে ঘুরলে মানুষের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আমি স্কুটারে চেপে গোটা শহর ঘুরে বেড়াই। মানুষের সুখ-দুঃখের সঙ্গে থাকি। কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলে তা করা সম্ভব নয়। একই সুরে কথা বলেন শিখাদেবী। তাঁর কথায়, আমি যে এলাকার বিধায়ক, সেখানে বস্তিবাসীর সংখ্যা অনেক। কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে তাঁদের সুখ-দুঃখের কথা জানতে গেলে কেউ কথাই বলবে না। বিধায়ক হয়ে এলাকাবাসীর সমস্যার সমাধান করতে না পারলে কিসের জনপ্রতিনিধি, পাল্টা প্রশ্ন শিখাদেবীর। ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির এই বিধায়ক জানিয়েছেন, তাঁর কেন্দ্রীয় বাহিনীর যে দরকার নেই, তা তিনি দলকে লিখিতভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। একই বক্তব্য শোনা যায় মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক আনন্দময় বর্মনের গলায়। তাঁর কথায়, এই এলাকায় বিজেপি’র বিপুল জনসমর্থন রয়েছে। এলাকার মানুষই আমার সিকিউরিটি। কারণ তাঁদের আশীর্বাদ, শুভেচ্ছায় আমি জনপ্রতিনিধি হয়েছি। তাই বাড়তি নিরাপত্তা রক্ষীর কোনও প্রয়োজন নেই। উল্লেখ্য, বিজেপি’র ৭৭ জন বিধায়কের মধ্যে ১৩ জনকে ভোটের আগেই কেন্দ্রীয় নিরাপত্তারক্ষী দেওয়া হয়েছিল। বাকি ৬৪ জনকেও একই সুরক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল গেরুয়া পার্টি। কিন্তু বিধায়কদের একাংশ এভাবে নিরাপত্তারক্ষী ফিরিয়ে দেবে, তা আঁচ করতে পারেননি দিল্লির নেতারা। প্রত্যাখ্যানের এই মানসিকতা তাঁদের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে। দলের এক নেতা বলেন, ভারতের কোনও রাজ্যেই এমন দৃষ্টান্ত নেই। পশ্চিমবঙ্গে এই চল শুরু হলে তা আখেরে বিজেপি’র বিরুদ্ধেই যাবে।

বাংলায় (West Bengal) আইনশৃঙ্খলার অবনতির চিত্র তুলে ধরতেই সব বিধায়ককে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু সেই পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিয়েছেন দলীয় বিধায়কদের একাংশ। তাঁদের অবস্থানই স্পষ্ট করে দিয়েছে, বিজেপি’র কৌশলের সঙ্গে তাঁরা একমত নন। অর্থাৎ এ রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যতটা খারাপ বলে দাবি করা হচ্ছে, তার সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই।

যদিও বিষয়টি এভাবে দেখতে নারাজ বিধানসভায় বিজেপি’র মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা। তাঁর বক্তব্য, আমাদের দলের বহু বিধায়কের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। ফলে চার থেকে ছ’জন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানের থাকা, খাওয়ার ব্যবস্থা করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই কয়েকজন বিধায়ক কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন রাজ্যের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুও। তাঁর কথায়, একাধিক জেলার ১২ থেকে ১৪ জন বিধায়ক কেন্দ্রীয় নিরাপত্তারক্ষী নেবেন না ব. জানিয়েছেন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen