ইউক্রেনে আটকে পড়া ভারতীয় পড়ুয়াদের সাহায্যে এগিয়ে এসে নজির গড়লেন পাকসন্তান মোয়াজাম

সবার উপরে মানুষ সত্য, মানব সেবার অনন্য নজির স্থাপন করলেন মোয়াজাম খান।

March 15, 2022 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi
ছবি: প্রতীকী

সবার উপরে মানুষ সত্য, মানব সেবার অনন্য নজির স্থাপন করলেন মোয়াজাম খান। যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেনে আটকে পড়া ভারতীয় পড়ুয়াদের বাড়ি পৌঁছে দিতে ত্রাতার ভূমিকায় এগিয়ে এলেন পাকসন্তান মোয়াজাম খান। ২৫০০ ভারতীয় পড়ুয়াকে ইতিমধ্যেই ভারতের পথে পৌঁছে রওনা করিয়েছেন তিনি।

ইউক্রেনে আটকে পড়া ভারতীয় পড়ুয়াদের দেশে পৌঁছে দিতে, নীতিশ সিংহ এসওএস ইন্ডিয়া তৈরি করেছেন। সম্পূর্ণ অনিশ্চিয়তার মধ্যেও তিনি এগিয়ে এসেছে, আর তার সঙ্গে এগিয়ে এসেছেন আরেকজন; ইউক্রেনে নিবাসী পাকিস্তানি মোয়াজাম খান। এক বেসরকারি সংবাদমাধ্যমকে নীতিশ জানিয়েছেন, “ঈশ্বর প্রেরিত দূতের মতো মোয়াজাম আমাদের দলে এসেছেন। সে খুবই সহযোগিতা করে। কোন কোন সময় সে বিনা পয়সায় পড়ুয়াদের রুমানিয়া, পোল্যান্ড সীমান্তে পৌঁছে দেয়, যে সব পড়ুয়াদের কাছে পয়সা নেই, তাদের থেকেও পয়সা নেয় না।”ইউক্রেনের বাস চালকেরা যেখানে ভারতীয় পড়ুয়ারা সীমান্তে পৌঁছে দিতে ২৫০ ডলার করে অর্থ দাবি করছেন, সেখানেই মোয়াজাম মাত্র ২০-২৫ ডলার অর্থ নিয়েই আটকে পড়া পড়ুয়াদের ইউক্রেন সীমান্তে পৌঁছে দিচ্ছেন। আবার কারও কারও থেকে এক টাকাও নিচ্ছেন না।

প্রায় ২৫০০ ভারতীয় পড়ুয়াকে ইউক্রেনের বিভিন্ন জায়গা থেকে তিনি সীমান্তে পৌঁছে দিয়েছেন। মোয়াজামের দাদা এক ইউক্রেনের নাগরিককে বিয়ে করায় ১১ বছর আগে ইউক্রেনে এসেছিলেন। সেই থেকে সে ইউক্রেনে। ইউক্রেনে এসেই সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছে সে, বাস ট্যুর আয়োজন করার একটি ব্যবসাও সে শুরু করেছে। তাঁর কথায়, প্রথম থেকেই প্রচুর ভারতীয় বন্ধু রয়েছে তাঁর। তাঁর অনেক সহপাঠীই ভারতে ফিরে গিয়েছেন। এখনও তাদের সঙ্গে মোয়াজামের বন্ধুত্ব রয়েছে। ভাষা এক হওয়াকেই বন্ধুত্বের বুনিয়াদ বলেন তিনি। তাই বন্ধুদের দেশের পড়ুয়াদের উদ্ধার করতে এগিয়ে এলেন।

তিনি এক বেসরকারি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, যখন প্রথম কিছু পড়ুয়াকে উদ্ধার করলেন, তখনও তিনি জানতেন না সমস্যা এতটা মারাত্মক। তার পরেই তাঁর মোবাইল নম্বর ভাইরাল হয়ে যায়। তারপর থেকে তাঁর কাছে সাহায্যের জন্য ফোন আসতে শুরু করে, আজও আসছে। তিনি প্রায় ২৫০০ পড়ুয়াকে সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছেন। ইউক্রেনে ভাষা একটা বড় সমস্যা, মোয়াজাম উর্দুতে কথা বলেন এবং ভারতীয় পড়ুয়ারা হিন্দিতে, ফলত যোগাযোগ সহজবোধ্য হয়েছে।

ইউক্রেন থেকে হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া পাঁচ ঘন্টার দূরত্বে অবস্থিত, রোমানিয়ার দূরত্ব তিন ঘন্টার, পোল্যান্ড আড়াই ঘন্টার দূরত্ব অবস্থিত। মোয়াজাম জানিয়েছেন, তিনি কতবার ভারতীয় পড়ুয়াদের তাঁর বাসে করে সীমান্তে পৌঁছে দিয়েছেন, তা ভুলে গিয়েছেন। কীভাবে পড়ুয়াদের উদ্ধার করবেন সেই চিন্তাই করেছেন মোয়াজাম, গোনার সময়টুকু তাঁর ছিল না। বাস না থাকলে প্রাইভেট ট্যাক্সি ও গাড়ির ব্যবস্থা করেছেন। ছাত্রছাত্রীদের জীবনের সুরক্ষাই ছিল তাঁর অগ্রাধিকার। পড়ুয়াদের কাছে টাকা না থাকলে, তিনি তাদের থেকে টাকা নিতেন না। মোয়াজাম জানিয়েছেন, তাঁর সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হল পড়ুয়াদের বাবা মায়েদের আশীর্বাদ। তারা নিয়মিত ফোন করে, হোয়াটস্যাপ করে মোয়াজামকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন।

চরম সংকটের সময়ের এক একটি স্মৃতি ভাগ করে নিয়েছেন, মোয়াজাম। আটকে পড়া এক পড়ুয়া, কিভ থেকে গভীর রাতে তাকে ফোন করেন। সে হাইপোথারমিয়ায় ভুগছিল, রেড ক্রসের সাহায্য নিয়ে ঔষধের ব্যবস্থা করে তাকে সীমান্ত অবধি পৌঁছে দেন মোয়াজাম।

মোয়াজাম ভালবাসার অনন্য নজির স্থাপন করে, দুই দেশের বুনিয়াদ মজবুত করতে চাইছেন। তাঁর নিজের কথায়, “মানুষ সব সময় মানুষের স্পর্শ চায়, ওটাই আমাদের ভালবাসা দেয়, আত্মিক টান তৈরি করে। ইউক্রেন ছেড়ে যে পড়ুয়ারা চলে যাচ্ছেন আমি তাদের সব সময় আলিঙ্গন করি। আপনারাও সকলে এটা করুন, বিশেষ করে যুদ্ধের মতো পরিস্থিতিতে যারা রয়েছেন তাদের মুক্তির স্বাদ দিতে জড়িয়ে ধরুন।”

২৫০০ পড়ুয়াকে বাড়ি পৌঁছে দিলেও মোয়াজাম নিজে ইউক্রেন ছাড়তে চান না কারণ, তার ভাইসহ তাদের পরিবারের অনেকেই এখনও আটকে আছেন। সেই সঙ্গে প্রায় ৭০০ পাড়ুয়াও আটকে আছেন। সকলকে উদ্ধার না করে তিনি বিশ্রাম করবেন না।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen