SIR-র আড়ালে কোন চক্রান্ত BJP-র? বিরোধীদের পর ক্ষুব্ধ NDA শরিকেরাও
স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন নিয়ে মোদী সরকারকে রীতি মতো চেপে ধরেছে তৃণমূল সহ বিরোধীরা।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ০৯:৩০: স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন নিয়ে মোদী সরকারকে রীতি মতো চেপে ধরেছে তৃণমূল সহ বিরোধীরা। উল্লেখ্য, স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন হল ভোটার তালিকা সংশোধনীর বিশেষ প্রক্রিয়া। যা নিয়ন্ত্রিত হয় নির্বাচন কমিশনের দ্বারা। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, এমন সংশোধনীর আড়ালে শাসকের ইন্ধন ও স্বার্থ আছে। প্রকৃত ভোটারদের বাদ দিয়ে ‘বহিরাগত’ ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে আক্রমণ করেছে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেসের মতো দেশের প্রথম সারির দলগুলো। দেশজুড়ে এর বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে। এবার খোদ এনডিএ শরিকরা সেই বিদ্রোহে সামিল হচ্ছে।
বিহারের জোট শরিকরা সাফ বলছেন, এই স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন জেরে রাজনৈতিক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মোদীর শরিক দল রাষ্ট্রীয় লোক মোর্চার কর্ণধার উপেন্দ্র কুশওয়ার হুঁশিয়ারি, “এক মাসের মধ্যে সার্বিক ভোটার তালিকা রিভিউয়ের কর্মসূচি বাস্তবসম্মত নয়। একজনও প্রকৃত ভোটার যাতে চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় বাদ না পড়ে, সেটা নির্বাচন কমিশনকেই নিশ্চিত করতে হবে।” সাফ জানিয়েছেন, একজন প্রকৃত ভোটদাতাও বাদ পড়লে তাঁরা বরদাস্ত করব না। তাঁর মতে, “স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশনের নামে বিহার ভোটের ঠিক আগে, এত কম সময়ে এই কর্মসূচি সম্ভব নয়। কমিশন যদি এমন করবে বলে ঠিকই করেছিল, তাহলে কেন দু’বছর আগে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি? কমিশন তো মুখেই বলছে যে, ২০০৩ সালের ভোটার তালিকাকেই নাকি তারা মানদণ্ড ধরবে। এভাবে শেষ মুহূর্তে রাজনৈতিক দলগুলিকে কেন এই কাজে ব্যস্ত করিয়ে দেওয়া হচ্ছে?”
বিহারের বিপুল সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিক, কর্মী আছেন। তাঁদের আশঙ্কা, তাঁদের নাম বাদ পড়ে যেতে পারে। যাঁরা বাইরে আছে, তাঁদের পক্ষে কীভাবে এখন এসে প্রশাসনিক দপ্তরে নথিপত্র জমা দেওয়া সম্ভব? নির্বাচন কমিশনের এই ইন্টেনসিভ রিভিশনের ঘোষণায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দানা বাঁধছে। বিরোধীদের প্রশ্ন, কমিশনের মাধ্যমে কি এনআরসির মঞ্চ প্রস্তুত করছে কেন্দ্র?
ভোটার তালিকা ইস্যুতে আদালতে প্রতিদিনই চাপ বাড়ছে মোদী সরকারের উপর। শনিবারই সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেছে অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস। তাদের দাবি, নির্বাচন কমিশন যে প্রক্রিয়ায় বৈধ নাগরিকদের থেকে নথিপত্র দাবি করছে, এই বিশেষ রিভিশন ব্যবস্থায় তা অসাংবিধানিক। অবিলম্বে স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন স্থগিত করার আবেদন করছেন তারা। সংবিধানের ১৪, ১৯, ২১, ৩২৫ এবং ৩২৬ ধারায় জনপ্রতিনিধিত্ব আইন এবং রেজিস্ট্রেশন অব ইলেক্টরস রুলসের ২১এ বিধিকে ভঙ্গ করছে স্পেশাল রিভিশন প্রক্রিয়া। রিট পিটিশনে বলা হয়েছে, স্বল্প সময়ের মধ্যে এই রিভিউ প্রক্রিয়া করা হচ্ছে এবং পদ্ধতিগত যে রীতি গ্রহণ করা হয়েছে, তাতে লক্ষ লক্ষ প্রকৃত ভোটারের নাম খসড়া ও চূড়ান্ত ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাবেই। এডিআর জানিয়েছে, জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ২১(৩) অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন এই রিভিশন করতে পারে। কিন্তু কেন করা হচ্ছে, তার কারণ জানাতে হবে। বিহারে রিভিশনের প্রয়োজনীয়তা ও কারণ এখনও পর্যন্ত অস্পষ্ট।
অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বিহারে বিধানসভা নির্বাচন। বহু দলের নির্দিষ্ট ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে পূর্ব ভারতের এই রাজ্যে। অনগ্রসর ও মুসলমান ভোট পায় অবিজেপি দলগুলো। ভোটের অঙ্ক কষতে নীতীশ কুমারের সংযুক্ত জনতা দল ছাড়াও আরও অনেককে জোটে টেনেছে বিজেপি। জিতনরাম মাঝির হিন্দুস্তান আওয়াম মোর্চা, চিরাগ পাসোয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি (রামবিলাস), উপেন্দ্র কুশওয়ার রাষ্ট্রীয় লোক মোর্চার মতো দলকেও এনডিএ-তে সামিল করা হয়েছে। তারাই এখন আতঙ্কিত।