ভাই-বোনের জন্য লড়ছে এক অন্য দুর্গা

এ এক অন্য অপু-দুর্গার গল্প। এখানে দুর্গার ভাইয়ের সঙ্গে এক বোনও আছে। তবে সর্বজয়া নেই। একটু স্নেহের ছোঁয়ায় বাঁচার জন্য ওরা আঁকড়ে ধরেছিল বাবাকে। বাবার মৃত্যু মাতৃহীন তিনজনের শৈশবও কেড়ে নেয়। হাতে পেন, পেনসিলের স্বপ্ন ঘোলাটে হয়ে যায় ভাতের চিন্তায়। কেউ ছোটে ঘরের ছোট উনুনটি জ্বালানোর জন্য খড়ির খোঁজে, কেউ একমুঠো চাল জোগাড় করতে।

May 5, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

এ এক অন্য অপু-দুর্গার গল্প। এখানে দুর্গার ভাইয়ের সঙ্গে এক বোনও আছে। তবে সর্বজয়া নেই। একটু স্নেহের ছোঁয়ায় বাঁচার জন্য ওরা আঁকড়ে ধরেছিল বাবাকে। বাবার মৃত্যু মাতৃহীন তিনজনের শৈশবও কেড়ে নেয়। হাতে পেন, পেনসিলের স্বপ্ন ঘোলাটে হয়ে যায় ভাতের চিন্তায়।  কেউ ছোটে ঘরের ছোট উনুনটি জ্বালানোর জন্য খড়ির খোঁজে, কেউ একমুঠো চাল জোগাড় করতে। 

গত দুবছর ধরে এভাবেই লড়াই করে চলেছে বছর তেরোর নিকিতা, তার নয় বছরের বোন নেহা ও সাত বছরের ভাই বিশ্ব। শুধু খাওয়া জুটলেই তো চলবে না, ত্রয়োদশী লড়াকু কন্যার পরনের কাপড়ও তো চাই। সেটা জোগান এই শহরের সহৃদয় মায়েরা, যাঁরা মুঠো মুঠো চাল দেন তাঁরাই।

একসময় আর পাঁচটা পরিবারের মতোই হাসিখুশি দিন কাটত তেলিপাড়ার দাস পরিবারের। একচিলতে ভাড়াঘরে স্বপ্নের জাল বোনা হত ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে। মা হঠাৎ বাবাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার পর মায়ে ভালোবাসার পরশটা ওরা হারিয়ে ফেলে। সেই ঝড় সামলাতে বাবাই তখন ওদের একমাত্র অবলম্বন। নিকিতারা ভাবতেও পারেনি ওদের জন্য আরও ঝড় অপেক্ষা করছে। 

ভাই-বোনের জন্য লড়ছে এক অন্য দুর্গা

বাবা নারায়ণ দাস ঘোগোমালি মাছ বাজারে কাজ করতেন। হঠাত্ মারা যান। বাবার কাছে কখনও মাথা না নোয়ানোর পাঠ শিখেছিল নিকিতা। সে ছুটে যায় ঘোগোমালি বাজারে। বাবার মতো সেও বাজারে কাজ করতে চায়। ব্যবসায়ীদের কাকুতিমিনতি করে। ব্যবসায়ীদের রাজি করিয়ে কিছুদিন কাজও করে। কিন্তু তার কম বয়স কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ওদের চলার রাস্তা আরও কঠিন হয়ে ওঠে। এই লকডাউনের দিনগুলিতে তিন ভাইবোনের এখন ভরসা এই শহরের সহৃদয় মানুষ।

মানুষের ভরসায় পথ চলতে গেলে কিছু পরিকল্পনা করতে হয়। ওরাও করেছে। ওরা কাজ ভাগ করে নিয়েছে। দিদি ও ভাইয়ের কাজ হল খাওয়া ও ঘরভাড়ার টাকা জোগাড় করা। আর বোনের কাজ হল রান্নার জ্বালানি জোগাড় করা। ওরা জানে, এই লড়াইয়ে হারলেই বিপদ। হাসিমুখে সব কাজ করতে হয়।  ইচ্ছে থাকলেও ভাগ্য যে পড়াশোনার রাস্তাটা খুলে দিল না, সেকথাই যেন নিকিতার হাসিমুখে  ফুটে উঠছিল। ছোট বয়সে অনেকটা পৃথিবী দেখে নেওয়া নিকিতা বলছিল, বোন, ভাই আমার সব। ওদের বড় করতে পারলেই আমি খুশি। বাবা বলেছিল কোথাও মাথা না নোয়াতে, সে চেষ্টাই করে চলেছি।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen