কান থেকে রক্ত! “জয় শ্রীরাম” না বলায় শিশুকে বেধড়ক মার, দিল্লির ঘটনার শিকার মায়ের মর্মান্তিক বিবরণ
Authored By:

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৫:৪৯: দিল্লিতে মালদহের শ্রমিক পরিবারের উপর বর্বরতা। অভিযোগ, “জয় শ্রীরাম” বলার জন্য চাপ সৃষ্টি করে এক মহিলাকে ও তাঁর শিশুপুত্রকে নিগ্রহ করা হয়। দিল্লিতে শিশু-নিগ্রহের ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন মালদহের চাঁচোলের বাসিন্দা সাজনু পারভিন ও তাঁর স্বামী মোক্তার খান। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরেই দিল্লিতে শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাতেন।
দিল্লিতে মালদহের চাঁচোল থেকে যাওয়া এক পরিযায়ী বাঙালি পরিবারের উপর ঘটে যাওয়া শিশুনিগ্রহের ঘটনায় উত্তাল রাজ্য-রাজনীতি। এ বিষয়ে ২৭ শে জুলাই বিজেপির ‘ভাষা সন্ত্রাস’ নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: দিল্লী পুলিশের নির্মম অত্যাচার বাঙালি শ্রমিক পরিবারের ওপর, তীব্র প্রতিবাদ মমতার
আজ বুধবার, কলকাতায় সাংবাদিক সম্মেলনে তৃণমূল নেতাদের উপস্থিতিতে সাজনু পারভিন নিজের অভিজ্ঞতার ভয়াবহ বিবরণ দেন। সাজনুর অভিযোগ অনুযায়ী, একদিন চারজন যুবক তাঁদের দিল্লির বাসায় গিয়ে নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে আধার কার্ড দেখতে চান। দেখানোর পরও তাঁকে বাংলাদেশি তকমা দেওয়া হয় এবং এলাকাছাড়া না হতে নির্দেশ দেওয়া হয়। পরের দিন আবার চারজন, যাদের মধ্যে দুই মহিলা ছিলেন, এসে সাজনু ও তাঁর সন্তানকে জোর করে একটি জায়গায় নিয়ে যান এবং শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।
সাজনুর কথায়, তাঁকে জোর করে “জয় শ্রীরাম” বলাতে চাওয়া হয়। তিনি রাজি না হওয়ায় তাঁকে মারধর করা হয়, পেটে লাথি মারা হয় এবং তাঁর সন্তানকে কেড়ে নেওয়া হয়। মারধরের ফলে শিশুটির কান থেকে রক্ত বেরোয়। এরপর ২৫ হাজার টাকা চাওয়া হয় মুক্তিপণ হিসেবে। স্বামীকে খবর দিলে তাঁর শাশুড়ি টাকা নিয়ে এলেও রেহাই মেলেনি।
এরপর তাঁদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে আরও একপ্রস্থ হেনস্থা চলে। সাজনুর অভিযোগ, পুলিশ তাঁদের বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা মানেই বাংলাদেশি।” তাঁদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয় এবং নানা জায়গায় জোর করে সই করিয়ে নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: শিশুনিগ্রহ কাণ্ডে দিল্লি পুলিশকে চ্যালেঞ্জ মমতার
প্রথমে দিল্লি পুলিশ অভিযোগ অস্বীকার করলেও, বুধবার নির্যাতিতাকে সামনে এনে তৃণমূল কংগ্রেস বিষয়টি নিয়ে সরব হয়। কুণাল ঘোষ জানান, এবার কলকাতায় একটি এফআইআর দায়ের করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে তাঁরা ঘরে ফিরতে পেরেছেন বলেও কৃতজ্ঞতা জানান সাজনু।
প্রসঙ্গত, ভিন রাজ্যে বাঙালিদের ওপর একের পর এক আক্রমণ, হেনস্থা ও নিপীড়নের প্রতিবাদে প্রথম থেকেই প্রতিবাদ জানিয়ে এসেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লির সাম্প্রতিক ঘটনায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে এক সুপরিকল্পিত নীতির মাধ্যমে বাংলাভাষী নাগরিকদের টার্গেট করে তাঁদের হেনস্থা ও নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
তিনি জানিয়েছিলেন, “আসাম, গুজরাত, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা এবং দিল্লির মতো রাজ্যে বাঙালিদের পরিচয়, ভাষা ও ধর্মের ভিত্তিতে সংগঠিতভাবে নির্যাতন চালানো হচ্ছে। এই নীতিগত নিপীড়ন আজ আন্তর্জাতিক মহলেও নজরে এসেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট আমাদের বক্তব্যকেই সমর্থন করছে।”
তিনি আরও বলেছিলেন, “বাংলাভাষীদের ওপর বিজেপি পরিচালিত প্রশাসনের নিরন্তর চাপ ও হুমকি আসলে এক ভাষাগত জাতিগত রাজনীতিরই প্রতিফলন, যা গণতন্ত্রের মৌলিক চেতনার পরিপন্থী।”
বিভিন্ন রাজ্যে বাংলার শ্রমিকদের বিরুদ্ধে পরিচয় যাচাইয়ের নামে, কিংবা ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ সন্দেহে প্রশাসনিক হেনস্থা নতুন কিছু নয়। কিন্তু দিল্লির সাম্প্রতিক ঘটনায় রাজনৈতিক মহলের মত, বিজেপি শাসিত রাজ্যে আজ এক শিশুও নিরাপদ নয়। বর্বরতার হাত থেকে বাংলার একটি শিশুকেও তাই ছাড় দেওয়া হয়নি।